ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্নের শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৬ মে ২০১৫

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্নের শুরু আজ

মিথুন আশরাফ ॥ প্রায় ১৫ বছর হয়ে গেছে টেস্ট ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশ। ২০০০ সালের নবেম্বর থেকে টেস্ট খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে কখনই এমন আনন্দময় দিন পায়নি বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে এখন টেস্ট সিরিজেও হারানোর স্বপ্ন দেখছে! সেই স্বপ্নের শুরু আজই হচ্ছে। সকাল ১০টায় যখন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নামবে বাংলাদেশ, তখন থেকেই স্বপ্ন জয়ের পালাও শুরু হয়ে যাবে। একটা সময় এমনটি তো কল্পনাই করা যেত না! পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা মানেই হচ্ছে অবধারিত হার। অথচ সেই দলের বিপক্ষেই কিনা বাংলাদেশ প্রথম টেস্টে দাপটে খেলে ড্র করেছে। তামিম-ইমরুলের দ্বিতীয় ইনিংসে বিশ্বরেকর্ড গড়া ৩১২ রানের জুটিতে খুলনা টেস্ট ড্র করে ফেলেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান তাকিয়ে দেখল, সেই দিন আর বাংলাদেশের নেই; খেলবে আর হারবে। এখন খেলবে আর জিতবে নয়ত ড্র করবে; সেই দিন এসে পড়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে এখন ‘দিন বদলে’র গানই শোনা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪৪টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটিসহ ৪৫টি টেস্ট সিরিজ খেলছে। চলমান টেস্ট সিরিজ বাদ দিয়ে তিনটি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। গতবছর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জিতেছে। কিন্তু কোনবারই এত বেশি আনন্দ মিলেনি। যতটা এবার মিলছে। যদি বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্ট জিতে যায়, তাহলে আনন্দের সীমা থাকবে না। উৎসব যে চলছে, তা চলতেই থাকবে। বাংলাদেশ যখন ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটি জিতেছে, তখন জিম্বাবুইয়ের পড়ন্ত সময়। বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হারের পরতো জিম্বাবুইয়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬ বছরের মতো সময় টেস্ট ক্রিকেটই খেলেনি। ২০০৯ সালে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ, সেই দলটি যে ‘দুর্বল’ ছিল, তা সবারই জানা। সিনিয়র ক্রিকেটাররা বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় আনকোরা ক্রিকেটাররা খেলেছেন। তাতে বাংলাদেশ বাজিমাত করেছে। তবে গতবছর যে জিম্বাবুইয়েকে তিন টেস্টেই হারিয়ে ‘বাংলাওয়াশ’ করেছে বাংলাদেশ, সেটি সত্যিই নিজেদের চেনানোর মতো খেলাই খেলেছেন মুশফিক, তামিম, সাকিবরা। কিন্তু এরপরও তো দলটি জিম্বাবুইয়ে। আনন্দ হয়েছে প্রতিটি সিরিজ জয়েই। সেই আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়েও পড়েছে। কিন্তু এবার যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই জিতছে কিংবা হারছে না, তখন সেই আনন্দ আরও দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে পরপর তিন ওয়ানডেতে হারিয়ে ‘বাংলাওয়াশ’ করা গেছে। তখনও সমালোচকরা একটু বলার চেষ্টা করেছেন, ‘পাকিস্তান দলটিতো দুর্বল। তরুণদের নিয়ে গড়া দল। যেখানে সিনিয়ররা নেই।’ এখন তাহলে কী করতে হবে? বাংলাদেশকে প্রমাণ করতে হবে নিজেদের যোগ্যতা বলেই পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এরপর কী হলো? একমাত্র টি২০ ম্যাচও জিতে নিল বাংলাদেশ। ‘আফ্রিদি ফ্যাক্টর’ বলে ঝড় উঠল। কিন্তু সেই ফ্যাক্টর উড়ে গেল। বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল তারা কতটা উন্নতি করছে। প্রথম টেস্ট যখন শুরু হয়নি, এর আগে আবার বলাবলি শুরু, ‘এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে নেতিয়ে দেবে বাংলাদেশ।’ কেন? সমালোচকরা এবার বলতে চেয়েছেন, ‘পাকিস্তান দলে যে এবার সিনিয়র ক্রিকেটটা খেলছেন। মিসবাহ, ইউনুস, হাফিজদের মতো ব্যাটসম্যানরাই ম্যাচ বের করে নেবে।’ তা হাফিজ, মিসবাহরা খেললেন। ম্যাচও যেন বের করে নিচ্ছিলেন। প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানে এগিয়েও যায় পাকিস্তান। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর টি২০তেও হারে পাকিস্তান। এবার প্রথমবারের মতো যেন পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের মুখে হাসি ফুটে। কিন্তু সেই হাসিও বেশিক্ষণ থাকেনি। যেখানে বাংলাদেশ নেতিয়ে যাবে ধারণা, সেখানে উল্টোটা পাকিস্তানের বেলায়ও হয়েছে। তামিম-ইমরুল এমন খেলাই দেখালেন, তামিম শেষপর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২০৬ ও ইমরুল ক্যারিয়ার সেরা ১৫০ রান করলেন। দুইজনের জুটি আবার ৩১২ রান পর্যন্ত টিকল। সেখানে পাকিস্তানে একেবারে হাল ছেড়ে দিল। ততক্ষণে যে বাংলাদেশ ম্যাচ ড্র করার মতো পুঁজি গড়ে নিয়েছে। পঞ্চম দিনেও দাপট দেখিয়েই চলল বাংলাদেশ। শেষে সাকিব ৭৬ রানও করলেন। তাতে দিন শেষ হওয়ার আগেই দুই দলের সমঝোতায় ম্যাচটি শেষ হলো। এবং প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ড্র করল। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে নামার আগে ফল হচ্ছে, ০-০। একটা সময় শুধুই বাংলাদেশের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে চলেছে পাকিস্তান। এবার যেন পুরো চিত্রই পাল্টে গেছে। ১৬ বছর পর বাংলাদেশ শুধু ওয়ানডেই জিতল না, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজও জিতল; হোয়াইটওয়াশও করল। কোনদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ ম্যাচ জিতেনি বাংলাদেশ। এবার সেই অধরা জয়ও ধরা দিল। এমনকি টেস্টেও পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে ৮বার হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও হেরেছে। আর ৪টি টেস্টেই হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। এবার পাকিস্তান টেস্টে নেমেও বাংলাদেশকে হারাতে পারেনি। আজ দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হচ্ছে। এ টেস্টে যে দল জিতবে, সেই দলই টেস্ট সিরিজ জিতে নেবে। জয়টি বাংলাদেশেরই হোক, সেটিই সবার আশা। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ওয়ানডে সিরিজ এবং টি২০ জিতে প্রথম টেস্ট ড্র করার পর দ্বিতীয় টেস্ট জেতার স্বপ্নই দেখছেন। তাহলে যে দেশের ইতিহাসে সেরা সাফল্যই তার কাছে ধরা দেবে। মুশফিক তাই বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত যেভাবে ফলাফল করেছে দল। আমার মনে হয়না এর আগে এরকম করেছে। আমার মনে হয় না, ওদের তিন ফরমেটে তিন রকম দল ছিল। আমাদের জন্য এটা কম চ্যালেঞ্জের ছিল না। আমাদের সবার প্রত্যাশা ছিল বিশ্বকাপে আমরা যেমন ভাল পারফর্মেন্স করেছি সেটা ধরে রাখার। টেস্ট সিরিজে সবার প্রত্যাশা ছিল। আশা করব ৫টি দিন (দ্বিতীয় টেস্টে) সেরা ক্রিকেট খেলে ভাল ফলাফল যেন করতে পারি। শেষ৩ মাস ভাল খেলার কারণে সবাই আত্মবিশ্বাসী। পাকিস্তান খুব ভয়ঙ্কর দল। দু’দলের মধ্যে এক দলের জেতার সুযোগ সব সময়ই থাকে। এটা ফিফটি-ফিফটি ম্যাচ হবে। তবে আমরা আশা করব এ সফরে ওরা (পাকিস্তান) যেমন জয়হীন আছে তেমনই যেন থাকে। মুশফিক দলের স্বপ্নের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। যে স্বপ্ন এখন দেখছে পুরো দেশ, দেশের মানুষ। সেই স্বপ্নের শুরু হচ্ছে আজ।
×