ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৯ মে ২০১৫

ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ?

মিথুন আশরাফ ॥ দ্বিতীয় দিন শেষে ফলোঅন এড়ানোই বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তৃতীয় দিন সেই চ্যালেঞ্জে সফল হতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ইনিংস হার এড়ানো গেছে। সেটি বাংলাদেশের সুবাদে নয়, পাকিস্তানের সুবাদে। বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়ার পরও যে পাকিস্তান আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামল। বাংলাদেশ ফলোঅন এড়ানো থেকে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থাকল। ২০৩ রান করতেই ৯ উইকেটের পতন ঘটল। ৩ উইকেট করে নেয়া ওয়াহাব রিয়াজ ও ইয়াসির শাহর বোলিং তোপে পড়ে। সেখানে বাংলাদেশ অলআউটও হয়ে গেল। শাহাদাত হোসেন রাজিব ব্যাট করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ১ ব্যাটসম্যানের অনুপস্থিতির জন্য অলআউটই হতে হলো। অপরাজিত ৮৯ রান করা সাকিব হাল না ধরলে ব্যবধান আরও বাড়ত। শাহাদাত যদি ব্যাট করতে পারতেন, তাহলে হয়ত সাকিব শতকটিও পেয়ে যেতে পারতেন। তা আর হলো না। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ফলোঅনেও পড়ল আবার পাকিস্তান থেকে ৩৫৪ রানে পিছিয়েও থাকল। কিন্তু পাকিস্তান আবার বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল না। তারাই ব্যাটিং করল। এতে করে পাকিস্তান বোলারদের কিছুটা বিশ্রাম হলো। অবশ্য তাতে করে খুব বেশি লাভও কী হলো? দ্রুতই পাকিস্তানের ৬ উইকেটের পতন ঘটল। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ ৮২ রান করা মিসবাহ যেই ১৯৫ রানে আউট হলেন, ইনিংসও ঘোষণা করে দিল পাকিস্তান। ৫৪৯ রানে এগিয়ে গেল। বাংলাদেশের সামনে জিততে ৫৫০ রানের টার্গেট দাঁড় হলো। পারবে বাংলাদেশ তৃতীয় দিনের এক ঘণ্টা এবং চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে পাওয়া মোট ৬ সেশন খেলে ম্যাচ জিতে নিতে? ম্যাচ জিততে হলে বাংলাদেশকে বিশ্বরেকর্ডই গড়তে হবে। এখন পর্যন্ত বিশ্ব ক্রিকেটে ৫০০ রানের বেশি টার্গেট নিয়ে জেতার কোন নজির নেই। ৪০০ রানের বেশি টার্গেট নিয়ে তা অতিক্রম করে জেতার রেকর্ডই আছে ৪টি। এর মধ্যে ৪১৮ রানের টার্গেট নিয়ে জয়ের ইতিহাস রয়েছে। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বিশ্বরেকর্ড গড়েই জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ যদি জিতে তাহলে বিশ্বরেকর্ডই হবে। কিন্তু তা কী সম্ভব? বাংলাদেশকে খেলতে হচ্ছে ৯ উইকেট নিয়ে। এর মধ্যে তৃতীয় দিন শেষে ইয়াসিরের অসাধারণ এক গুগলিতে ইমরুলের (১৬) ব্যাট-প্যাডের মাঝখান দিয়ে বল গিয়ে লেগ স্ট্যাম্পে লাগে। আউট হয়ে যান ইমরুল। দিন শেষে বাংলাদেশ ৬৩ রান করে। এখনও পাকিস্তান থেকে ৪৮৭ রানে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। হাতে আছে ৮ উইকেট এবং পুরো দুটি দিন। আজ চতুর্থদিনে ব্যাট হাতে নামবেন ৩২ রান করা তামিম ও ১৫ রান করা মুমিনুল। এ দু’জনের সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, সাকিব, সৌম্য, শুভাগত হোমের দিকেই সবার দৃষ্টি থাকছে। ম্যাচে জয় বের করে আনতে কিংবা ম্যাচ বাঁচাতে হলে এ ব্যাটসম্যানদেরই যা করার করতে হবে। দু’দিনে ৪৮৮ রান করে হয় ম্যাচ জিততে হবে, নয়ত পুরো দু’দিন খেলে ড্র করতে হবে। তাইজুল, শহীদও আছেন। তবে এ দু’জনই বোলার হওয়ায় তাদের নিয়ে ভরসাটা কমই। পারবে বাংলাদেশ ম্যাচ বাঁচাতে বা জিততে? এ প্রশ্ন তাই বার বারই ঘুরেফিরে আসছে। খুলনা টেস্টের স্মৃতি বলছে, অসম্ভব কিছু নয়। খুলনা টেস্টে যে বাংলাদেশ দেড় দিনের বেশি খেলেছে। ম্যাচও ড্র করে নিয়েছে। খুলনা টেস্টের দুই নায়কের একজন ১৫০ রান করা ইমরুল আউট হয়ে গেছেন। আছেন তামিম। যিনি ক্যারিয়ারের ৭ টেস্ট সেঞ্চুরির মধ্যে চারটিই দ্বিতীয় ইনিংসে করেছেন। এবারও যদি তামিম সে রকম কিছু করে দেন, তাহলে দু’দিন খেলাও সম্ভব। তামিমের পর বড় ইনিংস খেলা কিংবা বড় জুটি গড়ার ক্ষমতা পরের ব্যাটসম্যানদেরও আছে। অবশ্য একটি বিষয়ই এখন চলে আসছে। বাংলাদেশ এত বড় টার্গেট নিয়ে কোনদিনই জিততে পারেনি। ৪০০ রানের বেশি টার্গেট যখনই বাংলাদেশের সামনে পড়েছে, তখনই বাংলাদেশ হেরেছে। শুধু গত বছর ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৪৬৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ম্যাচটি ড্র করেছিল বাংলাদেশ। অবশ্য চতুর্থদিনের শেষ বেলায় এসে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নামতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার অনেক বেশি সময়। এখনও পুরো দু’দিন বাকি। ৪০০ রান অনেক দূরের ব্যাপার। ৩০০ রানের বেশি টার্গেটেও তো এখনও বাংলাদেশ জিততে পারেনি। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছিল। ২১৫ রানের টার্গেটে খেলে যে ৪ উইকেটে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ, সেটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টার্গেট অতিক্রম করে জয়ের রেকর্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে অবশ্য ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেয়া ৫২১ রানের টার্গেটে ৪১৩ রান করেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচটি হারলেও সেটিই দ্বিতীয় ইনিংসে টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড হয়ে আছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে হলে এখন বাংলাদেশকে তার চেয়েও ৭৪ রান বেশি করতে হবে। এখানেই বাংলাদেশকে নিয়ে খানিক ভয় আছে। পাকিস্তান পেসার ও স্পিনরা মিলে যেভাবে বাংলাদেশকে চাপে রেখেছে, যেভাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছে; তাতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসেও যে ধস নামবে না, তা অনুমান করা কঠিন। আবার বাংলাদেশ ম্যাচ বাঁচাতে হলে যে টানা দু’দিন খেলে যেতে হবে, সেটিও তো শঙ্কাই জাগাচ্ছে। এর সঙ্গে জিততে হলে বিশ্বরেকর্ডই গড়তে হবে বাংলাদেশকে। এত বিশাল রানই বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দিয়েছে। এখন আক্রমণাত্মক খেলতে গেলে আউট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তবে যদি কোন ব্যাটসম্যান খুলনা টেস্টের মতো দাঁড়িয়ে যান, তাহলে রান আসবে। আবার রক্ষণাত্মক খেলতে গেলে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে পাকিস্তান বিপাকে ফেলার চেষ্টা করবেই। তাতেও বাংলাদেশেরই বিপদ থাকছে। বোঝাই যাচ্ছে, কোনভাবেই এ ম্যাচ থেকে রক্ষা নেই বাংলাদেশের। যদি না তামিম, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, সাকিব, সৌম্য, শুভাগত মিলে দলকে বাঁচান।
×