ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাসীর মামুন

নিত্য লড়াইয়ে শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৭ মে ২০১৫

নিত্য লড়াইয়ে শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত। বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান, বাঙালী মানস বনাম পাকিস্তানী মানস। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও বাঙালী মানসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। লক্ষ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা, জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে নিত্য লড়াইয়ে অবতীর্ণ তিনি। আজ পড়–ন ১৬ মে’র চতুরঙ্গ পাতার পর... শান্তিচুক্তি করার পর গঙ্গার পানিচুক্তিও ছিল শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের একটি বড় ধরনের সাফল্য। সীমান্ত প্রতিবেশীদের বদলানো যায় না- এই সত্য মেনে সীমান্ত প্রতিবেশীদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিও একটি বড় পদক্ষেপ। আরেকটি বিষয় হলো, অর্ধশতকের পূর্ব ধারণা থেকে বা মাইন্ডসেট থেকে বেরিয়ে আসা। ৫০ বছর ধরে আমাদের এ কথাই বোঝানো হয়েছে যে, ভারত হিন্দু রাষ্ট্র, তাই মুসলমানদের মানে আমাদের শত্রু। বাংলাদেশের অনেক মানুষ তা বিশ্বাস করতেন। তাই ভারতের সঙ্গে দুটি বিষয়ে সমঝোতা ছিল সাহসের ব্যাপার। কেননা, তা ছিল সাম্প্রদায়িকতা থেকেও বেরিয়ে আসার চেষ্টা। এ ঘটনা ঘটেছিল ১৮ বছর আগে। খালেদা জিয়া তখনও বলেছিলেন, ফেনী থেকে খাগড়াছড়ি ভারতের হয়ে গেল। এও বলেছেন, হাসিনা ক্ষমতায় গেলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে। একজন মহিলা, একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, একজন রাজনীতিবিদ হয়ে তিনি তখন থেকে যে ধরনের মিথ্যাচার করেছেন, ইসরাইলী কোন রাজনীতিবিদও এমন মিথ্যা বলেননি। এ ধরনের মিথ্যাচার রাজনীতি নয়, মানুষকে বিভ্রান্ত করাও রাজনীতি নয়। এগুলো নষ্টামি। কিন্তু মনে রাখতে হবে আমাদের এলিট সমাজের বড় অংশ, যার মধ্যে মিডিয়াও অন্তর্গত, এই নষ্টামি পছন্দ করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে সব ডানপন্থী একত্রিত হয়ে জোর করে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে নারকীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা ভুলে যাওয়া অপরাধ। পত্রিকা যাদের সুশীল সমাজ বলে বা এলিটরা, যারা কথায় কথায় রক্ষীবাহিনী ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা তোলেন, সেই সব ব্যক্তি কিন্তু ঐ পাঁচ বছরের অত্যাচার নির্যাতনের কথা বেমালুম ভুলে যান। না, এটিতে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। তাদের এইসব পদক্ষেপ বরং তাদের নষ্ট চরিত্র পরিস্ফুট করছে। বিএনপির সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং যে অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য, তা’হলো গোলাম আযম-নিজামী বা জামায়াত বা ১৯৭১ সালের খুনীদের ক্ষমতায় বসানো। বিশ্বে এ ধরনের ঘটনা কখনও ঘটেনি। কিন্তু তাও এলিট ও মিডিয়া দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ মেনে নিয়েছিল। একটি বিষয় এখনও আমাকে অবাক করে, হয়ত আমি খানিকটা নির্বোধ দেখে যে, ২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন দখল করল তখন বাংলাদেশে ১৩ জন ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়নি। সেই ১৩ জনের মধ্যে ছিলেন কবীর চৌধুরী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অজয় রায়, বিচারপতি কেএম সোবহান, হাশেম খান, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শাহরিয়ার কবির প্রমুখ। এরপর সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষে রামেন্দু মজুমদার ও নাসিরুদ্দীন ইউসুফ একটি নমনীয় বক্তব্য দেন। আর কেউ নন। যারা এই প্রতিবাদটুকু করার সাহস দেখিয়েছিলেন যখন আওয়ামী লীগও হতবিহ্বল, তারা সরকারের আনুকূল্য পেয়েছেন, তা বলব না। অজয় রায় তো পুত্রহারাই হলেন। আমরা জেলে গেলাম। অধিকাংশ মিডিয়া সেই দখল হওয়া নির্বাচনের চরম প্রশংসা করেছে। এমনকি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি যাদের খানিকটা আলাদা ভাবা হতো, তারাও উচ্চকণ্ঠে প্রশংসা করেছে। হেনা দাস আমাদের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করায় তাকে তিরস্কার করা হয় ও স্বাক্ষর প্রত্যাহার করানো হয়। এ কারণে বলি, এ দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে হেজাবি লুকিয়ে আছে। আজ যেসব সাংবাদিক নেতা প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পান, তাদের কেউ মুরোদ দেখাতে পারেননি। স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করা তো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক ধরনের সাবোটাজ। এটি কেন গ্রহণযোগ্য হলো গণতন্ত্রের নামে? আজকে যেসব খচ্চর নির্বাচনে গণতন্ত্র পরাজিত হয়েছে বলে বড় কথা বলেন, তাদের কেন তখন মনে হয়নি স্বাধীনতা বিসর্জিত হচ্ছে? এটি গণতন্ত্র নয়। এটি গণতন্ত্র হলে ইউরোপে নাজি দল অক্ষুণœ থাকত, তাদের নির্বাচন করতে দেয়া হতো। কিন্তু গণতন্ত্রের নামে এসব অনাচার নষ্টামি প্রশ্রয় দিয়েছে সমাজের একটি বড় অংশ। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও যোদ্ধাদের প্রতিও চরম অপমান। তখনও অনেক বীরবিক্রম বীরের ভঙ্গি করে ১৯৭১-এর খুনীদের সঙ্গে কোলাকুলি করে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেছেন। বাইরে আবার মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জাহির করতে চেয়েছেন। আরও অবাক লাগে, আমরা না হয় নষ্ট হয়ে গেছি, দেখি এ খচ্চরগুলো পুষেছি কিন্তু তাই বলে নতুন প্রজন্ম! এখানেই আসে মনোজগতে আধিপত্যের কথা যা আমি বারবার লিখছি। এদেরই বলেছি, বাধ্য হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া। কেননা, মুক্তিযুদ্ধ ছিল তাদের কাছে নিজের চামড়া বাঁচানোর জন্য নিছক যুদ্ধমাত্র। অন্যান্য দেশে মানুষের বাচ্চারা চিন্তা করতে পারে না, খুনী বা মানবতাবিরোধীদের সমর্থন দূরে থাকুক, গণতন্ত্রের নামে এদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করা। বাংলাদেশে তা ঘটেছে। নষ্ট মানুষ না বলে ঐসব খুনী ও তাদের সমর্থকদের সম্মান করা হয়েছে। কিন্তু এই নষ্টরাই তখন সব অধিকার হরণ করেছিল এবং এই নষ্টদেরই গণতন্ত্র রক্ষার নামে বন্দনা করেছে মিডিয়ার একটি বড় অংশ। যখন দেশের মানুষ মার খেতে খেতে বুঝল যে ঘটি-বাটি, স্ত্রী-কন্যা রক্ষা করা যাচ্ছে না তখন মিডিয়ার সেই সব পুরুষ, এনজিওর সেই সব বড় ভিক্ষুক, সুশীল ঠাকুররা হঠাৎ ‘নিরপেক্ষ’ হয়ে গেল। কিন্তু সত্য হলো, এই নষ্টামি, বাস্তবতায় এবং তা গ্রহণ করাতে পেরেছিলেন খালেদা-নিজামী। এটি মনোজগতে তারা গেঁথে দিতে পেরেছিলেন যে, ১৯৭১ এমন কোন বিষয় নয় যার ভার বহন করতে হবে। এটি মনোজগতে গেঁথে দিতে না পারলে তো তাদের অস্তিত্ব থাকত না। (চলবে)
×