ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ গজারিয়া গণহত্যা দিবস ॥ হত্যা করা হয় ৩৬০ নারী পুরুষ শিশুকে

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৯ মে ২০১৫

আজ গজারিয়া গণহত্যা দিবস ॥ হত্যা করা হয় ৩৬০ নারী পুরুষ শিশুকে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ আজ ৯ মে গজারিয়া গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী নারী ও শিশুসহ ৩শ’ ৬০ নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। মুন্সীগঞ্জ জেলার মেঘনা ও মেঘনার শাখা নদী ফুলদী তীরের গোসাইরচর, নয়নগর, বালুরচর, বাঁশগাঁও জেলেপাড়া, ফুলদী, নাগের চর, কলসেরকান্দি, দড়িকান্দি ও গজারিয়া গ্রামে এ দিনটিতে কান্নার রোল পড়ে যায়। গজারিয়া উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের এ গ্রামগুলোতে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযঞ্জ চালায়। এই শহীদদের দাফন করার লোকও ছিল না গ্রামগুলোতে। তাই গণকবর দেয়া হয়। রাজধানী ঢাকার মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরে সেই বধ্যভূমিগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষিত হয়নি স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও। ওই দিন ভোরে পাকসেনারা পরিকল্পিতভাবে গজারিয়ায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। নিরস্ত্র নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর নির্বিচারে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘুমন্ত এবং নামাজরত মানুষের ওপর হামলা চালায়। এই নির্মম ঘটনা গজারিয়াবাসী আজও ভুলতে পারেনি। সে দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হাফিজ আহম্মেদ বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৯ মে ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে নীরব নিস্তদ্ধ রাতের মৌনতা শেষে ডাহুক ডাকা ভোরের আগে মুয়াজ্জিম যখন সুউচ্চ মিনারে আজান দিচ্ছিলেন, সেই মুহূর্তেই এ হামলা হয়। আবুল হোসেন জলিল শিকদার ও আলমাজ দর্জিসহ ১৫ জনকে ধরে নিয়ে পাকিবাহিনী পল্টন সড়কের পাশে সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে গুলি করে। ১৩ জন মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেঁচে যান আবুল হোসেন জলিল শিকদার ও আলমাজ দর্জি। গোসাইরচর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল খালেক আলো জানান, এই গণহত্যার আগে গজারিয়া হাই স্কুলে ৫৪ মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে একটি সভা হয়। এ খবর শুনেই গজারিয়া গ্রামের রাজাকার খোকা চৌধুরী, সাম চৌধুরী ও গফুর চৌধুরী পাকি বাহিনীকে নিয়ে আসে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘর চিনিয়ে দেয় ফালু নামের এক রাজাকার। পাকবাহিনী আব্দুল খালেক আলোর আপন ভাই মোয়াজ্জেমসহ পরিবারের সাত জনকে হত্যা করে। শহীদ পরিবারের সদস্যরা আছেন নানান দুঃখ কষ্টে। গজারিয়ার গণহত্যার এ গৌরবময় ইতিহাস জাতির স্মৃতির ক্যানভাস থেকে কখনও বিস্মৃতি হওয়ার নয়। শহীদদের নামের তালিকা সঠিকভাবে তৈরি করা হয়নি।
×