ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ শেখ জামাল-আবাহনী জমজমাট লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৪ মে ২০১৫

আজ শেখ জামাল-আবাহনী জমজমাট লড়াই

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ঢাকার ফুটবলে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল ওয়ান্ডারার্স এবং মোহামেডানের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নব্বই দশকের শেষ পর্যন্ত রাজত্ব করেছে মোহামেডান-আবাহনী। প্রতিষ্ঠার মাত্র ছয় বছরের মধ্যে গত চার-পাঁচ বছর ধরেই এককভাবে দোর্দ- প্রতাপ চালিয়ে যাচ্ছে আরেকটি ফুটবল ক্লাব, ‘বেঙ্গল ইয়োলোস’ খ্যাত শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড। তাদের দাপটে অন্যরা আসতে পারছে না ধারে কাছেও! দলবদলের খরচ ও খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক প্রদানের ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছে এ ক্লাবটি। তারা এবার মৌসুম-সূচক ফেডারেশন কাপ জিতেছে। দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই (১৫) জাতীয় দলে খেলেন। কোচ মারুফুল হককে দেয়া হয়েছে লীগ শিরোপা ধরে রাখার দুরূহ কাজটি। তিনি দলকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো করেই গড়ে তুলেছেন। তারই প্রমাণ ‘মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবল আসরে তাদের এখন পর্যন্ত পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষস্থান বজায় রাখা। আজ তারা বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে মাঠে নামবে এমন এক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে, যারা জামালকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। দলটি হচ্ছে গত লীগের রানার্সআপ ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। যদিও এ মুহূর্তে তারা আছে পয়েন্ট টেবিলের পঞ্চম স্থানে। বর্তমানে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে থাকলেও আজকের ম্যাচে জিততে পারলে মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা ও শেখ রাসেলকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে পারবে তারা। জামাল এ পর্যন্ত লীগে খেলেছে ৯ ম্যাচ। জিতেছে ৭টিতেই। ড্র করেছে ২টিতে। এখনও অপরাজিত আছে তারা। ২৩ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে স্থান তাদের। সর্বশেষ ম্যাচে ২-১ গোলে হারিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাকে (অবশ্য এ ম্যাচে তারা ড্র করলে বা হারলেও শীর্ষেই থাকত)। এ জয়ে দুই ম্যাচ পর আবারও জয়ের ধারায় ফেরে দলটি। এছাড়া তারা হারায় ফরাশগঞ্জকে ৪-১, রহমতগঞ্জকে ২-১, ফেনী সকার ক্লাবকে ২-০, চট্টগ্রাম আবাহনীকে ৪-০, টিম বিজেএমসিকে ২-১ এবং শেখ রাসেলকে ১-০ গোলে। ড্র করে ব্রাদার্স (০-০) ও মোহামেডানের (১-১) সঙ্গে। পক্ষান্তরে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনী খেলছে ৮ ম্যাচ। ৪ জয়, ২ ড্র ও ২ হারে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান পাঁচ নম্বরে। তাদের চিরপ্রতিপক্ষ মোহামেডানেরও সমান খেলায় সমান পয়েন্ট। তবে গোলগড়ে এগিয়ে থাকায় ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’রাই আছে চার নম্বরে। আবাহনী চলমান লীগে হারিয়েছে ফেনী সকারকে ৪-০, চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২-০, টিম বিজেএমসিকে ২-০ ও ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ১-০ গোলে। ড্র করেছে দুই ‘গঞ্জ’-এর সঙ্গে (রহমতগঞ্জের সঙ্গে ২-২ এবং ফরাশগঞ্জের সঙ্গে ০-০ গোলে) আর হেরেছে শেখ রাসেলের কাছে ০-২ এবং মুক্তিযোদ্ধার কাছে ০-১ গোলে। সর্বশেষ ম্যাচে ফরাশগঞ্জের সঙ্গে ড্র করায় নিজ দলের সমর্থকদের তীব্র রোষানলের শিকার হতে হয়েছে আবাহনীর ফুটবলারদের। এ নিয়ে টানা দুই ম্যাচ জয়বঞ্চিত আছে গত লীগের রানার্সআপধারীরা। দলের অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানের জন্য দুঃসংবাদÑ নির্ভরযোগ্য হাঙ্গেরিয়ান ফরোয়ার্ড জাবালোস সোর্বা পেটের মাংসপেশীর ইনজুরিতে। দ্রুতই তিনি হাঙ্গেরি ফিরে গেছেন চিকিৎসার জন্য। চলতি মৌসুমের বাকি ম্যাচগুলো আর নাও খেলতে পারেন তিনি। আবাহনীর ১১ গোলের সর্বোচ্চ ৪টিই করেছিলেন এই জাবালোস। অবশ্য স্বদেশী সতীর্থ ফরোয়ার্ড গ্যাবর ডেমিয়েনও করেছেন ৪ গোল। পক্ষান্তরে জামালের নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম ভুগছেন পায়ের ইনজুরিতে। নিজেদের সপ্তম ও অষ্টম ম্যাচে ড্র করে কিছুটা চাপে ছিল তারা। দলের ১৮ গোলের ১২টি-ই করেছেন দুই বিদেশী ফরোয়ার্ড (হাইতির ওয়েডসন এ্যানসেলমে এবং নাইজিরিয়ার এমেকা ডার্লিংটন)। ২০১০ সালে ধানম-ি ক্লাবটি শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব নামে আত্মপ্রকাশ করে। এ পর্যন্ত জিতেছে ৭টি শিরোপা। রানার্সআপ হয়েছে তিনটি আসরে (এর একটি লীগে : ২০১২-১৩)। সাফল্যের ৭টির মধ্যে দুটি হচ্ছে লীগ শিরোপা (২০১০-১১ এবং ২০১৩-১৪)। পক্ষান্তরে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত আবাহনীকে বলা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের ধারক-বাহক। পেশাদার পর্যায়ের প্রিমিয়ার লীগ শুরুর পর এ পর্যন্ত ৭ বারের মধ্যে ৪ বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা (২০০৭, ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১২)। একবার হয়েছে রানার্সআপ (২০১৩-১৪)। গত লীগে হেড টু হেডে উভয় দল মুখোমুখি হয় তিন ম্যাচে। দুটি ম্যাচ ড্র হয় গোলশূন্যভাবে। একটি ম্যাচে জিতেছিল জামাল (১-০, গোলদাতা ওয়েডসন)। এখন দেখার বিষয়, আজকের এই হাইভোল্টেজ ম্যাচে জামালকে হারিয়ে গত লীগের হারের বদলা নিতে পারে কিনা আবাহনী।
×