ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পহেলা জ্যৈষ্ঠে ভারিবর্ষণ- বজ্রপাতে গাজীপুর ও নেত্রকোনায় হত ৪

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৬ মে ২০১৫

পহেলা জ্যৈষ্ঠে ভারিবর্ষণ- বজ্রপাতে গাজীপুর ও নেত্রকোনায় হত ৪

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীসহ দেশের অনেক জেলায় শুক্রবার মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাজধানীতে রেকর্ড ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি। বজ্রপাতে গাজীপুরে দু’জন এবং নেত্রকোনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৩ জন। পহেলা জ্যৈষ্ঠের ভারি বর্ষণে রাজধানীর অনেক এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নগরীর রাস্তাঘাট ও অলিগলি হয়ে ওঠে কর্দমাক্ত। দুর্ভোগে পড়লেও গত কয়েকদিনের তীব্র গরমের পর স্বস্তি ফিরে পায় রাজধানীবাসী। আজ শনিবারও দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। বয়ে যাবে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, শুক্রবার দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হলেও দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হ্রাস পায়নি। বয়ে যায় মুদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৩৮.৪ এবং সর্বনিম্ন ২৩.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩৪.৫ ও ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যশোর, কৃষ্টিয়া, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীতে অনুভূত হয় কাঠফাটা গরম। ব্যাহত করে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বেলা আড়াইটার পর পাল্টে যায় রাজধানীর আবহাওয়া। আকাশে মেঘের আনাগোনা বেড়ে যায়। নেমে আসে অন্ধকার এবং শুরু হয় মেঘের গর্জন। কিছুক্ষণ পরই নামে ভারি বর্ষণ। ভারি বৃষ্টি চলে টানা দেড় ঘণ্টা। তারপর থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে রাত পর্যন্ত। প্রবল বর্ষণে পথচারীর দুর্ভোগের সীমা ছিল না। হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় প্রস্তুত ছিলেন না কেউ। নিকটস্থ দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রীবাহী যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন লোকজন। সকালের বৃষ্টিহীন পরিবেশ দেখে কেউ ছাতা নিয়ে বের হয়নি। সামনে পেয়েও বৃষ্টির কারণে তাদের কেউ কেউ বাসে উঠতে পারেননি। ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে মগবাজার ও মৌচাক এলাকার একটি বড় অংশে। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা অসংখ্য খানাখন্দ। বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায় সব খানাখন্দ। এসব জায়গায় পা রাখতে গিয়ে অনেক পথচারীই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। শান্তিনগর এলাকার অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা । আর পুরাতন ঢাকার অনেক রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যায়। ফুটপাথের দোকানপাট উঠে যায়। অনেক দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে ভিজে যায় রিকশাযাত্রীদের পা। পানির নিচে থাকা খানাখন্দের ভয়ে পথচারীর চলাচলও কমে যায়। পানির কারণে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় সিএনজি চালিত অনেক অটোরিক্সার। মালিবাগ মোড় থেকে কাকরাইল, শান্তিনগর, রাজারবাগে ফুটপাথে হকারদের পণ্যের বর্জ্যগুলো ছড়িয়েছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়। বৃষ্টি হলে এগুলো ড্রেনের মুখ বন্ধ করে দেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি বলে আক্ষেপ করেন এলাকাবাসী। ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। নয়াপল্টন মোড় থেকে নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত পানি জমে যায়। ফকিরাপুলের বাসিন্দা ইউসুফ মিয়া জানান, কয়েক ঘণ্টার মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেই এই এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যেতে পারি না। বৃষ্টি হলে এখানে হাঁটুপানি জমে যায়। রিকশাচালকরা এ সময় যেতে চায় না। দু’একটি রিকশা পেলেও বেশি ভাড়া চায় বলে জানান ইউসুফ মিয়া। মোঃ হান্নান জানান, বৃষ্টি হলেই রাস্তায় ২/৩ ফুট পানি জমে যায়। তখন অনেক চেষ্টা করেও রিকশা পাওয়া যায় না। পরে অনেক কষ্টে ভিজে ভিজে বাসে উঠতে হয়। ভারি বৃষ্টিতে নিউমার্কেটের এক নম্বর গেটের সামনের সড়কে জমে যায় পানি। নিউমার্কেটের ভেতরে আংশিক এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে নিউমার্কেটের এক নম্বর গেট সংলগ্ন হাঁটারপথে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এভাবে শুক্রবারের বৃষ্টিতে হাজারীবাগের নিম্নাঞ্চল, রাজধানী সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট, ধানম-ির অনেক স্থানেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন লোকজন। পুরান ঢাকা, পীরেরবাগ, সেনপাড়া পর্বতা, শ্যাওড়াপাড়া, আদাবর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, মিরপুর, টিকাটুলি, বাসাব, মুগদা, মধুবাজার, শ্যামলী, রামপুরা, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার অজুহাতে চালকরা অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দেন রিকশা, অটো-সিএনজি ও ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া। নিজস্ব সংবাদদাতা, গাজীপুর থেকে জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে শুক্রবার বজ্রপাতে দু’জন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছে। নিহতরা হলেন শ্রীপুর উপজেলার বেলদিয়া গ্রামের মিয়ার উদ্দিন মেঘুর ছেলে কৃষক নছর উদ্দিন (৬০) এবং ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মধুপুর গ্রামের আহাম্মদ আলীর ছেলে ক্ষেতমজুর ছফির উদ্দিন (৩৫)। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক শারমিন জেরিন জানান, শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে শ্রীপুর উপজেলার বেলদিয়া গ্রামের ধানক্ষেতে কাজ শেষে জমির পাশে বসে পাঁচজন একত্রে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাতে তারা আহত হন। তাদের স্থানীয় কাওরাইদ নিউ লাইফ ডায়াবেটিক সেন্টারে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে নছর উদ্দিন ও ছফির উদ্দিনকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। আহতদের স্থানীয় নিউ লাইফ ডায়াবেটিক সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহতরা হলো মোঃ শাহজাহান (৩৫), আহাম্মদ আলী (৪৫) ও রজব আলী (৩৫)। নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা থেকে জানান, শুক্রবার জেলার আটপাড়া ও কেন্দুয়া উপজেলায় পৃথক দু’টি বজ্রপাতের ঘটনায় এক স্কুলছাত্রসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের রূপচন্দ্রপুর গ্রামের ইঞ্জিল মিয়া (৪০) শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে প্রবল বৃষ্টির সময় ক্ষেতের ধান কাটছিলেন। এ সময় আকস্কিক বজ্রপাতে তার সারা শরীর ঝলসে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে আটপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে বজ্রপাতে কেন্দুয়া উপজেলার গ-া ইউনিয়নের কাওড়া গ্রামে শহীদুল্লাহ(১৩) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। সে ওই গ্রামের হাফেজ হাবিবুর রহমানের ছেলে। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র শহীদুল্লাহ বাড়ির সামনে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করছিল। এ সময় বজ্রপাতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়। পরে ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিৎিসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
×