ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া ভাসমান সাত হাজার অভিবাসীকে ঠাঁই দেবে;###;ফিলিপিন্স জায়গা দেবে তিন শ’ রোহিঙ্গাকে ;###;ইন্দোনেশিয়ায় আরও সাড়ে চার শ’ বাংলাদেশী-রোহিঙ্গা উদ্ধার

অবশেষে সম্মতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২১ মে ২০১৫

অবশেষে সম্মতি

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মালয়েশিয়া গমনে সাগরে আটকেপড়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৪শ’ অবৈধ অভিবাসীকে বুধবার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ধারকৃত অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার। জাতিসংঘসহ বিশ্বের শক্তিশালী দেশ ও সংস্থার চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া সরকার এসব অবৈধ অভিবাসীকে সাময়িক আশ্রয় দিতে সম্মত হয়েছে। থাইল্যান্ড সরকার কোন অভিবাসীকে আশ্রয় দেবে না, তবে মানবিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অপরদিকে, ফিলিপিন্স সরকার মিয়ানমারের ৩শ’ রোহিঙ্গা অভিবাসীকে সে দেশে জায়গা দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এছাড়া মিয়ানমার সে দেশের রোহিঙ্গা যারা ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ধার হয়েছে তাদের প্রথমবারের মতো মানবিক সহায়তা হিসেবে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এদিকে, কুয়ালালামপুরে বুধবার মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাচার হয়ে সাগরে আটকেপড়া অবৈধ ৭ হাজার অভিবাসীকে আপাতত সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। তবে ইন্দোনেশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সাগরে কোন অবৈধ অভিবাসীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে না; যারা উদ্ধার হয়ে উপকূলে আসবে তাদেরই আশ্রয় প্রদান করবে। মালয়েশিয়ায় ত্রিদেশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফা আমান। তিনি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় এক বছরের জন্য এ পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসন কর্মসূচী নেয়া হবে। বার্তা সংস্থা রয়টারসহ বিদেশী গণমাধ্যমে বুধবার বলা হয়েছে, মানব পাচার নিয়ে উদ্ভূত সঙ্কট মোকাবেলার উপায় বের করতে কুয়ালালামপুরে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের যৌথ বৈঠকের প্রস্তুতির প্রাক্কালেই ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে আচেহ প্রদেশে প্রায় সাড়ে ৪শ’ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীকে উদ্ধার করেছে সে দেশের জেলেরা। বুধবার ভোরের দিকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আচেহ প্রদেশের মালাক্কা প্রণালীতে এই অবৈধ অভিবাসীদের ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। ন্যাশনাল সার্চ এ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সির পক্ষ থেকে জানানো হয়, উদ্ধারকৃতদের ছোট ছোট নৌকায় তীরে আনা হয়েছে। এরা কয়েক সপ্তাহ ধরে সাগরে অনাহারে-অর্ধাহারে ভাসছিল। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ধারণা, গত দুই সপ্তাহে দুই হাজারেরও বেশি অবৈধ অভিবাসী ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মাটিতে নামতে পারলেও এর কয়েকগুণ বেশি পাচারকৃত মানুষ আন্দামান সাগর ও থাই উপকূলে আটকা পড়ে আছে। যারা উদ্ধার হয়েছে ॥ বুধবার আচেহ প্রদেশের উপকূলে যারা উদ্ধার হয়েছে তারা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের নাগরিক। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৫০ নারী ও শিশু রয়েছে। এদের অধিকাংশ দুর্বল এবং অসুস্থ। দুটি নৌযানে ভাসমান অবস্থায় এদের মধ্যে অনেকে না খেয়ে মারা গেছে বলে উদ্ধারকৃতরা উদ্ধারকারী লোকজনদের জানিয়েছেন। অপর একটি ইঞ্জিনবোট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১০২ জনকে। যার মধ্যে ২৬ নারী ও ৩১ শিশু রয়েছে। এদের বহনকারী নৌকাগুলো বিকল হয়ে সাগরে ভাসছিল। ফিলিপিন্স জায়গা দেবে ॥ ইন্দোনেশিয়া উপকূলে ভাসমান অবৈধ তিন শ’ রোহিঙ্গা অভিবাসীকে জায়গা দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে ফিলিপিন্স সরকার। এর আগে ফিলিপিন্স সরকারই প্রথম ভাসমান অসহায় অভিবাসীদের সাহায্যে এগিয়ে আসার ঘোষণা দেয়। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া অবৈধ অভিবাসীদের স্ব স্ব দেশের জলসীমা থেকে বিতাড়িত করার পর উদ্বিগ্ন ফিলিপিন্স সরকার এ ঘোষণা দেয়ার পর বুধবার জায়গা দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। ফিলিপিন্সের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআর। সংস্থার মুখপাত্র কারব্লাট ফিলিপিন্সের বিচারমন্ত্রী লায়লা ডি লিমার সঙ্গে ইতোমধ্যে সাক্ষাত করেছেন। সাক্ষাতকালে ভাসমান অভিবাসীদের ব্যাপারে ফিলিপিন্সের করণীয় আলোচনা হয়। ফিলিপিন্সের বিচারমন্ত্রী লায়লা ডি লিমা বলেন, শরণার্থী বিষয়ক ১৯৫১ সালের কনভেনশনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সে দেশের সরকার এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া ॥ বুধবার কুয়ালালামপুরে ত্রিদেশীয় বৈঠকের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের যে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে তাদের উদ্ধার করে আশ্রয় দেয়ার ঘোষণা দিয়ে দুটি দেশের পক্ষ থেকে অভিবাসীদের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য কামনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, এটা একটি আঞ্চলিক সমস্যা। এদের পুনর্বাসন এবং স্ব স্ব দেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আগামী এক বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সহায়তা নিয়ে সমাধান করা হবে। ত্রিদেশীয় বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মধ্যে অন্যতম একটি ছিল, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সহযোগিতা না করলেও এসব অভিবাসীকে আশ্রয় এবং সহায়তা দেয়া হবে কিনা। এর উত্তর এড়িয়ে গিয়ে আনিফা বলেন, উদ্ধারকৃতদের জরুরী আশ্রয় দেয়া হবে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে রোহিঙ্গার সংখ্যাই বেশি ॥ ইন্দোনেশিয়ায় এ পর্যন্ত উদ্ধারকৃত অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই হাজার। এদের মধ্যে অধিকাংশই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। মিয়ানমারের সিওটো প্রদেশ এবং বাংলাদেশ থেকে এরা থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়া উপকূলে পৌঁছেছে। এক হাজার বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠাবে মালয়েশিয়া ॥ অবৈধভাবে সাগর পথে প্রবেশ করা বাংলাদেশের অবৈধ এক হাজার অভিবাসীকে ফেরত পাঠাবে মালয়েশিয়া। শরণার্থী বিষয়ক কাগজপত্র ঠিকঠাক করার পর তাদের দ্রুতই ফেরত পাঠানো হবে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে বুধবার প্রচার হয়েছে। ওইসব বাংলাদেশীর সঙ্গে ৪শ’ রোহিঙ্গাও রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, নারী ও শিশুসহ ১৪শ’ বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইঞ্জিনচালিত বোটে ইতোপূর্বে সে দেশের লাঙ্কাবি দ্বীপে প্রবেশ করেছিল। তিন দেশের কারাগারে বন্দী ২১ হাজার ॥ এদিকে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের কারাগারে বর্তমানে ২১ হাজার বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বন্দী রয়েছে। একটি এনজিও সংস্থা জানিয়েছে, এদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রায় ১০ হাজার, থাইল্যান্ডে প্রায় ৮ হাজার ও মিয়ানমারের কারাগারে ৩ হাজারেরও বেশি মালয়েশিয়াগামী লোকজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে। বাংলাদেশীসহ গ্রেফতার ১৪ ॥ বিদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানানো হয়েছে, ২শ’ বাংলাদেশী শ্রমিককে পাচারের অভিযোগে হংকং পুলিশ সে দেশে ৫ বাংলাদেশীসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে বুধবার। এছাড়া মিয়ানমারে মানবপাচারের আরেক শীর্ষ হোতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৬ জনের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা।
×