ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৯ মে ২০১৫

আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

বাংলানিউজ ॥ দেশের ৯৯ শতাংশ এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। দেশে থ্রিজি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। ফোরজি প্রযুক্তিও অচিরেই চালু করা হবে। উন্নত বিশ্বে যত আধুনিক প্রযুক্তি আসবে বাংলদেশে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে। বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবসের অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উদযাপন ও আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রেখে যাওয়া অচলবস্থা কাটিয়ে তুলে আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর বাস্তবায়ন শুরু করি। আমরা পৃথকভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করি। দেশের তথ্য-প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে একত্রিত করে একক মন্ত্রণালয় গঠন করি। টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তির সুফল দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে দিতে আমরা ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় মোবাইল ও ল্যান্ডফোনের গ্রাহক সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি; যা এখন বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় সাড়ে ১২ কোটিতে পৌঁছেছে। জনগণ শুধু ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার মোবাইল সিম ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, বিএনপির আমলে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০ লাখ। বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। গত সাড়ে ছয় বছরে ইন্টারনেট ডেনসিটি ২.৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি পেয়ে এখন ২৭.৪২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। টেলিডেনসিটি আড়াইগুণ বেড়ে এখন ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আজ দেশের ৯৯ শতাংশ এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায়। দেশে থ্রিজি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। ফোরজি প্রযুক্তিও অচিরেই চালু করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়টি যেটি ঠিক করা হয়েছে তা আমি সমর্থন করি। সেই সঙ্গে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য গ্রহণের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু আমাদের স্বাধীনতাই দেননি, সেই সময় থেকেই আমাদের দূরদর্শী করে তুলেছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ১৬ কোটি নাগরিকের মধ্যে বিদেশে থাকেন ৯০ লাখ। এর বাইরে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১২ কোটি ৪৭ লাখ ৪ হাজার ৮শ’র মতো মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছেন। আমরা বাঙালীরা কথা বলতে পছন্দ করি। আমাদের সরকার সে ব্যবস্থা করে দিয়েছে। দিনে দিনে কথা বলার খরচও কমছে। এছাড়া দেশে চার কোটি ৫৬ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে ইন্টারনেট সহজলভ্য করার কোন বিকল্প নেই। এজন্য আমরা ইন্টানেটের মূল্য কমিয়েছি। প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের মূল্য ২৭ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে সর্বনিম্ন ৬১২ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। এছাড়া সরকারের আইসিটি বিভাগ একটি বেসরকারী মোবাইল অপারেটর এবং ফেসবুকের সহায়তা নিয়ে বিনা পয়সায় ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে। একটি এ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমরা সাবমেরিন কেবলের ক্যাপাসিটি ২০০ জিবিপিএস পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছি। ইন্টারনেট ক্যাপাসিটি আরও বৃদ্ধি করতে আমরা দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ সংযোগের কাজ চলমান রয়েছে। আশাকরি, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে বাংলাদেশে প্রায় এক হাজার ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ অর্জন করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষার ফল প্রকাশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, কেনাকাটাও করা যাচ্ছে অনলাইনে। এমনকি কোরবানির গরুও ঘরে বসে অনলাইনে কেনা যাচ্ছে। বিল দেয়া যাচ্ছে অনলাইনে। কৃষকরা মোবাইল ফোনে ছবি তুলে তার কৃষি সমস্যার জন্য বিভিন্ন সেবা পাচ্ছে। শুধু নির্দিষ্ট কোন সেক্টর নয়, সব সেক্টরেই মানুষ তথ্য-প্রযুক্তি সেবা পাচ্ছে। মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আউটসোর্সিং খাতে বাংলাদেশ তৃতীয়। আর সামগ্রিক তথ্য প্রযুক্তিখাতে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি বড় স্থানে রয়েছে। এছাড়া আগামী তিন বছরে আরও ১০ শতাংশ দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ এমপি, বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস। সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মোঃ ফয়জুর রহমান চৌধুরী।
×