ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সময়ের আগেই আসছে বর্ষা, তবে বৃষ্টি কম হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৮ মে ২০১৫

সময়ের আগেই আসছে বর্ষা, তবে বৃষ্টি কম হতে  পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশে ঢুকে যেতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা)। তবে, আবহাওয়া অফিস জানায়, আগাম বর্ষায় কম বৃষ্টি হতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুটি দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এটি উত্তরে মোড় দিয়ে টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে। ভারতেও এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই মৌসুমী বায়ু ঢুকতে যাচ্ছে বলে ভারতীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, জুনের প্রথমার্ধে দেশে বর্ষা আসে কিন্তু এবার জুনের আগেই বাংলাদেশে বর্ষা প্রবেশ করতে পারে। তাছাড়া এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। অন্তত একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। মে মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী ৩০ মে নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগেই বর্ষা আসতে চলেছে। আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই আন্দামান উপকূল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বর্ষা নামার সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে নির্ধারিত সময়ের আগে বর্ষা এলে আন্দামানে তাড়াতাড়ি বর্ষা আসার সম্ভাবনা থাকে। বর্ষা সময়ের আগে এলেও স্বাভাবিকের থেকে কম বৃষ্টিপাত হবে। গত বছর নির্ধারিত সময়ের চারদিন পর বর্ষা এসেছিল। সূত্র বলছে, আগাম বর্ষায় বৃষ্টি কম হয়। এদিকে প্রশান্ত মহাসাগরে ‘এল-নিনো’র আশঙ্কা যত বাড়ছে তত ঘনীভূত হচ্ছে সেই শঙ্কা। ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণ, নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দেশের মূল ভূখ-ে ঢুকে পড়বে। কেরলে সাধারণত বর্ষা ঢোকে ১ জুন। এবার পূর্বাভাস, বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে ৩০ মে থেকেই। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে ভারতে ঢোকে। কেরলে বৃষ্টি নামানো শাখাটি আরব সাগর শাখা নামে পরিচিত। আর বঙ্গোপসাগর শাখাটি যাত্রা শুরু করে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বৃষ্টি নামিয়ে। এই শাখাটি সাধারণত ২০ মে নাগাদ আন্দামানে ঢোকে। সেটিও সময়ের কিছু আগেই বর্ষায় বৃষ্টি নামিয়ে দেবে বলে মনে করছে ভারতীয় আবহাওয়া অফিস। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন অংশের আবহাওয়ার পরিস্থিতি দেখে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, তিন-চার দিনের মধ্যেই সেখানে মৌসুমী বায়ু পৌঁছে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আন্দামানে দ্রুত বর্ষা ঢুকলে পশ্চিমবঙ্গেও তাড়াতাড়ি বর্ষা ঢুকে যাবে, এমনটা সরলীকরণ করা সম্ভব নয়। এতটা পথ অতিক্রম করার মাঝে মৌসুমী বায়ু কতটা সক্রিয় থাকে, কোন নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত তার পথ রোধ করে দেয় কিনা, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। অন্তত জুন না এলে বাংলায় বর্ষা আসার দিনক্ষণ নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। আলিপুর অফিসের আবহাওয়াবিদরাও মৌসুমী বায়ুর এমন আগেভাগে এসে পড়ার খবরে বিশেষ উচ্ছ্বসিত নন। এদিকে আমেরিকার আবহাওয়া দফতর স্পষ্ট জানিয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরের জলতলের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে দুর্বল ‘এল-নিনো’ অবস্থা তৈরি হয়েছে। দিন যত এগোবে ‘এল-নিনো’ ততই নিজের আসল চেহারা দেখাতে শুরু করবে। গোটা ২০১৫ ধরেই ‘এল-নিনো’ পরিস্থিতি চলতে পারে বলে মনে করছেন তারা। সেক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে জলীয়বাষ্পে টান পড়বে। বাধা পড়বে নিম্নচাপ তৈরিতে। ফলে দুর্বল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা মৌসুমী বায়ুর। ঢাকার আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এল-নিনো শক্তিশালী থাকায় দেশে কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এল -নিনো নেগেটিভ দিকে অর্থাৎ লা-নিনার দিকে মোড় না নিলে প্রত্যাশিত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে না। আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি নিয়ে বিপাকে রয়েছে আবহাওয়া অফিসও। সম্প্রতি রাজধানীতে কিছ বৃষ্টি হলেও দেশের অধিকাংশ এলাকা খরায় পুড়ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে দেশের অনেক অঞ্চলে স্বাভাবিক চাষাবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ‘এল -নিনো’র প্রভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। গত মাসে ‘এল-নিনো’ নিরপেক্ষ অবস্থায় অবস্থান করে। বর্তমানে এটি শক্তিশালী রয়েছে। এমন অবস্থায় থাকলে প্রত্যাশিত বৃষ্টি হবে না। ‘এল-নিনো’ লা-নিনার দিকে মোড় নিলে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। সব কিছু নির্ভর করছে আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতির ওপর।
×