ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আড়াই হাজার ফুট উঁচু এ রাস্তা চলতি মাসেই উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

চালু হচ্ছে পাহাড়বাসীর স্বপ্নের ॥ থানছি-আলিকদম সড়ক

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ৭ মে ২০১৫

চালু হচ্ছে পাহাড়বাসীর স্বপ্নের ॥ থানছি-আলিকদম সড়ক

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ৬ মে ১৫ ॥ যেন চীনের মহা প্রাচীর, সু-উচ্চ পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে গেছে বান্দরবানের থানছি-আলিকদম সড়ক। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু তথা পাহাড়বাসীর স্বপ্নের এই সড়কটি চলতি মাসের যে কোন দিন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমুদ্র সমতল থেকে আড়াই হাজার ফুট উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছে এই সড়ক পথ। বান্দরবানের থানছি থেকে আলিকদম হয়ে এই সড়ক প্রবেশ করেছে আরেক পর্যটন শহর কক্সবাজারে। জানা গেছে, ১৯৯১ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থানছি-আলিকদম সড়কের কাজ শুরু করে। ৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এই নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয়। ২০০৬ সালে অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর পুনরায় সড়কটির কাজ শুরু হলেও অর্থ অভাবে থমকে যায়। ২০১০ ফের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলে সড়কটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, যাতে ব্যয় হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। থানছি-আলিকদম সড়ক নির্মাণে নিয়োজিত প্রকল্প কর্মকর্তা (পিডি) লে. কর্নেল মনোয়ারুল ইসলাম জানান, এই সড়ক পাহাড়বাসীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। আরও জানা গেছে, বান্দরবানের থানছি সদর থেকে আলিকদম পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার সড়কটি বান্দরবানের পর্যটন শিল্পে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। সড়কটি ১২ ফুট চওড়া এবং উভয় পার্শ্বে ৩ ফুট করে মোট ১৮ ফুট প্রশস্ত। সড়ক নির্মাণের প্রথম পর্বে থানছি থেকে আলিকদম অংশের কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় অংশ ছাড়াই আলিকদম থেকে চকরিয়া সংযোগ সড়ক ব্যবহার করে কক্সবাজার যাওয়া যাচ্ছে। তবে আলিকদম থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারি-চাকঢালা-ঘুমধুম-উখিয়া অংশের কাজ শেষ হলে পথের দূরত্ব অনেক কমে যাবে। আলিকদম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, ৭০টি পাড়ার আদিবাসী বাসিন্দারা আগে ২৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে আলিকদম বাজারে আসলেও এখন তারা অনাসায়ে গাড়িতে করে আসতে পারবে। স্থানীয়রা জানান, থানছির জিরো পয়েন্ট থেকে ২২ কিলোমিটার পয়েন্টে ডিম পাহাড়। আড়াই হাজার ফুট উঁচু এ পাহাড় চূড়ার আকৃতি দেখতে ডিমের মতো হওয়ায় পাহাড়টিকে ডিম পাহাড় নামেই চেনে স্থানীয়রা। ডিম পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে চারপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করা যায় অনাসয়ে। এক সময় সড়ক যোগাযোগ না থাকায় বান্দরবান শহর থেকে নদী পথে থানছি যেতে যেখানে দুইদিন লেগে যেত, সেখানে এখন দুই ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় জেলার এক সময়ের দুর্গম উপজেলা হিসেবে পরিচিত থানছিতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা থানছির রেমাক্রি, তিন্দু, বড় পাথর, নাফা খুম, আন্ধার মানিক ভ্রমণ করতেন তারা এখন থানছি-আলিকদম সড়কের পাশের আকাশের বুকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজে ঘেরা সারি সারি পাহাড় দর্শন করে সরাসরি চলে যেতে পারবে কক্সবাজারে। বান্দরবানের থানছি ও আলিকদম সড়ক নির্মাণের ফলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তনের বার্তা বয়ে আনছে। সড়কটি চালু হলে দুই উপজেলাবাসীর ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, জুমে উৎপাদিত ফসল ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে স্থানীয়রা। আলিকদমের দোলাইপাড়ার জুমচাষী ম্যানরত ম্রো বলেন, জুমের উৎপাদিত ফসল এখন আমরা গাড়িতে করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে ভাল দাম পাব। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৭ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থানছি সফর করলেও এই প্রথম আলিকদম সফর করবেন তিনি।
×