ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেহাল ও বেদখল খাল

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৮ মে ২০১৫

বেহাল ও বেদখল খাল

রাজধানীর খাল দখলমুক্ত করার নামে ওয়াসা চালিয়ে যাচ্ছে বহুমুখী বাণিজ্য। অথচ এসব খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ওয়াসার নিয়মিত কাজ। অপসারণের জন্য বাজেটও বরাদ্দ রয়েছে। সে খাতেও দেখানো হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়। অন্যদিকে ওয়াসার এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় খালের ওপর নির্মিত হয়ে চলেছে অবৈধ স্থাপনা। স্থাপনায় উদ্ধার অভিযান চালানোর তোড়জোড় শুরু হলে অবৈধ দখলদারদের কাছে সে খবর পৌঁছে যায়। জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ঢাকার খাল পুনরুদ্ধার নিয়ে ওয়াসার নানা কা-কারখানার বিবরণ। অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকদিনের মধ্যে আবার পুরনো বৃত্তে ফিরে আসছে সব। সরকারী অর্থ খরচ করে স্বল্পকালের জন্য খালকে মুক্তি দেয়া হয় মাত্র। বাকি সময় খাল ঢাকা থাকে অবৈধ স্থাপনার নিচে অথবা চলে যায় প্রভাবশালীদের দখলে। প্রশ্ন হলো, ঢাকার খাল, জলাভূমি সংরক্ষণের দায়িত্বটা কার? আইন অনুয়ায়ী ওয়াসার দায়িত্ব বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পয়োবর্জ্য শোধন করে নদীতে ফেলা। বিআইডব্লিউটিএ-এর দায়িত্ব নদীপথের ঘাটগুলো পরিচালনা ও সংরক্ষণ এবং নদীপথ সচল রাখা। স্ব-স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করলেই সমস্যার উদ্ভব ঘটার কথা নয়। এক সময় ঢাকা শহরে অনেক খাল ছিল। মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে খালগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখত। কিন্তু শহর সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ খাল ভরাট করে ফেলা হয়েছে। কিছু খাল চলে গেছে দখলদারদের পেটে। সেই খাল দখলমুক্ত করার খবর মাঝে-মধ্যে অবশ্য সংবাদপত্রে দেখা যায়। কিন্তু এরপর আবার একই অবস্থা। আবর্জনার স্তূপের কারণে খালের পানি প্রবাহ প্রায় রুদ্ধ। নগরীর পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ খালগুলো। অথচ বর্ষায় ঢাকার জলজট নিরসনের স্বার্থে খালগুলোর স্বাভাবিকতা ছিল অপরিহার্য। শুষ্ক মৌসুমে খালগুলো সংস্কার করে পানি প্রবাহের উপযোগী করা দরকার। দখল ও দূষণরোধ না করলে অবশিষ্ট খালগুলো যে হারিয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। উল্লেখ্য, রাজউক, সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা পৃথকভাবে ২০ দফা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েও কল্যাণপুর খালটি রক্ষা করতে পারেনি। ওই খালটিতে ২০০৭ সালেই ১১ দফা অভিযান চালিয়ে পুরোপুরি দখলমুক্ত করা হয়। পরে জবরদখলকারীদের দৌরাত্ম্যের কাছে সবকিছুই নিষ্ফল হয়ে পড়ে। পরিবেশবিদরা মনে করেন, খাল বাঁচাতে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা দরকার। ঢাকার আর একটি খালকেও মরতে দেয়া যাবে না। খাল না থাকলে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় ভুগবে নগরবাসী। খালগুলো দখলমুক্ত করে এর পানি প্রবাহ আগের মতো স্বাভাবিক করতে পারলে ঢাকার জলাবদ্ধতা অনেকটা দূর হবে। অনেকটা বাসযোগ্য হবে ঢাকা। বাসযোগ্য ঢাকার স্বার্থে বেহাল খালগুলোর সংস্কার এবং বেদখল খালগুলো দখলমুক্ত করার আবশ্যকতা বার বার উচ্চারিত হয়ে থাকে। সম্প্রতি একাধিক মন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা রাজধানীর কয়েকটি খাল পরিদর্শন করে এসেছেন। আমরা এবার আশা করতে পারি ভাল কিছুর। আর দেরি নয়, সময় এসেছে এ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের।
×