স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার কাজাইকাটা এলাকায় সোনাভরি নদী বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণ করছে ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদাররা। ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা রাস্তাটি এর আগেও একাধিকবার বেঁধে দেয়া হয়েছিল বলে এলাকাবাসী জানান। তখনও সেটি টেকেনি এবারও টিকবে না বলে জানালেন তারা। একটি স্বার্থান্বেষী মহল মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাত করতে নামকাওয়াস্তে রাস্তা বেঁধে দিতে চাইছে বলে গ্রামবাসীরা বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারা আরও জানান, এটি নির্মাণ হলে ২৫টি গ্রামের ঘরবাড়ি ও প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমি হুমকির মুখে পড়বে। এমনকি নদীর প্রকৃত গতিপথ বাধার সৃষ্টি হবে এবং যে কোন সময় যে কোন দিক দিয়ে পানির প্রবাহ বেরিয়ে যাবে। ফলে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কাজাইকাটা উচ্চ বিদ্যালয় এ্যান্ড কলেজ, কাজাইকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাউবাড়ি হাটসহ সাত হাজার ঘরবাড়ি ও স্থাপনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন রাস্তার পাশেই ড্রেজার বসিয়ে রাস্তায় মাটি তোলা হচ্ছে। যা প্রকল্প বাজেটে স্বীকৃত নয়। পাশাপাশি নিয়মানুসারে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদের এলাকাভিত্তিক সদস্যরাই মাটি কেটে উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের কাজ করবেন। তা না করে এলজিইডি, সংশ্লিষ্ট সমিতির সভাপতি আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমানের ইচ্ছানুযায়ী ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা বেঁধে দেয়া হচ্ছে। ওই কমিটির সদস্য শাহাদত হোসেন, নূর হোসেন, ফজিলা বেগম, ফুলমতি বেগম, মজিদা বেগমসহ অনেকে জানান, সমিতির কাজ শুরু হয়েছে কিংবা বাজেট হয়েছে আমরা কিছুই জানি না। কে কাজ করছে, আর কে করছে না আমরা তাও জানি না।
চর ইটালুকান্দা গ্রামের মকবুল হোসেন, বৃদ্ধ আব্বাস শেখ, ব্যবসায়ী ফজলুল হক, শফিকুল ইসলাম, চাকুরে মফিজ উদ্দিন জানান, ‘রাস্তাটি বেঁধে দিলে অহেতুক পয়সার ক্ষতি করা হবে। আসলে এখানে ব্রিজ দেয়া প্রয়োজন। সেটা না করে সরকারী টাকা খরচ করে প্রতিবার মাটি কেটে রাস্তা বেঁধে দেয়া হয় আর প্রতিবার তা ভেঙ্গে যায়। এটা কেন যে সরকারী কর্মকর্তারা বোঝেন না, তা জানি না।’
কাজাইকাটা এলাকার ইউপি সদস্য মন্টু মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম জানান, ২০১৩Ñ১৪ অর্থবছরে তেলিপাড়া এলাকায় একই প্রকল্পের ৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ বেঁধে দেয়া হয়েছিল। বর্ষা মওসুমে সেটি ভেঙ্গে প্রায় ১৫টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে নদীতে পরিণত হয়েছে প্রায় একশ’ হেক্টর ফসলি জমি। নিঃস্ব মানুষগুলো এখনও অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাচ্ছে।
রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম জানান, ‘ওটি মৃত নদী। সেটি বেঁধে রাস্তা নির্মাণ করলে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা তো দেখি না। তাছাড়া রাস্তা নির্মাণ হলে ১৫টি গ্রামের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হবে। ওই স্থানে একটি ব্রিজের দাবি করছেন এলাকাবাসী এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে ব্রিজ দেয়া আপাতত সম্ভব নয়। ওখানকার থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে এখনও ব্রিজ হয়নি।