ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাল বারোটার মধ্যে ‘ধর্ষক’দের গ্রেফতার দাবিতে অভিভাবকদের আল্টিমেটাম

প্রিপারেটরি স্কুলে ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টা, জড়িতকে খুঁজে বের করতে রিট

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৫ মে ২০১৫

প্রিপারেটরি স্কুলে ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টা, জড়িতকে খুঁজে বের করতে রিট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টায় জড়িতকে খুঁজে বের করার নির্দেশনা জারির আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চাওয়ারও আর্জি জানানো হয়েছে রিটে। সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান রুবেল এ রিট দায়ের করেন। এদিকে এ শিশুর ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর আরও দুই শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। আগামীকাল দুপুর বারোটার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে তারা অধ্যক্ষ ও রেক্টরের বিরুদ্ধে শিশুদের মা-বাবাকে জড়িয়ে অশ্লীল গালিগালাজ করার অভিযোগ এনেছেন। অভিভাবকদের টানা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার ধর্ষণ চেষ্টায় জড়িতকে খুঁজে বের করার নির্দেশনা জারির আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে ওই স্কুলের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষা সচিব স্বরাষ্ট্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে আইনজীবী জানান, পত্রিকায় বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হয়। এ সংবাদের ভিত্তিতে রিট দায়ের করা হয়েছে। আগামী রবিবার কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিটের শুনানি হতে পারে বলে ওই আইনজীবী জানিয়েছেন। এদিকে সকালে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা গেছে, এইচএসসি পরীক্ষা চলছে তাই ক্লাস বন্ধ আছে। তবে বাইরে তখনও ছিলেন অভিভাবকরা। তারা অভিযোগ করেন, প্রথম শ্রেণীর শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ করে তার মা-বাবা উপস্থিত হয়ে বিচার চাইলেও অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। বরং কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া অধ্যক্ষ বিশেষত উপাধ্যক্ষ (রেক্টরের দায়িত্বে) জিন্নাতুন্নেসা সকল শিশুর মা-বাবাকে জড়িয়ে অশ্লীল গালিগালাজ করেছেন। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা ঘোষণা দেন শনিবার দুপুর বারোটার মধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ওই সময় থেকেই লাগাতার আন্দোলন শুরু হবে। অভিভাবকরা বলের, যেখানে আমাদের সন্তানরা নিরাপদ নয় সেখানে আমরা যাব না। কর্তৃপক্ষকেও ছাড় দেব না। অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন বলেছেন, প্রথম শ্রেণীর শিশুর বিষয়টিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি স্কুলের কর্মচারী নয়, চলমান নির্মাণ কাজে যুক্ত একজন শ্রমিক। তবে ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই ব্যবস্থা নেব। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে এখানে ট্রাস্টি বোর্ড আছে। তারা সিদ্ধান্ত না নিলে আমরা কিছু করতে পারি না। অধ্যক্ষ জানান, তারা মোহাম্মদপুর থানায় একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। সেখানে বিষয়টিতে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। অভিভাবকদের অশ্লীল গালিগালাজ করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন রেক্টর জিন্নাতুন্নেসা। তিনি বলেন, এটা মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। তবে ঘটনার সময়ে উপস্থিত অভিভাবকরা বলছেন, যে কথা উনি বলেছেন তা মুখে বলার মতো নয়। এদিকে তিন ধরে দুই শতাধিক অভিভাবক কলেজ এলাকায় বিক্ষোভ করছেন। অভিভাবকদের অভিযোগ, ৫ মে প্রিপারেটরি স্কুলের ইংরেজী মাধ্যম শাখার প্রথম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ভয় দেখিয়ে মুখ চেপে ধরে বিদ্যালয়ের পেছনে নির্মাণাধীন ভবনের শ্রমিকদের থাকার একটি কক্ষে নিয়ে যায় এক ব্যক্তি। পরে অন্য ছাত্রীরা চিৎকার করলে শিশুটিকে ছেড়ে দেয় লোকটি। ঘটনার শিকার শিশুটি ভয়ে এ বিষয়ে তার অভিভাবকদেরও কিছু বলেনি। পরদিন শিশুটিকে নিয়ে তার মা স্কুলে এলে শিশুটির অন্য সহপাঠীরা মাকে বলে, ‘আন্টি, ওকে গতকাল ডাকাত ধরেছিল। ছুরি দেখিয়ে ঘরে নিয়ে গিয়েছিল।’ ওই অভিভাবক পরে শিশুটিকে সঙ্গে করে নিয়ে কোন ঘরে তাকে নেয়া হয়েছিল তা ঘুরে দেখেন। এরপর তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে ৯ মে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। ওই ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থাই নেয়নি অভিযোগ করে বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে স্কুল ক্যাম্পাসে দুই শতাধিক অভিভাবক বিক্ষোভ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন এসে অভিভাবকদের শান্ত করেন। বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটার দিকে স্কুলে গেলে বাইরে কয়েক অভিভাবক অভিযোগ করেন, তাদের অভিযোগ কলেজ কর্তৃপক্ষ শিশু ধর্ষণচেষ্টার বিষয়টিকে আমলেই নিচ্ছে না। নয় দিনেও এর কোন প্রতিকার করেনি কর্তৃপক্ষ। শুধু এই শিশু নয়, সম্প্রতি পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণীর আরও দুটি শিশু এ রকম ঘটনার শিকার হয়েছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী নিগ্রহের অভিযোগটি গুজব হিসেবে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন বলেন, অভিভাবকদের ভাষ্যমতে ৫ মে শিশুটি যখন খেলছিল, তখন কে বা কারা তার মুখ চেপে ধরে একটি ঘরে নিয়ে যায়। পরে ছেড়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত শিশুটির কোন ক্ষতি হয়নি। ৬ মে শিশুটি ক্লাসও করেনি। এর পরের দুই দিনেও অভিভাবকরা কিছুই জানাননি। চার দিন পর ৯ মে ওই শিশুটির অভিভাবকসহ আরও কয়েক অভিভাবক বিদ্যালয়ের রেক্টরের কক্ষে গিয়ে মৌখিকভাবে ঘটনাটি জানান এবং ঘটনার বিচার না করলে বিক্ষোভের হুমকি দেন। ওই দিনই কলেজ শাখার শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। অভিভাবকদের প্রতিনিধি রেজাউল হক শিশির বলেন, শনিবারের মধ্যে যদি কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা এই প্রাঙ্গণে অবস্থান শুরু করব এবং দায়িত্বরতদের পদত্যাগের দাবি জানাব। এ সময় যৌন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান অভিভাবকরা।
×