ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফাইনালে এক পা বার্সিলোনার

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৮ মে ২০১৫

ফাইনালে এক পা বার্সিলোনার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ম্যাচটির আগে অনেক কথা হয়েছে। পেপ গার্ডিওলা নাকি উচিত শিক্ষা দেবেন মেসি, ইনিয়েস্তা, পিকেদের! কিন্তু কিসের কি! উল্টো শিক্ষা পেয়েছেন গার্ডিওলা নিজেই। মূলত সাবেক শিষ্য লিওনেল মেসির কাছেই নাকাল হতে হয়েছে গার্ডিওলা ও বেয়ার্ন মিউনিখকে। আর্জেন্টাইন অধিনায়কের অনবদ্য নৈপুণ্যে ভর করে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলে ফাইনালের ঘ্রাণ পাচ্ছে বার্সিলোনা। বুধবার রাতে সেমিফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচে ক্যাটালানরা ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় জার্মান পরাশক্তি বেয়ার্ন মিউনিখকে। ন্যুক্যাম্পে অনুষ্ঠিত ম্যাচে স্বাগতিকদের হয়ে জোড়া গোল করেন মেসি। অপর গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার। ১২ মে মিউনিখের এ্যালিয়েঞ্জ এ্যারানায় সেমির দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। শুরু থেকেই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ জমজমাট হয়ে ওঠে। কিন্তু কার্যকর আক্রমণ বলতে যা বোঝায় তা করতে পারে কেবল স্বাগতিক বার্সাই। গোটা ম্যাচে অতিথি বেয়ার্ন গোলের সুযোগ পেয়েছে মাত্র একটি। সেখানে ম্যাচের প্রথমার্ধেই তিনটি লোপ্পা গোলের সুযোগ নষ্ট করেন বার্সার নেইমার, সুয়ারেজ, আলভেজরা। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেই সংঘবদ্ধ ফুটবল খেলতে থাকে লুইস এনরিকের দল। কিন্তু কাজের কাজ গোলের দেখা মিলছিল না। স্বাগতিকদের চেয়ে ম্যাচে বলের নিয়ন্ত্রণ অতিথিদের বেশি থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিট বাভারিয়ানদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলায় মেতে ওঠেন মেসি, নেইমার, সুয়ারেজরা। মাত্র তিন মিনিটের ব্যবধানে মেসি দু’দু’টি চোখ ধাঁধানো গোল করে বার্সার জয় নিশ্চিত করেন। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে নেইমারের করা দৃষ্টিনন্দন গোলেও অবদান রাখেন সাবেক টানা চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। ম্যাচে গোটা ম্যাচের চিত্র যেন শেষক্ষণে প্রতিফলিত হয়। রীতিমতো বিধ্বস্ত, রণক্লান্ত হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন লাম, নিউয়ের, মুলার, শোয়েনস্টেইগাররা। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরের পর এই প্রথম বার্সিলোনা বল দখলের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। এরপরও ম্যাচে দাঁড়াতেই পারেনি ৫৩ শতাংশ বল দখলে রাখা বেয়ার্ন। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের আগের দেখায় ন্যূক্যাম্পেই সেমিফাইনালে বার্সিলোনাকে ৩-০ গোলে হারের লজ্জায় ডুবিয়েছিল বেয়ার্ন। এর আগে নিজেদের মাঠে ৪-০ গোলে জেতায় দুই লেগ মিলিয়ে ৭-০ গোলের বিশাল জয় পেয়েছিল বাভারিয়ানরা। সেই হারের প্রতিশোধের অর্ধেকটা নিয়ে এখন ফিরতি লেগে মিউনিখে খেলার অপেক্ষা মেসি, নেইমার, সুয়ারেজদের। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি সহজ সুযোগ নষ্ট করার পর দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে বার্সা। অবশেষে ৭৭ মিনিটে কাক্সিক্ষত গোলের দেখা মেলে। ডান দিক থেকে দানিয়েল আলভেজের বল পায়ে জমানোর পর বাঁ পায়ের দুর্দান্ত নিচু শটে সাইডপোস্ট দিয়ে বল জালে জড়ান মেসি। ৮০ মিনিটে মেসির দ্বিতীয় গোল অনিন্দ্য সুন্দর। ৩০ গজ দূরে বল পেয়ে পায়ের জাদুতে জেরোমে বোয়েটেংকে মাটিতে লুটিয়ে ফেলে ডান পায়ের ে টোকায় গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নিউয়েরের মাথার উপর দিয়ে তিনি পাঠিয়ে দেন জালে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের চলতি মৌসুমে ১১ ম্যাচে এটি মেসির দশম গোল। আর মোট ৭৭ গোল নিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে ছাড়িয়ে টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। ম্যাচের শেষের দিকে মূল্যবান ‘এ্যাওয়ে’ গোলের সন্ধানে মরিয়া হয়ে আক্রমণে উঠে গিয়েছিল বেয়ার্নের খেলোয়াড়রা। বল পেয়ে মেসি বাড়ান ফাঁকায় থাকা নেইমারের দিকে। প্রায় মাঝমাঠ থেকে অনেকখানি দৌড়ে বল নিয়ে নিউয়েরকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়াতে কোনো ভুল করেননি ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে বার্সিলোনা কোচ লুইস এনরিকে এই ফলকে পরিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এটা পরিপূর্ণ এক ফল। আমাদের ফাইনালের কাছে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। তবে ফাইনালে ওঠা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলেও শিষ্যদের আনন্দে গা ভাসিয়ে না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই দ্বিতীয় পর্বে (ফাইনাল) নিশ্চিত করতে হবে। আমি নিশ্চিত, এটা খুব কঠিন একটি ম্যাচ হবে। হতাশ বেয়ার্ন কোচ পেপ গার্ডিওলা বলেন, তারা (বার্সা) এগিয়ে যেতেই আমরা ম্যাচে আমাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি। এটা লজ্জার যে, আমরা তৃতীয় গোলটি খেয়েছি। কারণ ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলেও ফিরতি লেগে সুযোগ থাকে। কিন্তু ৩-০ তে পিছিয়ে থাকার পর কাজটা অত্যন্ত কঠিন।
×