ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রীষ্মের ছুটি কমিয়ে সাত দিন ক্লাস চালানোর পরামর্শ শিক্ষামন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১১ মে ২০১৫

গ্রীষ্মের ছুটি কমিয়ে সাত দিন ক্লাস চালানোর পরামর্শ  শিক্ষামন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের তিন মাসের হরতাল-অবরোধে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রীষ্মের ছুটি কমিয়ে সাতদিন ক্লাস চালানোর পরামর্শ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অবরোধ ও হরতালে নাশকতার কারণে যেসব স্কুল-কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া হয়েছে এ পরামর্শ। যদি হরতাল-অবরোধে শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে কর্তৃপক্ষ চাইলে আসন্ন গ্রীষ্মের ছুটির মধ্যে ‘সুবিধামতো’ যে কোন সাত দিন ক্লাস নিতে পারবে। একই সঙ্গে হরতাল-অবরোধের পর থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ছুটির দিনেও অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছে তাও চালিয়ে যেতে পারবে। রবিবার শিক্ষা বোর্ড ও স্কুল-কলেজের প্রধানদের নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের এ অবস্থানের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি স্কুল ও কলেজগুলোকে বৃহস্পতি ও শনিবার বাড়তি ক্লাস এবং শুক্রবারেও ক্লাস নেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, দেশব্যাপী শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষতি সমানভাবে হয়নি। তাই যেখানে যেমন সমস্যা হয়েছে সে সব প্রতিষ্ঠানে নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনানুযায়ী গ্রীষ্মকালীন ছুটি (১৪ দিন) অর্ধেক অর্থাৎ সাতদিন কমিয়ে নিতে পারবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। তবে কোন্ প্রতিষ্ঠান কিভাবে ক্লাস বাড়াবে কিংবা ছুটি কমাবে এই বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোন কিছু ঠিক করে দেবে না। হরতাল-অবরোধে যেসব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানই ছুটির বিষয়টি ঠিক করে নেবে। এবার সরকারী-বেসরকারী নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি নির্ধারিত আগামী ১৪ থেকে ২৮ মে (১৫ দিন)। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বকর সিদ্দিকসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ, সরকারী হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, মিরপুর কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ গোলাম ওয়াদুদ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ কানিজ ফাতেমা, নাজনীন স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ নুরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জের বিনাপানি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী, পাবনা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমান, নোয়াখালী সরকারী কলেজে অধ্যক্ষ প্রফেসর মোশাররাফ হোসেন প্রমুখ। তবে ওই সভায় দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান নটর ডেম কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের কোন প্রতিনিধিকে বৈঠকে দেখা যায়নি। বৈঠকে প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষরা হরতাল-অবরোধের ক্ষতি পুুষিয়ে নেয়ার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। অধিকাংশ শিক্ষকই জানান, হরতাল-অবরোধের তেমন কোন প্রভাবই পরেনি তাদের প্রতিষ্ঠানে। তবে অনেকে হরতাল-অবরোধের নাশকতায় ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে নিজেদের উদ্যোগে বাড়তি ক্লাস নেয়ার কথা জানান। তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধ শিক্ষায় যে ক্ষতি করেছে স্বাধীনতার পর এমনটি আর হয়নি। প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের মতামতের পর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ক্যালেন্ডার নিজেরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ঠিক করবেন। ওপর থেকে কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। আপনারা প্রতিষ্ঠানের গবর্নিং বডি এবং অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে কিভাবে ক্লাস বেশি নিয়ে ছাত্রদের উপকার করা যায় সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তাহলে সিদ্ধান্তগুলো বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করি। এর পরও যদি ক্ষতি কাটাতে না পারেন, পরে তা দেখা হবে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার অবরোধ-হরতালে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রোজার সময়ও ছুটি কমানো হবে কিনা, সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। এবার সরকারী-বেসরকারী কলেজে রোজা ও ঈদের ছুটি ৫ থেকে ২১ জুলাই (১৫ দিন)। আর সরকারী বেসরকারী নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৮ জুন থেকে ২১ জুলাই (২৯ দিন) রোজার ছুটি। পরীক্ষার সময় শিক্ষকদের অনিয়মের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেয়া বা কোন ধরনের দুর্নীতি করলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কেউ রেহাই পাবেন না। ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র খোলার সঙ্গে সঙ্গেই একশ্রেণীর শিক্ষক প্রশ্নপত্র বাইরে পাচার করছেন। পরীক্ষায় ভাল ফল করাতে শিক্ষার্থীদের নানা অনিয়মে সহযোগিতা করছেন। তাদের রেহাই দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। আইনী ব্যবস্থাও নেয়া হবে। শিক্ষা পরিবারের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ হলেন শিক্ষকরা। কিন্তু কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু শিক্ষক অনিয়ম করছেন, শিক্ষকদের কলঙ্কিত করছেন। স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এমন অনিয়ম হচ্ছে। শিক্ষকদের মর্যাদাহানি করলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষকদের হুঁশিয়ার করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে পেশা ছেড়ে দিন। শিক্ষকদের মর্যাদাহানি করবেন না। রেহাই পাবেন না। এর আগে সরকার পতনের ডাক দিয়ে গত ৫ জানুয়ারি থেকে তিন মাস লাগাতার অবরোধের সঙ্গে হরতালের কর্মসূচী পালন করে বিএনপি-জামায়াত জোট। এসএসসির সব পরীক্ষাই হরতালের কারণে পিছিয়ে যায়। ১০ মার্চ এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত ৩ এপ্রিল এই পরীক্ষা শেষ হয়।
×