ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকায় গোয়েন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এনআইএ কর্মকর্তাদের তথ্য

জঙ্গী সালেহীন ও বোমা মিজান ভারতে আশ্রয় নিয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১০ মে ২০১৫

জঙ্গী সালেহীন ও বোমা মিজান ভারতে আশ্রয় নিয়েছে

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের জঙ্গী তৎপরতা যৌথভাবে মোকাবেলা করার বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন দুই দেশের গোয়েন্দারা। গত সপ্তাহে সফররত ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের মতবিনিময়কালে উঠে এসেছে জঙ্গীরা দুই দেশের জন্যই হুমকি। আলোচনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জঙ্গীরা সীমান্তপথে পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে ভারতে, আর ভারতের জঙ্গীরা বাংলাদেশে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা, আইএস ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবিসহ জঙ্গী তৎপরতা বিষয়ে দুই দেশের গোয়েন্দারাই মতবিনিময় করছেন। বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক ব্লগার অভিজিত রায় হত্যাকা-ের কারণ, কারা এবং কেন হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে এনআইএকে অবহিত করেন দেশের গোয়েন্দারা। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের মধ্যে জঙ্গী দমনে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের চার্জশীটভুক্ত জেএমবির পলাতক জঙ্গী সদস্যদের বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করেন দুই দেশের গোয়েন্দারা। বুধবার বিকেলে র‌্যাব সদর দফতরে র‌্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয় এনআইএ প্রতিনিধি দলটি। এর আগে ৫ মে পুলিশ সদর দফতরে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন তাঁরা। গত ৪ মে তাঁরা মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। ৩ মে রাতে এনআইএ প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় আসার পর পরের দিন বৈঠকেই খাগড়াগড় বিস্ফোরণের চার্জশীটভুক্ত ৮ জঙ্গীকে ধরতে বাংলাদেশ পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়। এনআইএ-এর সন্দেহ পলাতক ভারতীয় জঙ্গীরা গ্রেফতার এড়াতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। দুই দেশের জঙ্গী নেটওয়ার্কের খোঁজে ঢাকার গোয়েন্দাদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করে এনআইএ প্রতিনিধি দলটি। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার আইজি সঞ্জিব কুমার সিংহের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি বর্তমানে ঢাকা সফর করছে। গত বছরই কলকাতায় সফর করেন ঢাকার গোয়েন্দারা। বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় চার্জশীটভুক্ত অন্তত ৮ পলাতক জঙ্গীর মধ্যে ৪ জন রয়েছে বাংলাদেশী । পলাতক এই ৪ জেএমবি জঙ্গীর সন্ধান ও তথ্য বিনিময়ের জন্যই এবার এনআইএ প্রতিনিধিদের ঢাকা সফর। জঙ্গী দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেছে। ঢাকার গোয়েন্দারা ও এনআইএ কর্মকর্তারা বৈঠকে ঐকমত্য হয়ে বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দুদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। দু’দেশেই জঙ্গীদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাই তাদের মোকাবেলা করতে একসঙ্গে কাজ করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। গোয়েন্দা সূত্র মতে, ঢাকায় সফররত এনআইএ প্রতিনিধি দলটি বৈঠকে বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনার তদন্তে এনআইএ কী পেয়েছে সেই বিষয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা ও পুলিশকে অবহিত করেছে। বর্ধমান খাগড়াগড় বোমা বিস্ফোরণের মামলাটির চার্জশীট দেয়ার পর চার্জশীটভুক্ত আসামিদের মধ্যে পলাতক আটজনের ৪ জনই বাংলাদেশী। তাদের বিষয়ে বিচারিক আদালতে তথ্যাদি উত্থাপন করতে হবে। বিচারিক আদালতে যাতে জঙ্গীদের বিষয়টি যথাযথ তথ্য-প্রমানণ উপস্থাপন করা যায় সেই বিষয়ে সহায়তা চেয়েছে ঢাকায় সফররত এনআইএ। এনআইএ কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের চার্জশীটভুক্ত পলাতক জঙ্গীরা গ্রেফতার এড়াতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে পারে বলে তাঁরা সন্দেহ করছেন। যেসব জঙ্গী পালিয়ে বেড়াচ্ছে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিফোন নাম্বারে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছে। পলাতক জঙ্গীরা যেসব মোবাইল ফোন নাম্বারে কথা বলেছে তার মোবাইল ফোন নাম্বারগুলোর হস্তান্তর ও নজরদারি করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন এনআইএ কর্মকর্তারা।
×