ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনলাইনে রমরমা শিক্ষাবাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২০ মে ২০১৫

অনলাইনে রমরমা শিক্ষাবাণিজ্য

ইন্টারনেটে বিশাল শিক্ষা সাম্রাজ্য খুলে বসেছে কিছু কিছু কোম্পানি। হাজার ইউনিভার্সিটি ও হাইস্কুল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম বেশ চিত্তাকর্ষক। নামীদামী প্রফেসররা এখানে শিক্ষাদান কাজে নিয়োজিত আছেন। দেখা যায় তারা কোন আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে পড়াচ্ছেন। আকর্ষণীয় এ বিজ্ঞাপনগুলোর উদ্দেশ্য অনলাইনে একটি ডিগ্রি নেয়ার জন্য প্রলুব্ধ করা। নার্সিং থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সব রকম ডিগ্রির পসরা খুলে বসে আছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বিজ্ঞাপনের প্রকাশভঙ্গি খুবই আকর্ষণীয়। কোন কোন বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সিএনএনের আইরিপোর্ট ওয়েবসাইট জুড়ে দেয়া হয়েছে। কোনটার সঙ্গে শিক্ষামূলক ভিডিও, কোনটার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সত্যায়িত সার্টিফিকেট এমনটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিরও স্বাক্ষর রয়েছে কোনটির সঙ্গে। এমন কি ৫ হাজার ডলারেও ডক্টরেট ডিগ্রীর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এ রকম একটি প্রোমোশন ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, ‘একজন নারী বলছেন আমরা বিশ্বের একটি অন্যতম সেরা ফ্যাকাল্টির প্রতিনিধিত্ব করি। আসুন নিউফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি ডিগ্রী নিয়ে অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করুন।’ নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব বিজ্ঞাপন অধিকাংশই ভুয়া, বেশধারী যেসব প্রফেসরকে দেখানো হয় তারা মূলত অভিনেতা। ক্যাম্পাসের ছবিগুলো ইন্টারনেট সার্ভার থেকে নেয়া পুরনো ছবি। সে সার্টিফিকেটগুলো তারা দিয়ে থাকে সেগুলোর কোন কার্যকর মূল নেই। প্রকৃত পক্ষে এ হলো, ভার্চুয়াল বাস্তবতা। এ ধরনের অন্তত ৩৭০টি ওয়েবসাইট রয়েছে। সব ওয়েবসাইট থেকে অর্জিত আয় একটি গোপন পাকিস্তানী সফটওয়্যার কোম্পানি পেয়ে থাকে। এ্যাক্স্যাক্ট নামের ওই কোম্পানির অফিস বন্দরনগরী করাচীতে। এখানে ২ হাজারের বেশি স্টাফ কর্মরত আছে। বলা হয়ে থাকে, এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির মতো এখানকার স্টাফরাও খুব বিলাসবহুল জীবন যাপন করে থাকে। এ্যাক্স্যাক্ট কিছু কিছু সফটওয়্যার এ্যাপ্লিকেশন বিক্রি করে থাকে। তবে কোম্পানিটির মূল ব্যবসা ভুয়া একাডেমিক সনদ বিক্রি করা। কাজটি তারা আগেও করত। ইন্টারনেট আসার পর এই ব্যবসা ফুলে ফেপে বিশাল আকার ধারণ করেছে। অনলাইনের শিক্ষার প্রতি সাধারণ মানুষে আগ্রহ বাড়ায় এ ধরনের কোম্পানির পক্ষে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সহজ হয়েছে। ইন্টারনেটে যারা শিক্ষামূলক সাইট খুঁজে বেরায় তাদের ভেতর থেকে সম্ভাব্যদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে এ্যাক্স্যাক্ট। কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে শিফটে শিফটে দিনে রাতে কাজ চলে। কোম্পানির সেলস এজেন্টরা সম্ভাব্য গ্রাহকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে থাকে। গ্রাহকদের মধ্যে কেউ কেউ অবশ্য তাদের কৌশল ধরতে পারে। কিন্তু তাতেও কোম্পানির খুব একটা সমস্যা হয় না। পাকিস্তানে আইন প্রয়োগ ফাঁক ফোকরগুলো কোম্পানিটি ভালভাবেই কাজে লাগিয়ে থাকে। ইয়াসির জামশেদ কোম্পানিটির একজন মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা গত অক্টোবরে চাকরি ছেড়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ মনে করে এটি ইউনিভার্সিটি আসলে এটি তা নয়’। এ্যাক্স্যাক্টের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাতদের চেয়ে গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইসমস থেকে অনেক চিঠি এলে কোম্পানি তাতে সাড়া দেয়নি।
×