ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ রিভিউ আবেদনের জন্য পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় রাষ্ট্রপক্ষ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১০ মে ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ রিভিউ আবেদনের জন্য পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় রাষ্ট্রপক্ষ

আরাফাত মুন্না ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ- হলেও সুপ্রীমকোর্টে এসে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে আমৃত্যু কারাদ- হয় কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর। গত বছরের ১৭ এপ্রিল সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ সংক্ষিপ্ত রায় দেয়ার পর প্রায় আট মাস পার হলেও এখনও প্রকাশ হয়নি পূর্ণাঙ্গ রায়। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় এখন পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের ধারণা যেহেতু রায়ে একজন বিচারপতি সাঈদীকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে এই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার সুযোগ থাকতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষও চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে এই প্রথম পুনর্বিবেচনার আবেদন করার অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে কাদের মোল্লার রিভিউ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশের পর উভয় পক্ষের রিভিউ আবেদন দায়েরের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম জানান, সাঈদীর পূর্ণাঙ্গ রায় এখনও প্রকাশিত হয়নি। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে বিচার-বিশ্লেষণ করে রিভিউর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রিভিউ সংক্রান্ত আপীল বিভাগের রায়ের পর প্রসিকিউশন ও আসামি উভয় পক্ষ রিভিউ আবেদনের সুযোগ পাবেন বলে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, সাঈদীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর পর্যালোচনা করে উপাদান পাওয়া গেলে রিভিউ করা হবে। এ বিষয়ে প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ বলেন, কবে পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে আসবে সেটা কেউই জানে না। আদালত যেদিন চাইবেন সেদিনই আমরা রায় হাতে পাব এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়টি আমাদের দুই কারণে প্রয়োজন। প্রথমত, এটা থেকে আমরা নিজেদের দুর্বলতার জায়গাগুলো বুঝতে পারতাম যা অন্য মামলাগুলোর জন্য দিকনির্দেশনামূলক হবে। দ্বিতীয়ত আমরা পুনর্বিবেচনার সুযোগ নিতে চাই। তিনি বলেন, আমরা যেহেতু পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাইনি সেহেতু এখনই কিছু বলতে পারছি না। আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গত বছরের ২৫ নবেম্বর কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের রায়ে পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে স্পষ্ট হয় আপীলের রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। যদিও সেখানে সাধারণ মামলার মতো ৩০ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলা নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদ- দেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ওই রায় দেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা, বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এর আগে আপীল বিভাগে সাঈদীর মৃত্যুদ-াদেশের বিরুদ্ধে আপীল শুনানি শেষ হওয়ার পর পাঁচ মাস রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। গত বছরের ১৬ এপ্রিল উভয় পক্ষে আপীল শুনানি শেষ হলে রায় সিএভি (রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ) রাখেন আপীল বিভাগ। এই মামলায় সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক দুটি আপীল আবেদন দায়ের করেছিল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাজা ঘোষিত না হওয়া ছয়টি অভিযোগে শাস্তির আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আর সাঈদীর ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে আসামি পক্ষ আপীল করেন। আদালত উভয়টির আংশিক মঞ্জুর করেন। রায়ে ১০, ১৬, ১৯ নম্বর অভিযোগে জামায়াতের এই নায়েবে আমিরকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। আর ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং ৭ নম্বরের জন্য ১০ বছর কারাদ- দেন আপীল বিভাগ। এ ছাড়া ৮ নম্বর অভিযোগের অপর অংশসহ ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালী হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই কুখ্যাত রাজাকার সাঈদীকে ফাঁসির সাজা দিয়েছিলেন। এই যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ২০ অভিযোগ থাকলেও চূড়ান্ত রায়ে তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত হলো পাঁচটি অভিযোগ।
×