ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বড় ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ খেলাপীদের সুবিধার জন্য নয়

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১২ মে ২০১৫

বড় ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ খেলাপীদের সুবিধার  জন্য নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক খাতে ৫০০ কোটি টাকা বা এর বেশি অঙ্কের ঋণ রয়েছে এমন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপের ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ খেলাপী গ্রাহকদের সুবিধা দেয়ার জন্য প্রণীত নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, নতুন বৃহদাঙ্ক ঋণ পুনর্গঠন কাঠামোটি স্বভাবগত খেলাপী গ্রাহকদের সুবিধা দেয়ার জন্য প্রণীত নয়। বরং দেশের ক্রমবর্ধিষ্ণু অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অনিচ্ছাকৃত খেলাপী হওয়া বা ঋণ পরিশোধে সাময়িক অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া ভাল ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সচল রাখার ক্ষেত্রে সহায়তার লক্ষ্যে প্রবর্তন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, স্বভাবগত খেলাপীদের বিষয়ে বরাবরই কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে চলতি বছরের মার্চে ভাল ঋণগ্রহীতাদের সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি নির্দেশনা জারি করে। যেখানে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করলে সুদহারে রেয়াত প্রদানের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র এএফএম আসাদুজ্জামান বলেন, সাধারণ মানুষ ও ব্যবহারকারীদের বোঝার স্বার্থে ও তাদের কাছে প্রকৃত বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্যই বিদ্যমান সার্কুলারের বিষয়ে এ ব্যাখা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপের ঋণ পরিশোধে অসুবিধার কারণে বৃহদাঙ্ক ঋণ পুনর্গঠন প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখন প্রথাগত। এ পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটি ঋণগ্রহীতার ব্যবসায় পরিচালনা ও ঋণ পরিশোধের জন্য আয়ের প্রবাহ চালু রাখার জন্য ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে পারস্পারিক সমঝোতা। যেখানে বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিকভাবে ঋণ দায়ের মাত্রা ও পরিশোধ মেয়াদ পুনর্নির্ধারণ করা হয়, যাতে উভয়পক্ষই ঋণগ্রহীতার ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার বৃহত্তর ক্ষতির অবস্থা থেকে রেহাই পায়। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি উৎপাদন, আয় ও কর্মসংস্থান হ্রাসের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়ে উৎপাদনমুখী কর্মকা-ে অবদান রাখতে সক্ষম হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালে দেশব্যাপী অব্যাহত হরতাল-অবরোধে সামগ্রিক অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ব্যবসায় ও শিল্প খাতের উপকরণ ও পণ্যাদির স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। এতে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকা-ে এবং নগদ প্রবাহে সঙ্কট দেখা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালার ডাউন পেমেন্ট ও ঋণ পরিশোধ মেয়াদের নির্ধারিত মাপকাঠি দিয়ে এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ কারণে ২০১৪ সালে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণে ডাউন পেমেন্ট ও ঋণ পরিশোধ মেয়াদের ক্ষেত্রে কিছু সাময়িক নমনীয়তা আনা হয়; যা বৈরী পরিস্থিতিতে ছোটবড় ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক কর্মকা- সচল ও উৎপাদন চালু রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে উৎপাদন ও মূল্যস্ফীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়। প্রসঙ্গত, নতুন নীতিমালায় বলা হয়, বড় ঋণখেলাপীদের সুবিধা দিতে গত ২৯ জানুয়ারি ৫০০ কোটি টাকা বা এর বেশি অঙ্কের ঋণ সর্বোচ্চ ১২ বছরের জন্য ঋণ পুনর্গঠন সুযোগ দিয়ে নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ঋণের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার কম হলে ডাউন পেমেন্ট বা এককালীন জমা দিতে হবে ২ শতাংশ হারে। আর এক হাজার কোটি টাকা ও তার বেশি পরিমাণ ঋণের জন্য এককালীন জমার হার নির্ধারণ করা হয় ১ শতাংশ হারে। তবে এসব ঋণের কিস্তি ও সুদের হার নির্ধারণের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সুদের হার ব্যাংকের তহবিল ব্যয়ের কম হবে না।
×