ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সঞ্চয়পত্রের সুদ

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৫ মে ২০১৫

সঞ্চয়পত্রের সুদ

সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর সরকারী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সিদ্ধান্তে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ থেকে প্রায় ২ শতাংশ কমিয়ে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। রবিবার এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, সুদের হার বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বেড়ে যেতে পারে। এতে সরকারের ভবিষ্যত ঋণের বোঝাও বেড়ে যাবে। সে কারণেই সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে সঞ্চয়পত্রের ওপর গ্রাহক-আগ্রহ বাড়াতে সুদের হার বাড়িয়েছিল সরকার। নতুন এই সিদ্ধান্তে আগেরটি আর ধরে রাখা সম্ভব হল না। জানা গেছে, আগে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে সুদ বা মুনাফা ছিল ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ ও তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ সুদ দেওয়া হত। আর তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয় ও ব্যাংক মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের সুদহার ছিল ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। সংবাদটি সাধারণ মানুষের কাছে এক প্রকার দুসংবাদই বলা চলে। সঞ্চয়পত্র হলো মূলত স্বল্প আয়ের মানুষের নির্ভরতার জায়গা। এই আমানত তাকে নিরাপত্তা দেয়। তাই মানুষ রাষ্ট্র তথা সরকারের কাছ থেকেই এই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। এই একটি খাতে সাধারণ মানুষ চোখ বন্ধ করে বিনিয়োগ করে। শেয়ারবাজারে ধস নামার বাস্তবতায় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ প্রধানত সঞ্চয়পত্র খাতের মাধ্যমেই বিনিয়োগ করে থাকে। এটা ঠিক যে, অবরোধ-হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়েছে। মূলত কোন ধরনের ঝুঁকি না থাকায় এবং বেশি লাভের জন্য বহু নাগরিক এ খাতে ঝুঁকেছেন। বিশেষ করে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদের হার কমানোয় এমনটা ঘটেছে। অবসরভোগী চাকরিজীবী, প্রবাসী ও সমাজের বিশেষ জনগোষ্ঠীর ভেতর সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের প্রবণতা বেশি। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ তার সারা জীবনের সঞ্চয়ের বড় অংশ এই খাতেই বিনিয়োগ করে থাকে ঝুঁকিহীনভাবে লাভের আশায়। সরকার নির্ধারিত সুদের হারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যে নাগরিকরা সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, এখন আকস্মিকভাবে সুদের হার কমায় নিশ্চিতরূপেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এটা নিশ্চয়ই সরকারের জন্য সুখকর হবে না। বরং এখন খেলাপী ঋণ আদায়ের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণই যুক্তিযুক্ত। বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এতে উপকৃত হবে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।
×