ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিঋণ বিতরণ হ্রাস

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ৭ মে ২০১৫

কৃষিঋণ বিতরণ হ্রাস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে। আলোচ্য সময়ে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় আড়াই শতাংশ কম। বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর তুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে পিছিয়ে রয়েছে। জানা গেছে, অগ্রাধিকার খাত হিসেবে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও কৃষিতে ঋণ বিতরণ না বেড়ে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অন্য খাতের তুলনায় কৃষিঋণ সুদহার কম হওয়ায় ব্যাংকগুলো অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে সম্প্রতি কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণে বর্তমানে নির্ধারিত হারের তুলনায় ২ শতাংশ সুদ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১ জানুয়ারি থেকে কৃষকরা সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ সুদে কৃষিঋণ নিতে পারছেন। আগে যেখানে সুদ গুনতে হতো ১৩ শতাংশ। এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আমানত ও ঋণের সুদ হারের নি¤œমুখী প্রবণতা বিবেচনায় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে কৃষি ও পল্লীঋণের সুদ হারের উর্ধসীমা ১৩ শতাংশের পরিবর্তে ১১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এদিকে ঋণ নিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি এবং মামলার ভয়ে কৃষকরা ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়ছেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও গত ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিঋণ গ্রাহকদের নামে ব্যাংকের দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া এসব কৃষককে নতুন ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে ১১ হাজার ১৬৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। আগের বছরের একই সময়ে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ হিসেবে নয় মাসে ঋণ বিতরণ কমেছে ২৭৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা দুই দশমিক ৪৪ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত বিতরণ হওয়া ঋণ চলতি অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭১ দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বিতরণের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। মূলত সরকারী ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কমার ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পুরো অর্থবছরের নয় হাজার ২৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নয় মাসে ছয় হাজার ৬২৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আট হাজার ৯৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ করেছিল সাত হাজার ২৭৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর জন্য এবারে ছয় হাজার ৩১০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আট মাসে তাদের বিতরণ হয়েছে চার হাজার ৫৩৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে পাঁচ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ করেছিল চার হাজার ১৬৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। কৃষিঋণ কমার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক জনকণ্ঠকে বলেন, চলমান হরতাল-অবরোধের কারণে ঋণ চাহিদা কিছুটা কমেছে।
×