ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিরক্ষা নীতিতে পরিবর্তন আনতে মন্ত্রিসভায় কয়েকটি বিল অনুমোদন

শান্তিবাদী নীতি ত্যাগ করছে জাপান!

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৫ মে ২০১৫

শান্তিবাদী নীতি ত্যাগ করছে জাপান!

শান্তিবাদী নীতি থেকে সরে আসার পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল জাপান। বৃহস্পতিবার জাপানের মন্ত্রিসভা কয়েকটি বিল অনুমোদন করেছে। বিলগুলো পার্লামেন্টে পাস হলে দেশটির প্রতিরক্ষা নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। এমন এক সময় জাপান পুরনো নীতি থেকে সরে এলো যখন নানা কারণে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। খবর এএফপি ও ওয়েবসাইটের। জাপানের মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার ১০টি পুরনো নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন ও একটি নতুন আইন প্রণয়নের বিষয়টি অনুমোদন করেছে। দেশটির জাতীয়তাবাদী নেতা শিনজো আবে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এটি নিশ্চিত হয়ে যায় যে প্রতিরক্ষা নীতিতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭০ বছর পর এখনও দেশটিতে সামরিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। তা সত্ত্বেও জাপান বেশ দৃঢ়ভাবে পুরনো ধারা থেকে নিজেকে বের করে আনতে শুরু করেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রতিরক্ষা নীতিতে পরিবর্তন নিয়ে জনগণ দ্বিধাবিভক্ত। জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রস্তাবিত পরিবর্তনের বিষয়টি অনেকের কাছে পরিষ্কার নয়। অনেকের শান্তিবাদী নীতি থেকে বেরিয়ে আসা সমর্থন করে না। আবে বরাবর বলে এসেছেন যে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রশ্নে জাপান নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারে না এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ছত্রীর মধ্যেও দেশটি অনির্দিষ্টকাল ধরে থাকবে না। জাপানের সামরিক সরঞ্জামের আধুনিকায়ন ও সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীকে আরও বৃহত্তর ভূমিকায় আনতে গত বছর জুলাই মাসে দেশটির মন্ত্রিসভা প্রথম খসড়া আইনটি অনুমোদন করে। এতে মিত্র দেশের সহায়তায় জাপানী বাহিনীকে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। জাপানের শান্তিবাদী সংবিধানে যে তথাকথিত ‘যৌথ প্রতিরক্ষার’ কথা বলা হয়েছিল আবের আমলে সংশোধিত সংবিধানে সে কথাগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার মুখ্য সচিব ইয়োশিহিদ সুগা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘শান্তি বজায় রাখা এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি দেশের প্রধান দায়িত্ব। আমাদের দেশের চারপাশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। তাই শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার স্বার্থে জাপান-মার্কিন জোটকে আরও শক্তিশালী করা এবং আঞ্চলিক মিত্র দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। আমাদের যেকোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। খসড়া বিলগুলোর উদ্দেশ্য হলো কোন ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতির যেন উদ্ভব না ঘটে তা নিশ্চিত করা।’ জাপানের শান্তিবাদী নীতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত সঙ্গত কারণেই প্রভাবশালী প্রতিবেশী চীনকে ক্ষুব্ধ করবে। চীনের সঙ্গে জাপানের অনেকদিন ধরে পূর্বচীন সাগরে সীমানা বিতর্ক চলছে। এরই মধ্যে টোকিও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয়নীতি পরিবর্তনমূলক সিদ্ধান্তটি নিল। জাপানের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রই এ ব্যাপারে অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর ওয়াশিংটন টোকিওর ওপর অপরিবর্তনীয় সংবিধান চাপিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন চাইছে জাপান দ্বিপাক্ষিক চুক্তি পরিবর্তন করুক। সমালোচকরা বলছেন , এই চুক্তিতে পরিবর্তন আনা হলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে গেলে জাপানকেও তার সহযোগী হতে হবে। চীনের সামরিক উচ্চাভিলাষকে সামনে রেখেই জাপান সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, সমালোচকদের এমন অভিযোগের সঙ্গে একমত নন আবে বা সমর্থকরা। নতুন সংশোধনী শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্টে অনুমোদিত হলে ভবিষ্যতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন অসামরিক মিশনে জাপানি সেনাবাহিনী নিযুক্ত হতে পারবে। বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ার আগে আবের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও কোয়ালিশন শরীক কোমিয়েটো পার্টি এতে সম্মতি দেয় বলে এনএইচকে টেলিভিশন জানিয়েছে। পার্লামেন্টে পাস হতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।
×