ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আরও ৩০ গণকবরের সন্ধান

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৮ মে ২০১৫

থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আরও ৩০ গণকবরের সন্ধান

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ/দীপন বিশ্বাস ॥ মালয়েশিয়া সংলগ্ন থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী জঙ্গলে অভিবাসীদের বন্দীশিবির ও গণকবরের সন্ধান লাভের ঘটনায় বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। এর পাশাপাশি থাই সরকারও এ বিষয়ে ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে বন্দীশিবির আবিষ্কার ও গণকবরের সন্ধানে ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। থাইল্যান্ড পুলিশের বরাত দিয়ে ওয়ার্ল্ড স্ট্রীট জার্নাল, থাইল্যান্ডের দ্য নেশন, ফুকেট গেজেট, বিবিসি ও রয়টার্স জানিয়েছে আরও নতুন ৩০ গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব গণকবরের সন্ধান মিলেছে একটি পরিত্যক্ত বন্দীশিবিরের পার্শ্ববর্তী এলাকায়। যেটি সে দেশের হাত ইয়াই জেলার শঙ্খলায়। স্থানীয় গ্রামবাসীরা পুলিশকে জানিয়েছে, এ ৩০ গণকবর গত এক বছরের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। এসব গণকবর খোড়ার কাজ শুরু করেছে স্থানীয় পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, এসব হতভাগ্য অভিবাসীদের অধিকাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী নাগরিক। কক্সবাজারের আট উপজেলাসহ সন্নিহিত অন্য জেলার বিভিন্ন স্থানে থাইল্যান্ডে বন্দীশিবির ও গণকবরের সন্ধান লাভের খবরে সর্বত্র কান্নার রোল ও আহাজারি শুরু হয়েছে। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, রামু, উখিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার কোন না কোন ঘর থেকে শিশু কিশোর, যুবক, নারী, বৃদ্ধসহ কেউ না কেউ নিখোঁজ রয়েছে। গত কয়েক বছরে এরা স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় বাড়তি রোজগারে সচ্ছল হওয়ার লক্ষ্যে দালালদের খপ্পরে পড়ে সমুদ্রের দুর্গম পথে পাড়ি জমিয়েছে। মালয়েশিয়ায় পৌঁছার আগে এদের অধিকাংশের স্থান হয়েছে থাইল্যান্ডের একাধিক বন্দীশিবিরে। এদের মধ্যে অনাহারে অর্ধাহারে নিপীড়ন নির্যাতনে তাদের শেষ ঠিকানা হয়েছে গণকবরে। কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ এখন তাদের স্বজনদের সন্ধানে জেলা পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের শরণাপন্ন হচ্ছে। গত কয়েকদিন অর্থাৎ মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে থাই জঙ্গলে বন্দীশিবির এবং গণকবরের সন্ধান ও লাশ-কঙ্কাল উদ্ধারের খবরে কক্সবাজারের বিভিন্ন প্রশাসনের কাছ থেকে কোন তথ্য পায় কি না তার আশায় নিখোঁজদের স্বজনরা ভিড় জমায়। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মালেশিয়াগামীদের গণকবরের সন্ধান লাভ, লাশ উদ্ধারের সংবাদে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার জেলাসহ সন্নিহিত অঞ্চলগুলোতে। মালয়েশিয়ায় যাত্রা করে এ পর্যন্ত নিখোঁজদের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে শোকের মাতম। প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে দালালরা। তবে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, মানবপাচার কাজে জড়িতদের যে কোন প্রকারে আইনের আওতায় আনা হবে। নিজ ও পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের একরাশ বুকভরা আশা নিয়ে যারা দুর্গম পথে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর জন্য রওনা হয়েছিল তাদের বেশিরভাগের কোন খবর মিলছে না। এরা বেঁচে আছে না বন্দীশিবির বা জেলখানায় আছে কারও কোন হদিস মিলছে না। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, গত সাত বছরের মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত দালাল চক্র বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে দুই লক্ষাধিক নারী-পুরুষকে নানা প্রলোভনে ফেলে এমনকি ভয়ভীতি দেখিয়ে সাগর পথে চরম ঝুঁকিতে থাইল্যান্ডে পাচার করেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এবং জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী গেল বছর সমুদ্র পথে বাংলাদেশ উপকূল দিয়ে দুই লক্ষাধিক বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক পাচার হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫শ’ লাশ এবং প্রায় তিন হাজারের মতো জীবিত উদ্ধার হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হওয়ার পর কক্সবাজার পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লিস্টেড তিন শতাধিক দালালদের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। থাই জঙ্গলে বন্দীশিবির ও গণকবরের সন্ধান লাভের ঘটনায় পুরো কক্সবাজার অঞ্চলে এখন বিস্ময়কর হতাশার জন্ম দিয়েছে। কারণ দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে উখিয়া, টেকনাফ, রামুসহ জেলার অসংখ্য নারী-পুরুষ এমনকি শিশুর কোন খবর মিলছে না। কক্সবাজারের উখিয়ার ভালুকিয়াপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পাতাবাড়ী গ্রামের সোলতান আহমদের ছেলে রিদুয়ান আতিক ও একই গ্রামের মরিচ্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র জসিম উদ্দিন গত ২০ দিন ধরে নিখোঁজ। ১৮ এপ্রিল প্রতিদিনের মতো বাড়ি থেকে স্কুলে গিয়ে তারা আর ফিরে আসেনি। উভয় শিশুর পিতা উখিয়া থানায় একই গ্রামের মালেয়শিয়া মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য ঠা-া মিয়ার ছেলে তোফাইল আহমদ, জয়নাল আবেদন ও নূর হোসেনকে সন্দেহ করে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিভাবকদের দাবি ফুসলিয়ে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার লোভে মানবপাচারকারীরা তাদের শিশুদের অপহরণ করে মালেয়শিয়াগামী বোটে বিক্রি করে দিয়েছে। উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ডিগলিয়ার চাইরাকাঠি গ্রামের মৃত নজু মিয়ার ছেলে মোঃ রশিদ (৪৫) দুই মাস আগে দালালের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়া যায়। গত ছয় মাস আগে দালালের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়া যান উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের গয়ালমারা গ্রামের মির আহমদের ছেলে মোঃ ইসমাইল (১৫) ও সাত মাস আগে দালালের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়া যান উখিয়ার পশ্চিম হলদিয়ার তেহের আলীর ছেলে খোরশেদ আলম (২৫)। এরা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। উখিয়া সদরের হাজিরপাড়া গ্রামের মকবুল আহমদের ছেলে কামাল উদ্দিন (৩২) ও আমির হোসেনের ছেলে সৈয়দ আহামদ (৩০) সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে কাজ করতেন। পাচারকারী দালালেরা তাদের মালয়েশিয়ায় ভাল বেতনের লোভ দেখিয়ে সমুদ্র পথে পাচার করে দেয়। এখনও তাদের কোন হদিস নেই। দীর্ঘ এক বছর ধরে খোঁজ না পাওয়ায় তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের জীবিত ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে। হলদিয়া রুমখাঁ মনির মার্কেট এলাকা থেকে পাচার হওয়া একরামকে (১৬) ফিরে পেতে সহায় সম্বল বিক্রি করে দালালদের হাতে তিন লাখ টাকা তুলে দিয়েছিল অসহায় মা শামশুন্নাহার (৫৫)। কিন্তু ছেলেকে তো পাননি বরং ছেলের খোঁজে গেলে একাধিক বার পাচারকারীদের হাতে তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। দালালের ফাঁদে পড়ে মাস তিনেক আগে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রতœাপালং ইউনিয়নের তেলিপাড়ার মুদি দোকানি মোঃ ইসমাইল (২৫)। কিন্তু ইসমাইলসহ প্রায় ৫০ জনকে বহনকারী ট্রলারটি যাত্রাপথে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তে থাইল্যান্ডের গহীন জঙ্গলের কাছে ভিড়লে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রলারটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সেখানকার সংঘবদ্ধ পাচারকারীদল। পরে সবাইকে গহীন জঙ্গলে নিয়ে বাংলাদেশী স্থানীয় দালালের মাধ্যমে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। ইসমাইলের মতো একই কাহিনী কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উখিয়া, টেকনাফ ও রামু উপজেলার ঘরে ঘরে। কয়েক দিন ধরে থাইল্যান্ডে একের পর এক গণকবর আবিষ্কৃত হওয়া এবং অগণিতক লাশ উদ্ধারের খবরটি ইসমাইলের বাড়িতেও এসেছে। তাতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কান্নার রোল পড়েছে। ইসমাইলের অপেক্ষায় মা মমতাজের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। ইসমাইলের বাবা শফিউল আলম ড্রাইভার গত মঙ্গলবার বলেন, ‘ইসমাইলের সঙ্গে আরও যারা মালয়েশিয়ার উদ্দেশে গিয়েছিল তাদের কেউই এখন আর বেঁচে নেই। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের বন্দীশালায় তাদের আটকে রাখার পর পরিবারের সদস্যদের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। ইসমাইলকেও ছেড়ে দেয়ার জন্য উখিয়ার সোনারপাড়া এলাকার দালাল মোহাম্মদ কালুর মাধ্যমে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। এর মধ্যে কালুর মাধ্যমে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেই। জমি বিক্রি, ভিটেবাড়ি অন্যের কাছে বন্ধক রেখে এবং মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা পাঠাই। ১০ হাজার টাকা ঠিক সময়ে দিতে না পারায় আমার ছেলে ইসমাইলকে তারা মেরে ফেলেছে বলে খবর আসে গত ২৯ মার্চ। রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ফাক্রিকাটা গ্রামের ফজু সওদাগরের ছেলে এরশাদ (২৩) ৩-৪ মাস পূর্বে দালালদের ফাঁদে পড়ে উখিয়ার সোনারপাড়া উপকূল দিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচার হয়। প্রায় ২ মাস থাইল্যান্ড জঙ্গলে বন্দীশিবিরে আটক থাকার পর মালয়েশিয়া পৌঁছেও ১৬ দিন পূর্বে ফেরত এসেছে কঙ্কাল শরীর নিয়ে। এরশাদের পিতা ফজু সওদাগর জানান, থাইল্যান্ড জঙ্গলে মানবপাচারকারীদের আস্তানা থেকে মোবাইলে ছেলের নির্যাতনের কাহিনী ও কান্না সইতে না পেরে জমি জিরাত বিক্রি করে দালাল চক্রের সদস্যদের আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করার পর আমার ছেলেকে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেয় তারা। মানবপাচার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, গত ৩ বছরে উখিয়া থেকে সমুদ্রপথে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পাচার হয়ে গেছে। ততমধ্যে বিভিন্নভাবে উদ্ধার হয়েছে ৫ হাজারের মতো, নিখোঁজ ৬ শতাধিক। তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সমুদ্রপথে পাচার হয়ে যাওয়াদের মধ্যে থাইল্যান্ড কারাগারে ৭ হাজারের মতো, মালয়েশিয়া কারাগারে ৮ হাজারের মতো, মিয়ানমারের বিভিন্ন কারাগারে আড়াই হাজারের অভিবাসী আটক রয়েছে। তার মতে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, উখিয়ায় ১০/১৫ প্রভাবশালী গডফাদারের নেতৃত্বে পাড়া-গ্রামভিত্তিক ছোট ছোট দালাল গড়ে উঠেছে। এ ধরনের আড়াই শতাধিক দালাল সর্বত্র সক্রিয় রয়েছে। নিখোঁজদের সন্ধান প্রার্থীদের অনেকে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, উখিয়ার করইবনিয়ার জালাল আহমদের পুত্র রশিদ আহমদ, পূর্বডিগলিয়া গ্রামের সৈয়দ নুরের পুত্র খোরশেদ আলম, শামসুল আলমের পুত্র শফি আলম প্রকাশ বুইজ্যা, রামু রশিদনগর বড় ধলিরছড়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে সেকান্দর, একই গ্রামের নুরুন্নবী বাদশা, মোজাম্মেল হক, রমজান আলী, নুরুল ইসলাম এবং পার্শ¦বর্তী ঈদগাঁও মোঃ সেলিম, মিজান, নুরুল হুদাসহ অন্তত ৫০ জনের একটি গ্রুপ দালালের ফাঁদে পড়ে এখনও তাদের কোন খোঁজ মিলেনি। রামুর খুনিয়াপালং দারিয়ারদীঘির দিনমজুর আবদুস শুক্কুরের ১৫ বছরের ছেলে হারুনুর রশিদ নিখোঁজ রয়েছে গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে। নিখোঁজ হারুনের বাবা আবদুস শুক্কুর জানান, তার পুত্রকে একই এলাকার কাদের হোসেনের পুত্র তনু পোশাক ক্রয় করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাজারে নিয়ে যায়। এরপর ২ বছর ৮ মাসেও ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। একই এলাকার গোলাম সোবাহানের পুত্র কালু, গোলাম হোসের পুত্র ফরিদুল আলম, সোনা আলীর পুত্র ফরিদ মিয়া, নাজির হোসেনের পুত্র ফরিদুল আলম, কাদের হোসেনের পুত্র মোঃ আলম, সুলতান আহমদের পুত্র তৈয়ব উল্লাহ, আলী আহমদের পুত্র আলম, ইসলাম মিয়ার পুত্র মুহিব উল্লাহ, আলী আকবরের পুত্র আবু সিদ্দিক, ঠা-া মিয়ার পুত্র কামাল হোসেন, আবুল কালামের পুত্র খাইরুল আমিনসহ অন্তত ২০ শিশু কিশোর দালালের প্রলোাভনে পড়ে মালয়েশিয়ায় যাত্রা করে এখনও নিখোঁজ রয়েছে। রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা রিয়াজ উল আলম জনকণ্ঠকে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, বিভিন্নভাবে পাওয়া তথ্য মতে, দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে গত দুই বছরে রামুর ১১ ইউনিয়ন থেকে সাগরপথে শিশু কিশোরসহ অন্তত ১৫ হাজার মানুষ মালয়েশিয়ার পথে যাত্রা করেছে। এদের মধ্যে নিখোঁজ রয়েছে এক হাজারেরও বেশি। সূত্রে জানানো হয়, উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের বি-ব্লকের মোহাম্মদ শাকের, রোহিঙ্গা সৈয়দ আলম, নুরুল আমিন ও হাফেজ আনোয়ার ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে জালিয়াপালং দালাল ফয়েজুল্লার মাধ্যমে ইনানী উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়া যাত্রা করেছে অথচ এখনও পর্যন্ত তাদের সন্ধান নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানো নিখোঁজ ব্যক্তিদের সংখ্যা শুধু কক্সবাজার জেলায় ২ হাজারের বেশি হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। মালয়েশিয়া ফেরত উখিয়া পূর্ব মরিচ্যা গ্রামের হতদরিদ্র সৈয়দ আলম চৌকিদারের পুত্র দিদারুল আলম প্রকাশ রাব্বী জানান, মানবপাচারকারী শাহাব মিয়ার পুত্র দালাল জয়নাল তাকে প্রথমে শাহপরীদ্বীপে একটি বন্দীশালায় নিয়ে যায়। সেখানে তিনদিন অবস্থান করার পর পাঠিয়ে দেয় থাইল্যান্ডে। রাব্বীর টাকা পরিশোধ হলেও তার সঙ্গে থাকা অন্যদের লেনদেন সম্পন্ন না হওয়ায় দালাল চক্র ১২ জনকে মালেশিয়ায় পুলিশের হাতে তুলে দেয়। রাব্বী আরও জানান, মালেশিয়ার চেরামবাগ রিঙ্গিং ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে ২ মাস ৪ দিন জেল কাটার পর বাড়ির সহায়সম্বল বিক্রি করে ৩৫ হাজার টাকা বিমান ভাড়া পৌঁছানোর পর সে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। তার মতে মালেশিয়ার কারাগারে সহস্রাধিক বাংলাদেশী অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে জানান, থাইল্যান্ডের গণকবরে কোন বাংলাদেশী আছে কি না, এ বিষয়ে তার কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। তবে নিখোঁজ, মৃত্যু, গলিত লাশের নানা তথ্য তারা পাচ্ছেন। তিনি জানান, মানবপাচার প্রতিরোধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
×