ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দাবদাহে পুড়ছে দেশ ॥ জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৭ মে ২০১৫

দাবদাহে পুড়ছে দেশ ॥ জনজীবন বিপর্যস্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাপদাহে পুড়ছে সারাদেশ। বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। এ মাসে তীব্র তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস রয়েছে। তখন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। ইতোমধ্যে নতুন নতুন এলাকায় বিস্তারলাভ করছে তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। খাঁ খাঁ করছে দেশের মাঠপ্রান্তর। খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয় ফের পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। ঘরে বাইরে সবখানেই বিরাজ করছে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাজধানীর আইসিডিডিআরবিতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৭শ’ নতুন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। এমন অবস্থায় হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে আগামী তিন থেকে চারদিনের মধ্যে দেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদ শাহ আলম জানান, আগামী তিন থেকে চারদিনের মধ্যে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে দেশে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাব থাকায় মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। অনুভূত হচ্ছে প্রচ- গরম। নিয়মিত বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়া পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মে মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি/ তীব্র কালবৈশাখী/বজ্রঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪ দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী/ বজ্রঝড় হতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২ থেকে ৩টি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২ থেকে ৩টি মৃদু/মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৩৭.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ২১.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। আর ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩৫.১ ও ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মে মাসের অধিকাংশ সময় দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। দেশে গত চারদিন ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মঙ্গলবারের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। দুর্বিষহ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে দেশবাসী। বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। দেশের কিছু জায়গায় সীমিত বৃষ্টিপাত হলেও তা মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে খরতাপে শুকিয়ে যাচ্ছে। গত মাসে বেশ কিছুদিন বৃষ্টিপাত থাকায় ওই সব জায়গায় পানি দেখা গিয়েছিল। বোরো ধান কাটার সুবিধে হলেও বৃষ্টিবিহীন আবহাওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশিসহ নানা মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি মাসজুড়ে দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। বায়ুম-লে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী লঘুচাপের সংযোগ না ঘটায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বায়ুম-লে ক্রমেই অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া বিন্যাসে সাধিত হচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন। আবহাওয়া বিন্যাসের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে পশ্চিমা বায়ু উপরের দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং উপরের অংশে অবস্থান করছে। পশ্চিমা বায়ুর অবস্থান উত্তর দিকে হিমালয় বরাবর। এ বছর গ্রীষ্মকালে তুলনামূলকভাবে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। জলবভাগ ও স্থলভাগের তাপমাত্রার বড় ধরনের পার্থক্যের কারণে বর্ষাকাল সৃষ্টি হয়। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর দু’স্থানের তাপমাত্রার ব্যবধান অনেকটা বেশি থাকবে। আবহাওয়ার দীর্ঘকালীন পূর্বাভাসে চলতি মাসে দুটি নিম্নচাপের কথা বলা হয়েছিল। যা এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। নিম্নচাপ হলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারত এবং দাবদাহের মাত্রা হ্রাস পেত। এমনটি মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদরা আরও বলছেন, দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনেক উপরে উঠে গেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সব আবহাওয়া স্টেশনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়ে আসছে। মাঝে মাঝে আকাশে মেঘ জমলেও বৃষ্টি হয় না। কিছু সময়ের জন্য বাতাসের বেগ বেড়ে গিয়ে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ে। এতে ভূপৃষ্ঠের শুষ্ক অবস্থা আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। বেড়ে যায় ভ্যাপসা গরমের মাত্রা।
×