ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নো আর ক্যাচ মিসেই ডুবছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৭ মে ২০১৫

নো আর ক্যাচ মিসেই ডুবছে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ শুরুতেই বাংলাদেশ যেন মিরপুর টেস্টে ব্যাকফুটে চলে গেল। ব্যাটিং উইকেটে টস জিতে মুশফিকুর রহীম নিলেন ফিল্ডিং। আর দিনের প্রথম বলেই ইনজুরিতে পড়ে গেলেন পেসার শাহাদাত হোসেন রাজীব। এর সঙ্গে যখন একের পর এক নো বলে আউট হওয়া থেকে বাঁচেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা আর ক্যাচ মিস হতে থাকে, তখন কী আর দিনটি নিজেদের করে নেয়া যায়। নো আর ক্যাচ মিসেই পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ডুবছে বাংলাদেশ। দুটি নিশ্চিত আউট হলো। কিন্তু দুটিই ‘নতুন জীবন’ মিলল। কিভাবে? দুটি আউটেই ‘নো’ হলো। একবার শহীদের বলে আজহার আলী ১৮ রানে থাকার সময় বাঁচলেন। আরেকবার ইউনুস খান ৭৮ রানে থাকার সময় সৌম্যের বলে আউট হয়েও ‘নো’ বল হওয়াতে বেঁচে গেলেন। দুইজনই বাঁচলেন বোলারের পা পপিং ক্রিজ অতিক্রম করায়। দুইজনই শেষ পর্যন্ত শতকও করলেন। এ দুইজনের শতকে প্রথমদিনে ডুবলও বাংলাদেশ। শুধু কী নো’ই হলো, একের পর এক ক্যাচ মিসও হলো। মুমিনুল হক নিজেই সিলিপ পয়েন্টে আজহারের দুটি ক্যাচ মিস করলেন। আর দিনের শেষভাগে এসে মুশফিক একটি ক্যাচ মিস করলেন। নো আর ক্যাচ মিসেই প্রথম দিনটি বাংলাদেশের হলো না। পাকিস্তানও প্রথমদিনেই ৯০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩২৩ রান করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল। যখন টস হলো আর বাংলাদেশ জিতল, খুলনা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের পর ইনজুরিতে পড়ে আর উইকেটের পেছনে দাঁড়াতে না পারা অধিনায়ক মুশফিক বলে দিলেন, ‘আশা করছি উইকেটের পেছনে (মিরপুর টেস্টে) ভাল করব।’ শুধু কী উইকেটের পেছনে ভাল করলে হবে? ব্যাটিংও ভাল করতে হবে। কী দেখা গেল? মুশফিক ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন। যখন বোঝাই গেল, উইকেট ব্যাটিংনির্ভর। শুরুতে ৩০ মিনিট ব্যাটসম্যানরা একটু কষ্ট করবেন। এরপর ব্যাটসম্যান নিজে ভুল করলে বোলাররা উইকেট পাবে না। এমন উইকেটে মুশফিক শুরুতেই যেন ভুল করে ফেললেন। যদিও প্রথমদিনেই ম্যাচের ‘মাপকাঠি’ করা ঠিক নয়। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে যে খুলনা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের মতো খেলতে পারবে না, তা বলা মুশকিল। এরপরও আপাতত যা ভুল মনে হচ্ছে তা ভুলই। ব্যাটিং নিলে হয়ত দিনটি বাংলাদেশের হতে পারত। এ ম্যাচটিতে যে বাংলাদেশ ভুগবে, খুলনা টেস্ট ড্র করায় মিরপুর টেস্টে জয়ের আশা যে করা হচ্ছে, তাতে যে ব্যাঘাত ঘটতে পারে; তা ম্যাচের প্রথম বলেই বোঝা গেছে। শাহাদাত দিনের প্রথম বল করেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। দ্বিতীয় বল করে আর মাঠেই থাকতে পারলেন না। একটা সময় মাঠে আবার এলেন। তবে মধ্যাহ্ন বিরতির পর বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিককে নিয়ে বোলিং অনুশীলন করতে গিয়ে ৩ বল করেই আবার মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। শেষে শাহাদাতকে স্ট্রেচিং দিয়ে মাঠ থেকে বের করতে হলো। শাহাদাত গেলেন, সঙ্গে যেন বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যও সঙ্গী করে গেলেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই অবশ্য পাকিস্তানের ২ উইকেট তুলে নেয়া গেছে। ৯ রানেই ৮ রান করা মোহাম্মদ হাফিজকে আউট করে দেন শহীদ। আর ৫৮ রানে গিয়ে যে তাইজুল ইসলামের বলে সামি আসলাম (১৯) আউট হন, ডিপে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন দিনের দ্বিতীয় বলেই ইনজুরিতে পড়ে মাঠ থেকে বের হয়ে আবার মাঠে ফেরা শাহাদাত। তখন মনে হচ্ছিল, শাহাদাত বুঝি পুরোপুরি ফিট হয়ে ফিরলেন। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির পরই অঘটনটি ঘটল। শাহাদাত হাঁটুর কবজিতে ব্যথা পেয়ে আর দিনটিতে মাঠে নামতেই পারলেন না। পাকিস্তানের যে দুটি উইকেট গেল, এরপর আর কোন উইকেটই পড়তে চাইছিল না। শত চেষ্টার পরও আরেকটি উইকেট তুলে নেয়া যাচ্ছিল না। এর মধ্যে শুরুতেই দুইবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়া আজহার শেষপর্যন্ত ২১১ বলে ১০০ রান করে ফেললেন। ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট শতক তুলে নিলেন। আজহার একদিকে উইকেট আগলে খেললেন। তা বল আর রানের পার্থক্য দেখেই বোঝা যাচ্ছে। দিন শেষে আজহার ২৫৮ বলে ১৩ চারে ১২৭ রান করে অপরাজিতও আছেন। আজহার উইকেট আগলে খেললেও, ইউনুস খান কিন্তু মারমুখী হয়েই খেলেছেন। সামি যখন আউট হলেন তখন মাঠে নামলেন ইউনুস খান। তখন আজহারের স্কোরবোর্ডে রান জমা ২৫। একটা সময় দেখা গেল আজহার যখন ১৩২ বলে ৫০ রান করেছেন, তখন ইউনুস তাকে ছুঁয়ে ফেলেছেন। ৬৮ বলেই ৪৮ রান করে ফেলেছেন। দুইজন মিলে সেই যে শুরু করলেন। একই তালে এগিয়ে চলতে থাকেন। আজহার শুরুতে আউট করার সুযোগ দিলেও, ইউনুস সেই সুযোগ শুরুতে একেবারেই দেননি। মধ্যাহ্ন বিরতি শেষ করলেন দুইজনই। তখন পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে লেখা ৭০/২। আজহারের স্কোরে ৩৬ ও ইউনুসের স্কোরে ১ রান জমা। সেখান থেকে যখন দ্বিতীয় সেশন শেষ হলো, তখন পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে রান জমা হয়ে গেল ১৯৬/২। আজহার ৮৫ ও ইউনুস ৭৭ রান করলেন। যখন দ্বিতীয় সেশন শেষে ইউনুস ব্যাটিং করা শুরু করলেন দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই সৌম্য আউট করে দিলেন ইউনুসকে। ইউনুস মাঠও ছাড়ছিলেন। কিন্তু এমন সময় দেখা হলো ‘নো’। তাতে ৭৮ রানের সময় ইউনুসও বেঁচে গেলেন। ‘নতুন জীবন’ পেয়ে এমন দুর্ধর্ষ ব্যাটিংই শুরু করলেন ইউনুস, আজহারের আগেই শতক করে ফেললেন। যেখানে আজহার ২০২ বলে ৯১ রান করেছেন, সেখানে ইউনুস ১৪২ বলেই ১০০ রান করেছেন। ক্যারিয়ারের ২৯তম শতক তুলে নিয়েছেন। এই শতকটি আবার ডন ব্র্যাডম্যানের করা ২৯টি শতকের পাশে ইউনুসের নামটি বসিয়ে দিয়েছে। ইউনুসের ক্যারিয়ারে এখন ২৯ শতকের সঙ্গে ২৯ অর্ধশতকও আছে। অবস্থা দেখে এমন মনে হচ্ছিল, দুইজনই দিনটি শেষ করে দেবেন। যেমনটি খুলনা টেস্টে তামিম-ইমরুল করেছিলেন। এর মধ্যে আজহারও শতক করলেন। যখন আজহারের ঝুলিতে ১২১ রান জমা হয়েছে, ইউনুস তখন ১৪৮ রান করেছেন। দুইজন মিলে তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ২৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেছেন। খেলার আর ৫ ওভারের মতো বাকি। এমন সময়ে শহীদের বলে ইউনুসের ক্যাচ মিস করলেন মুশফিক। মনে হচ্ছিল, আর কী সম্ভব উইকেট তুলে নেয়া? পরের বলেই অবশ্য ইউনুস আউট হয়ে গেলেন। সাজঘরে ফেরার আগে ১৯৫ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় করলেন ১৪৮ রান। তবে আজহার কিন্তু ঠিকই উইকেট আঁকড়ে থাকলেন। মিসবাহকে (৯*) সঙ্গে নিয়ে আজ দ্বিতীয় দিনের খেলাও শুরু করবেন। প্রথমদিনটি পাকিস্তানের হলো। খুলনা টেস্টের মতো প্রথমদিনে সমতা আসত, যদি ৫টি উইকেট তুলে নেয়া যেত। কিন্তু নো আর ক্যাচ মিসের মহড়ায় তা করতে পারল না বাংলাদেশ। আজ দ্বিতীয় দিনে ভাল কিছু দিতে পারবে কিনা বাংলাদেশ, তা বোঝা যাবে। তবে একের পর এক ‘নো’ আর ক্যাচ মিসে প্রথমদিনটিতে অন্তত ডুবল বাংলাদেশ।
×