ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গৃহশিক্ষকসহ গ্রেফতার ২

চট্টগ্রামে মা ও মেয়েকে জবাই ॥ টাকা স্বর্ণালঙ্কার লুট

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৮ মে ২০১৫

চট্টগ্রামে মা ও মেয়েকে জবাই ॥ টাকা স্বর্ণালঙ্কার লুট

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মহানগরীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ায় একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে মা-মেয়েকে। ঘরের আলমারি ভেঙ্গে লুট করা হয়েছে লক্ষাধিক টাকা ও বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার। বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে গৃহকর্তা ও পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে গৃহশিক্ষক ও এক আত্মীয়কে। সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, এ নৃশংস হত্যাকা-ের কোন মোটিভ এখনও পাওয়া যায়নি। প্রতি ফ্লোরে চারটি করে ফ্ল্যাটের ছয়তলা এ ভবনের কোন বাসিন্দাও বলতে পারছে না হত্যাকা- সংঘটনকালে কোন শব্দ বা হত্যাকারীদের আনাগোনার বিষয়টি। পুলিশ এ হত্যাকা-কে এখনও রহস্যময় বলে তাদের সন্দেহজনক দিকগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। নিহত মায়ের নাম নাছিমা বেগম (২৮) ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে ১০ বছরের রিয়া আক্তার। নিহত নাছিমার স্বামী মোঃ শাহ আলম একজন মাংস ব্যবসায়ী। তার মুরগির দোকানও রয়েছে। গত কয়েক মাস আগে শাহ আলম এ বাসাটি ভাড়া নিয়ে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বসাবাস করে আসছিল। বৃহস্পতিবার সকালে শাহ আলম যথারীতি দোকানে চলে যান। এরপর তার স্কুলপড়ুয়া বড় দুই পুত্র একজন আত্মীয়ের সঙ্গে স্কুলে চলে যায়। এর পরই এ নৃশংস হত্যাকা- ঘটেছে বলে পুলিশসহ ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দাদের নিশ্চিত ধারণা। নিহত নাছিমা ও তার কন্যা রিয়ার শরীরে অসংখ্য ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি জবাই করা হয়েছে। হত্যাকা-ের ঘটনা চলাকালে তাদের কোন আহাজারির শব্দ আশপাশের কারও কানে আসেনি। সকাল ১০টার পর কাজের বুয়া জামিলা ঘরের মূল দরজা খোলা অবস্থায় দেখে প্রবেশ করে। জামিলা জানায়, সে প্রথমে গৃহকর্ত্রী নাছিমাকে মাটিতে পড়া দেখতে পেয়ে তিনি ধারণা করেন, হয়ত বেহুশ হয়ে পড়ে আছেন। পরে রক্ত দেখে নিশ্চিত হয়, এটি হত্যাকা-। এরপর বুয়া গৃহকর্তাকে এই হত্যাকা-ের খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বাড়িটি ঘেরাও করে। নাছিমার মরদেহ পাওয়া যায় বসার ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায়। আর কন্যা রিয়ার লাশটি উদ্ধার করা হয় বাথরুম থেকে। দুটি মরদেহেরই গলাকাটা। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে এ হত্যাকা- ঘটে থাকতে পারে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তাক্ত ছুরি উদ্ধার করে। এছাড়া বাড়িটির সিঁড়িতে পাওয়া যায় গহনা রাখার একটি খালি ছোট ব্যাগ। ঘটনার খবর শুনে ছুটে যান সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার এবং পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার ও যাবতীয় আলামত জব্দ করে। তবে ঘটনাটি ডাকাতির নাকি পূর্ব শত্রুতার জের হিসেবে ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সিএমপির সহকারী কমিশনার শাহ মোঃ আবদুর রউফ সাংবাদিকদের জানান, নিহত নাছিমা বেগমের স্বামী মোঃ শাহ আলম একজন মাংস ব্যবসায়ী। নাছিমার স্বামী শাহ আলম জানান, তিনি সকাল পৌনে নয়টার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে সর্বশেষ কথা বলেন। এরপর সকাল ১০টার পর বাসার কাজের বুয়া তাকে জানায় হত্যাকা-ের খবর। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাসায় এসে দেখেন বসার রুমের মেঝেতে স্ত্রীর গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। তার পেটেও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। এরপর বাথরুমে দেখতে পান কন্যা রিয়ার মৃতদেহ। তারও গলাকাটা। স্ত্রী ও কন্যাকে জবাই করে হত্যা ছাড়াও আলমারি থেকে প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি। পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে দ্রুত ওই বাড়িতে গিয়ে মরদেহ দুটি উদ্ধার ও আলামত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বাসার ওয়ারড্রোবের ওপর একটি রক্তাক্ত ছুরি পাওয়া যায়। এছাড়া সিঁড়িতে পাওয়া গেছে একটি ছোট ব্যাগ। এতে স্বর্ণালঙ্কার রাখা হয়ে থাকতে পারে। বাসার স্টিল আলমারির লকার পাওয়া যায় ভাঙ্গা অবস্থায়। দুর্বৃত্তরা ডাকাতি করতে এসে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও এর পেছনে পূর্বশত্রুততার কোন বিষয় রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সহকারী কমিশনার শাহ মোঃ আবদুর রউফ সাংবাদিকদের জানান, সম্ভাব্য সব দিকই দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ গৃহশিক্ষক রকি ও বেলাল নামে এক আত্মীয়কে আটক করেছে। এছাড়া বাড়ির মালিক মোবাশ্বের হোসেন মিয়া, বাসার পাশের দোকানদার, মহিলার স্বামী ও দুই পুত্র সন্তানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ হত্যাকা-ের নেপথ্যের কোন ক্লু উদঘাটন করা যায়নি। তবে বাসার আলমারি ভাঙ্গা ও মালামাল তছনছ দেখে প্রাথমিকভাবে ডাকাতির ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবেশীদের ধারণা, পরিচিতরাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
×