ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ মে ২০১৫

ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচন

নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন জরিপ, ধারণা বা ভবিষ্যদ্বাণী যে সাধারণত যথার্থ হয় না তা আবার প্রমাণিত হলো ব্রিটেনের ৫৬তম সাধারণ নির্বাচনে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছে কনজারভেটিভ দল। তারা পেয়েছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। আবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ক্যামেরন। সারা বিশ্বের দৃষ্টি ছিল এ নির্বাচনের দিকে। দৃশ্যত নির্বাচন নিয়ে কোন অভিযোগ উত্থাপিত না হওয়ায় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি-আদর্শের পীঠস্থান বলে অভিহিত ব্রিটেনের গণতন্ত্রেরই পুনর্বিজয় ঘোষিত হলো এতে। নির্বাচনে বিজিত দলটি নির্বাচনী ফল মেনে নিয়ে যে ভূমিকা পালন করেছে তা অন্যান্য দেশের রাজনীতিকদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। এই বিজয়ে বাংলাদেশেরও কিছুটা উল্লসিত হওয়ার কারণ ঘটেছে তিন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নারীর এমপি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। বিশ্বের অন্যতম প্রধান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্রিটেনে পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের ফল অনেকটা অপ্রত্যাশিত। জরিপ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ফল ও মতামত ছিলÑ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোন দল পাবে না। তবে বাস্তবতা হলো অনেকটাই উল্টো। কোন জোট ছাড়াই কনজারভেটিভ দল সরকার গঠন করতে পারছে। গণতন্ত্রের পথ অবাধ হওয়ার এটা এক শুভ লক্ষণ। ব্রিটেনের অখ-তার বিষয়টি ক্যামেরনের ব্রিটেনবাসীকে আশ্বস্ত করার মধ্য দিয়ে বিশ্বস্ততা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করাটাই মূলত বিজয়ের চাবিকাঠি বলে দৃশ্যমান হচ্ছে। গণতন্ত্রমনা মানুষমাত্রই যে কোন রাষ্ট্রের অখ-তা কামনা করবে এটাই প্রত্যাশিত। সে সূত্রে আমরাও ক্যামেরনের নেতৃত্বে ব্রিটেনের শান্তি-শৃঙ্খলা স্থায়ী ও অব্যাহত থাকুক সে কামনাই করি। আমরা আশা করব, অতীতের মতোই বাংলাদেশের পাশে থাকবে তারা। দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হবে আরও জোরদার। বিশেষত, নতুন সরকার দুদেশের মধ্যে বন্দী, অপরাধী বিনিময় বা প্রত্যর্পণ চুক্তির ব্যাপারে সদিচ্ছা দেখাবে, নেবে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ। কেননা সে দেশে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী কিছু অপরাধী আত্মগোপন করে আছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যাঁরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে সেখানকার নাগরিকদের আস্থাভাজন হয়েছেন, বাংলাদেশী ও বাংলাভাষীদের জন্য তা এক সুখকর ও আনন্দের বিষয়। আমরা আনন্দচিত্তে অভিনন্দন জানাই। টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলী ও রূপা হক-এরা শুধু ব্রিটেনে জনপ্রতিনিধিই নন; এদেশের মানুষের কাছে গর্বেরও। টিউলিপ সিদ্দিক সে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অভিজাত এলাকা হ্যাম্পস্টেড-কিলবার্নের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে শুধু যোগ্য রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবেই পরিচিতি পেলেন না, পাশাপাশি বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বিশ্ব দরবারে আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন। সে দেশের রাজনীতির মূলধারায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতদের সম্পৃক্ত হওয়াটা শুভ লক্ষণ বটে। এ ধারা অব্যাহত থাকুক। নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে আরও সমৃদ্ধ হোক সে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ভিত। বাংলাদেশের সঙ্গেও সম্পর্কের দিগন্ত হোক আরও প্রসারিত, সেটাই প্রত্যাশা।
×