ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাঁপাইয়ে প্রতারণা

অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হায় হায় কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১১ মে ২০১৫

অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হায় হায় কোম্পানি

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ একটি হায় হায় কোম্পানি জনসাধারণকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে রাতের অন্ধকারে অফিস গুটিয়ে পালিয়েছে। ভোলাহাট পুলিশ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হলেও কেউ এখন পর্যন্ত কোন মামলা করেনি। বিকল্প পথে এখনও টাকা উদ্ধারে নানান ধরনের তদ্বির ও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমে প্রতারকদের অথবা তাদের মদদদাতাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে বলে জনৈক কর্মকর্তা (গোয়েন্দা) জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে। শনিবার পর্যন্ত এদের খোঁজ মিলেনি। আর্থিকভাবে খুবই শক্তিশালী একটি এনজিও ভোলাহাট উপজেলার খালে আলমপুর হাইস্কুলের কাছাকাছি একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। ‘পল্লী নারী জাগরণ সংস্থা’ নাম দিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে কয়েক মাস আগে। জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বিলাসবহুল ফার্নিচারসহ অফিস সাজিয়ে এরা প্রতারণায় নামে। প্রথমে তারা জনগণের কাছে গিয়ে ডিপোজিট এ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নানা ধরনের প্রলোভন প্যাকেজ দিয়ে উৎসাহিত করে। পাশাপাশি দিনমজুর শ্রেণীর লোকজনকে লোন দেবার নাম দিয়ে প্রাথমিক সদস্য হবার নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আদায় করা শুরু করে। এইভাবে টাকা ওঠাতে থাকে এবং নির্দিষ্ট তারিখ থেকে জমা দেবার কয়েকগুণ বেশি টাকা লোন দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। অতি সাধারণ মানুষ তাদের এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে টাকা দিতে শুরু করে। নির্দিষ্ট তারিখে এলে নানা ধরনের আশ্বাস দিয়ে নতুন তারিখ বেঁধে দিয়ে ফেরৎ পাঠাতে থাকে। এইভাবে লোন নেয়ার জন্য বার বার এসে ফেরত যাবার পর তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। এভাবে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার পর হঠাৎ করেই ভুয়া এনজিও কর্মকর্তারা পালিয়ে যায়। খবর শুনে শত শত মানুষ যারা টাকা দিয়ে গ্রাহক হয়েছিল তারা ছুটে আসে ভুয়া এনজিও অফিস প্রাঙ্গণে। ততক্ষণে তারা টাকা পয়সা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রামের অসহায় মানুষ যারা অর্থ দিয়েছিল তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়াদের মধ্যে অধিকাংশ অসহায় নারী। তাদের মধ্যে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, চাতাল কন্যা অসহায় গরিব নারীর সংখ্যা বেশি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত মোহাম্মদ রফিক বলেন, তিনি এখন পর্যন্ত কিছুই জানতেন না। তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। চাঁদপুরে কোটি টাকা নিয়ে উধাও ইটভাঁটি মালিক নিজস্ব সংবাদদাতা চাঁদপুর থেকে জানান, সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের পাইকদী খেয়াঘাট সংলগ্ন মেসার্স জননী ব্রিক কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী কেফায়েত উল্যাহ ঢালী (সানু ঢালী) ক্রেতাদের প্রায় কোটি টাকা নিয়ে এক মাসেরও অধিক সময় ধরে লাপাত্তা। ক্রেতাদের পাওনা দিতে না পেরে মোবাইল ফোনও বন্ধ রেখেছেন তিনি। নির্ধারিত সময়ে ক্রেতাগণ ইট না পাওয়ায় প্রতিদিন এসে ভীড় জমাচ্ছে ভাঁটিতে। কিন্তু কোন দায়িত্বশীল লোক না পাওয়ায় ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে। না পাচ্ছে ইট না পাচ্ছে তাদের লাখ লাখ টাকা। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে কথা হয় ইটভাঁটির ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ইট দেয়ার জন্য সানু ঢালী মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তা সত্য। কিন্তু লেনদেন তিনি করেননি। চাঁদপুরে সানু ঢালীর বাসায় এইসব টাকার লেন দেন হয়েছে। তিনি শুধু ইট সরবরাহ করার দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বেশি কিছু জানেননি। বর্তমান এই পরিস্থিতির কারণে তিনি ভাঁটিতে তেমন যান না। আরেক সহকারী ম্যানেজার মজিবুল হক মিজি জানান, আমরা নাম মাত্র দায়িত্ব পালন করছি। সব লেনদেনই করেছেন মালিক সানু ঢালী। তিনি অসুস্থ থাকায় এখন ঢাকায় রয়েছেন। সাংবাদিকদের দেখে তাৎক্ষণিক ভীড় জমায় কিছু পাওনাদার। এদের মধ্যে কাজল তপাদার জানান, সানু ঢালী যে হারে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, ইট উৎপাদন করতে পারলে এই সময় পর্যন্ত সব পাওনাদার তাদের ইট বুঝে পেতেন। কিন্তু ২ রাউন্ড ইট পোড়ানোর পর হঠাৎ তার শ্রমিকরা চলে যায়। এরপর থেকে তিনিও আসেননি ইট ভাঁটিতে। এই অবস্থায় পাওনাদার লোকজন প্রতিদিনই ইটভাঁটিতে আসছেন। এক পাওনাদার চাঁদপুর গোয়েন্দা পুলিশে অভিযোগ দিয়ে সরেজমিন এসে পরিস্থিতি দেখে ফিরে যান। ম্যানেজার দেলোয়ার আরও জানায়, স্থানীয়দের টাকা পয়সার লেনদেন করেছেন সানু ঢালীর ভাগিনা মনির হোসেন (কুট্টু)। সেও বর্তমানে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে গত কয়েকমাস পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য সানু ঢালীর বহু খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী এসব পাওনাদারের দাবি তাদের পাওনা বুঝে পেতে সানু ঢালীকে উপস্থিত করানো হোক। আর ইটভাঁটিতে যেসব ইট বর্তমানে রয়েছে তা সংরক্ষণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×