ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাতক্ষীরার আম আজ যাচ্ছে লন্ডনে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৭ মে ২০১৫

সাতক্ষীরার আম আজ যাচ্ছে লন্ডনে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ বাংলাদেশ থেকে আমের প্রথম চালান যাচ্ছে লন্ডনে। রাত সাড়ে আটটায় এমিরেটস-এর একটি কার্গো ফ্লাইটে আমের এই চালান পাঠানো হচ্ছে। হজরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এমিরেটসের কার্গো ফ্লাইটে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে আম পাঠানোর সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এমিরেটস সূত্রে জানা যায়, প্রথম চালানে যাচ্ছে মোট ৬২৫ কেজি ওজনের ৫০০টি বাক্স। আগামী সপ্তাহে যাবে আরও ১৫শ’ কেজি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, প্রথমবারের মতো আমের যে চালান পাঠানো হচ্ছে তার সবই সাতক্ষীরায় উৎপাদিত। ক্রমান্বয়ে দেশের অন্যান্য এলাকা যেমন মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত অন্যান্য জাতের আমও পাঠানো হবে। এ বারের পুরো মওসুমে মোট ৮৫ টন আম পাঠানোর প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা কম-বেশি হতে পারে। এ মওসুমে শুধু ল্যাংড়া ও আম্রপালি পাঠানো হবে। এরপর প্রতি সপ্তাহে চার মণ করে অন্য জেলার আম যুক্তরাজ্যের বাজারে রফতানি হবে। এরই মধ্যে ওয়ালমার্টের কাছে দেশের ৭ জেলার নয়টি উপজেলার ১৮০ জন আমচাষী নাম লিখিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে আম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও পাঠানো হবে। জানা যায়, ঢাকা থেকে আমের এই চালান নিচ্ছে পৃথিবী খ্যাত চেন মার্কেট ওয়ালমার্ট। গত এক বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) এর সহায়তায় আম আমদানি করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ থেকে আম রফতানির ব্যাপারে বিশ্বের শীর্ষ পণ্য ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল প্রকিউরমেন্ট লজিস্টিকসের সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন ও এফএওর একটি চুক্তিও সই হয়েছে। আম রফতানির খবরে হজরত শাহ জালাল বিমানবন্দরেও বেশ আলোচনা চলে। আমের প্যাকেটগুলো কার্টনে ভরে শিপমেন্ট করার সময় একজন বিমানকর্মী কৌতূহলী প্রশ্ন রাখেন, লন্ডনে এ আম কত করে বিক্রি হবে। সাতক্ষীরার বাগান থেকে তো এ আম কেনা হয়েছে মাত্র ৬০ টাকা কেজিতে। এত টাকা উড়োজাহাজ ভাড়া দিয়ে লন্ডন পাঠানো হলে সেটা কত বিক্রি করলে লাভ হবে। এমন প্রশ্নই উচ্চারিত হয়েছে কার্গো হাউসে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লন্ডনে ওয়ালমার্টের যে কোন পণ্য পৃথিবীর সেরা দাম পেয়ে থাকে। সে হিসেবেই এ আমও পাবে দাম। ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ৩ দশমিক ৭ পাউন্ড (বাংলাদেশী মুদ্রায় সাড়ে ৪শ’ টাকা)। এদিকে হঠাৎ কেন বাংলাদেশের আমের প্রতি ওয়ালমার্টের এত আগ্রহ জানতে চাইলে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত জনকণ্ঠকে বলেন, অবশ্যই এক বাক্যে বলতে হবে আমের কোয়ালিটি। ওয়ালমার্ট তো নিশ্চয়ই কোন টক আম কিনবে না, খেতে সুস্বাদু এবং ঘ্রাণে তীক্ষè আমের প্রতিই আগ্রহ তাদের। এতে দেশী মার্কেটে কি ধরনের প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যদি বড় ধরনের রফতানি করা হয়, তাহলে দেশীয় মার্কেটে কিছুটা দাম বাড়বে। সাধারণ মানুষের পক্ষে কিছুটা বেগ পেতে হবে। যদি রফতানির পরিমাণ কম হয় সেটা মার্কেটে তেমন প্রভাব পড়বে না। বরং দেশীয় উৎপাদন বাড়বে। গুণগত মানসম্পন্ন আম উৎপাদনের প্রতি মানষেুর আগ্রহ বাড়বে। জানা যায়, গত বছর ওয়ালমার্টের প্রতিনিধিসহ একটি বিদেশী দল রাজশাহী সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি জেলায় উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে দেখার জন্য সরেজমিন পরিদর্র্শন করে। এ সময় আমে কোন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করা হয। তারপর ওই আম জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে এ সব আম নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার পর ওয়ালমার্টে রফতানির অনুমতি পায়। জাতিসংঘের কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও-এর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম আম উৎপাদনকারী দেশ। দেশে এখন প্রায় দেড় কোটি আমগাছ রয়েছে। বর্তমানে আম উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশ ভারত। এরপরেই রয়েছে চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। আর আম রফতানিকারক দেশের শীর্ষে আছে মেক্সিকো। এর পরেই রয়েছে ফিলিপিন্স, পাকিস্তান, ব্রাজিল ও ভারত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে, বাংলাদেশে গত বছর ৯ লাখ ৪৫ হাজার টন আম উৎপাদন হয়েছে। এ বছর ১০ লাখ টন ছাড়াবে। বিশ্বের আম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হারে আমের ফলন বাড়ছে। ২০১২ সালে দেশে ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এ বছর আম চাষ হয়েছে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ৮ লাখ ৯০ হাজার টন আম উৎপাদন করে বিশ্বের অষ্টম আম উৎপাদনকারী দেশ হয়েছিল। গত দু’বছরের মধ্যে দেশে আমের উৎপাদন বেড়ে তা ১০ লাখ টন হয়েছে। আগামী বছর সেটা ১২ লাখ টনে পৌঁছতে পারে। আগামী এক দশকে সেটা ৫০ লাখ টন উৎপাদন করার টার্গেট রয়েছে।
×