ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবার ব্লগার খুন!

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ১৪ মে ২০১৫

আবার ব্লগার খুন!

আবারও খুন হলেন একজন ব্লগার। রাজীব হায়দার, অভিজিত রায় ও ওয়াশিকুর রহমানের পর এই তালিকায় এবার যুক্ত হলেন অনন্ত বিজয় দাশ। ঘটনাস্থল এবার সিলেট। আগের আক্রমণ যেভাবে যে কায়দায় হয়েছিল, সেভাবেই হয়েছে অনন্তের ওপর। অনন্ত সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ছিলেন। বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী এই তরুণ লিখতেন মুক্তমনা ব্লগে। বিজ্ঞানবিষয়ক ছোট কাগজ ‘যুক্তি’র সম্পাদনা করতেন। বিজ্ঞানবিষয়ক বইও লিখেছেন। অনন্ত বিজয় দাশ সিলেটে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন। মঙ্গলবার বাসার সামনে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত দুই বছরে অনন্তসহ ৯ ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক বা টুইটারে হত্যাকারীরা হত্যার দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাসও দিয়েছে। এসব স্ট্যাটাসে প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার কথা বলা হয়েছে। অনন্ত বিজয়কেও একই কারণে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই আনসারুল্লাহ বাংলা ৮ নামে একটি টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়, আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইএস এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় অভিজিত রায় হত্যাকাণ্ডের পরও এরাই দায়িত্ব স্বীকার করেছিল। উল্লেখ্য, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে রাজধানীর শাহবাগে মুক্তচিন্তার লেখক ও ব্লগারসহ নতুন প্রজন্মের তরুণরা গণজোয়ার গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলনকে প্রতিহত করতে প্রথম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের একটি সংগঠন ‘হিট লিস্ট’ শিরোনামে ৮৪ ব্লগার ও আন্দোলনকারীর তালিকা প্রকাশ করে। অনন্ত বিজয় দাশ ওই তালিকার একজন। মুক্তমনা ব্লগার হওয়ায় তাকে এর আগে একাধিকবার হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে সম্ভাবনাময় তরুণকে এভাবে খুন করে ফেলে রেখে যাওয়া, মূলত মানুষের নির্বিঘেœ চলাফেরা এবং তাদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিই সামনে নিয়ে এলো। এই হত্যাকা- আবারও প্রমাণ করল জঙ্গী সংগঠনগুলো মুক্তমন, মুক্তচিন্তার মানুষ হত্যার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। সব সময়ই দেখা যায়, এসব ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকটাই নিষ্পৃহ থাকে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরই তাদের যত তোড়জোড়। অভিযোগ রয়েছে, অভিজিত হত্যাকাণ্ডের সময় পুলিশ দর্শকের ভূমিকায় ছিল। অনেক সময় দেখা যায় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলার অভিযোগপত্র দেয়া নিয়ে কালক্ষেপণ করা হয়। এই সুযোগটি নিয়ে জঙ্গী-অপরাধীরা নতুন করে তৎপর হয়। আর মানুষ তখন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। আসলে আইনের শাসন যখন দুর্বল হয়ে পড়ে সমাজে তখন অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়, অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সরকারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজে স্বাধীন মত প্রকাশের বিরোধী শক্তি যে কতটা সংঘবদ্ধ ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে তার সর্বশেষ উদাহরণ অনন্ত বিজয় হত্যাকা-ের ঘটনাটি। জঙ্গীরা যাকে ভিন্নমতের অনুসারী মনে করছে, তার ওপরই হামলে পড়ছে। যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে ওঠার পথে এরা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে একথা সত্য যে, প্রতিক্রিয়াশীল এই গোষ্ঠীগুলোকে বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে। এই সুবিধা নিয়ে এরা নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে। তবে মৌলবাদ দমনে বর্তমান সরকার যে সচেষ্ট নয় তা বলা যাবে না। নানা সময়ে আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে। তবে সর্বক্ষেত্রে পুরোপুরি সফল হয়নি। কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এই ঘৃণ্য অপরাধ ও ঘাতকদের নিবৃত্ত করা যাবে না। এ সবের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জঙ্গীরা হিটলিস্ট ধরে একের পর এক আক্রমণ করে যাচ্ছে, তালিকায় নতুন নাম যোগ করছে। তারা থেমে নেই। জঙ্গীরা দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায়। এই অন্ধকারের অপশক্তিকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। বিষয়টি এখন অত্যন্ত জরুরী হয়ে উঠেছে।
×