ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হ্যাপির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেন রুবেল

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২১ মে ২০১৫

হ্যাপির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেন রুবেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপীর মামলায় ধর্ষণের অভিযোগ থেকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। তবে আলোচনা থেমে নেই। সর্বত্রই আলোচনা চলছে। কি ক্রিকেট খেলার মাঠে, কি খেলার মাঠের বাইরে! রুবেল-হ্যাপীর আলোচনাটি মানুষের মনে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে। যদিও এখন আর কেউ বিষয়টিকে বাঁকা চোখে দেখছেন বলে শোনা যাচ্ছে না। বুধবারই ঢাকার ৫ নম্বর নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তানজিনা ইসমাইল এ আদেশ দেন। পুলিশের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের আলোকে বিচারক এমন আদেশ দিয়েছেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে হ্যাপীর নারাজি আবেদনও বিচারক খারিজ করে দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলী আলী আসগর স্বপনও বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। ‘কিছু আশা কিছু ভালবাসা’ চলচ্চিত্রের নায়িকা হ্যাপী এবং জাতীয় দলের দ্রুত গতির বোলার (পেসার) রুবেল- দুজনেই আদেশের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হ্যাপীর আইনজীবী তুহিন হাওলাদার বলেন, তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় রুবেলের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন হ্যাপী। যদিও বরাবরই রুবেল এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। রুবেলের দাবি, ওই তরুণী তাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন। রাজধানীর তেজগাঁও থানা কম্পাউন্ডে অবস্থিত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হালিমা খাতুন গত ৬ এপ্রিল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যাপী ধর্ষণের যেসব আলামত উপস্থাপন করেছেন, তাতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাদীকে পরীক্ষা করে তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডও বলেছে, জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কোন আলামত তারা পাননি। ঢাকার মহানগর হাকিম আতাউল হক চূড়ান্ত প্রতিবেদনটিসহ এ মামলার নথিপত্র শুনানির জন্য গত ১৩ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে মামলাটি ট্রাইব্যুনালে উত্থাপিত হওয়ার আগেই প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপী। হ্যাপীর অভিযোগ, শুনানিকে ঘিরে তাকে ফোনে কটূক্তি করা, প্রলোভন দেখানো, এমনকি হুমকিও দেয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুনানির জন্য গত ১৭ মে মামলটি নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এলে হ্যাপী ওইদিন প্রতিবেদনে রুবেল হোসেনকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে নারাজি আবেদন করেন। আবেদেনে অভিযোগ করা হয়, মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষীদের সঙ্গে কথাবার্তা না বলেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। মনগড়া তদন্তের মাধ্যমে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেছেন। পুলিশের দেয়া এ তদন্ত প্রতিবেদন বাতিল করে অধিকতর তদন্ত চাওয়া হয় হ্যাপীর ওই আবেদনে। বুধবার এ বিষয়ে শুনানিতে হ্যাপী আদালতকে বলেন, মামলার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আমার কাছে কিছুই শোনেননি। আমার পক্ষের সাক্ষীদের সঙ্গেও কথা বলেননি। আলামত ‘পরীক্ষা না করেই’ প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, যখন আমার মেডিক্যাল পরীক্ষা করার দরকার ছিল তখন তা করেনি। অথচ আমি থানায় গিয়েছিলাম, আমি পরীক্ষা করতে বললে পুলিশ গড়িমসি করেছে। শারীরিক সম্পর্কের চিহ্ন নষ্ট হয়ে যওয়ার অনেক পরে পরীক্ষা করা হয়েছে। শুনানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও মনিকা লিউনেস্কির সম্পর্কের বিষয়টিও আলোচিত ঘটনা বলে টেনে আনেন হ্যাপীর আইনজীবী আবদুল্লাহ মনসুর রিপন। রিপন বলেন, নো সাইন অফ রিসেন্ট ফোর্সফুল সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’... এখানে ‘রিসেন্ট’ বলতে কী বোঝায়? আমরা তো বারবার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে গিয়েছি এবং আমাদের যে আলামত একটি নাইটি, সাহারার লোগোযুক্ত জার্সি এবং পাপোশ, এগুলো তারা পরীক্ষা করেননি।” তদন্ত কর্মকর্তা ‘অনিয়ম করেছেন’ বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এর বিরোধিতা করে রুবেলের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা সঠিক তথ্যই দিয়েছেন। চিকিৎসক দৈহিক মিলনের কোন চিহ্ন পাননি।” মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর হ্যাপীর আইনজীবী তুহিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, “বিচারসুলভ মনোভাব থাকলে তিনি এ নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে মামলাটি পুনঃতদন্তের পুলিশের অন্য কোন কর্তৃপক্ষকে দিতে পারতেন অথবা বিচারক নিজেই মামলার গুরুত্ব বুঝে বাদীর বক্তব্য শুনে অভিযোগটি আমলে নিতে পারতেন।” এ মামলায় বিশ্বকাপের আগে চার দিন কারাগারেও ছিলেন রুবেল। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেন। রুবেলের বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়া ঠেকাতে হাইকোর্টেও গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হ্যাপী। তবে আদালত তার সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি।
×