ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণের উন্নয়নে চাই উত্তরের সহযোগিতা ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৮ মে ২০১৫

দক্ষিণের উন্নয়নে চাই উত্তরের সহযোগিতা ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ॥ অপর্যাপ্ত সম্পদ, অবকাঠামো, আর্থিক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বাধায় দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোর কাক্সিক্ষত অগ্রগতি পাচ্ছে না মন্তব্য করে এ বাধা কাটিয়ে উঠতে উত্তরের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার ঢাকার একটি হোটেলে ‘২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডায় দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিমুখী সহযোগিতা : দক্ষিণের উন্নয়নে অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দক্ষিণের দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, “সম্পদের সীমাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধা, দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা, অকার্যকর আইনী ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধের মতো সমস্যার কারণে দক্ষিণের দেশগুলোর পক্ষে এককভাবে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।” তবে উত্তরের দেশগুলোর সহযোগিতা পেলে এসব বাধা অনেকাংশে দূর করা সম্ভব বলে তিনি মতো প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য দক্ষিণের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত সেন্টার অব এক্সিলেন্স দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার গুণগত সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।” তিনি বলেন, দক্ষিণের দেশগুলোকে তাদের উন্নয়নের অর্থ যোগানের জন্য উপায় খুঁজতে হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে উত্তরের ধনী দেশগুলো যে উন্নয়ন সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা যেন কোনভাইে ব্যাহত না হয়। দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে আরও সহযোগিতা চাই। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, উচ্চশিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, এফডিআই, পুঁজিবাজার উন্নয়ন, বিশ্ববাজারের জন্য মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আমরা দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে আরও সহযোগিতা চাই।” দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে ঘিরে সম্প্রতি যে ‘উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে’ তা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। ঢাকায় দুই দিনের এই উচ্চপর্যায়ের সভা উন্নয়ন সহযোগিতার একটি কার্যকর কৌশল হিসেবে দক্ষিণ ও উত্তরের মধ্যে সেতুবন্ধ স্থাপন করতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। “যতই সময় গড়াচ্ছে, নতুন নতুন সহযোগিতার বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে অব্যাহত অগ্রগতির ফলে দক্ষিণের দেশগুলোতে বিরাজমান দারিদ্র্য, সাবেকি আমলের প্রযুক্তি, কৃষি ও শিল্পে নি¤œ উৎপাদনশীলতা, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা এবং পারস্পরিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার অভাব কাটিয়ে ওঠার আকাক্সক্ষা নতুন প্রেরণা পাচ্ছে।” শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে আরও সহযোগিতা চাই। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, উচ্চশিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিদেশী বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার উন্নয়ন, বিশ্ববাজারের জন্য মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আমরা দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে আরও সহযোগিতা বাড়াতে চাই।” ঢাকা সম্মেলনের সুপারিশমালা ‘উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন’ বিষয়ক তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন। পরে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের বার্তা পড়ে শোনান বাংলাদেশে এ বিশ্ব সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি রাবার্ট ডি ওয়াটকিন্স। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট স্যাম কুটেসার বার্তা পড়ে শোনান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আশরাফুল ইসলাম। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন কমিটির সভাপতি এ কে আবদুল মোমেন, জাতিসংঘে দক্ষিণ আফ্রিকার স্থায়ী প্রতিনিধি জেরিমিয়া নায়ামানে কিংসলে মামাবোলো, গায়ানার স্থায়ী প্রতিনিধি জর্জ উইলফ্রেড ট্যালবট, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতায় জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ইয়াপিং ঝু, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা- ওইসিডির উপ-মহাসচিব রিনতারো তামাকি উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×