ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাকাতির ঘটনায় চালককে জড়ানোয় ২৪ জেলায় বাস ধর্মঘট

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২১ মে ২০১৫

ডাকাতির ঘটনায় চালককে জড়ানোয় ২৪ জেলায় বাস ধর্মঘট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাস ডাকাতির ঘটনায় চালক ও তার সহকারীকে মামলায় জড়ানোর প্রতিবাদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২৪ জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দূরপাল্লার যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। বুধবার সকাল থেকে রাজধানী থেকে দক্ষিণের প্রায় সব রুটেই বেশিরভাগ বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তেমনি রাজধানীতেও দক্ষিণের জেলা থেকে বাস প্রবেশ করেনি। তবে এসব জেলায় লোকাল বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সমাধান হয়নি। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে আরও কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে। তাদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফরিদপুরের মধুখালীতে বেনাপোলগামী সোহাগ পরিবহনের একটি নৈশকোচে সোমবার রাতে ডাকাতির পর যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসটির চালক আয়নাল হোসেন (৪০) ও তার সহকারী শাকিলকে (২৬) আটক করে। পরে ডাকাতির মামলা করে তাদের দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয় বলে মধুখালী থানার ওসি রুহুল আমিন জানান। তবে সোহাগ পরিবহনের বেনাপোল অফিসের ব্যবস্থাপক সহিদুল ইসলাম দাবি করেছেন, ডাকাতির পর চালক বাস নিয়ে মধুখালী থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে কারাগারে পাঠায়। এরই প্রতিবাদে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকে পরিবহন শ্রমিকদের এই ধর্মঘট শুরু হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী রাতে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, চলমান সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। পুলিশ বলছে, ফরিদপুরের মধুখালী থেকে যাত্রী ওঠানের পর পরই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বাসের ভিডিও ফুটেজ ও যাত্রীদের পাসপোর্টসহ টিকেট চেক করে রাস্তায় যাত্রী ওঠানোর কোন আলামত মেলেনি। বাস্তবতা হলো ফরিদপুরের মধুখালীতে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, পুলিশ বিনা কারণে বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে গ্রেফতার করেছে। এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজিসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তবে স্থানীয় পুলিশের বক্তব্য হলো, গ্রেফতারকৃতদের পক্ষে আদালতে জামিন চাওয়ার। আমরা বলেছি, তারা অপরাধ করেনি। তাই নিঃশর্ত মুক্তি চাই। তিনি বলেন, ধর্মঘটের কারণে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশালসহ খুলনা রুটে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। আগামী শুক্রবার থেকে এসব রুটে লোকাল বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে। রবিবার থেকে া উত্তরবঙ্গজুড়ে ধর্মঘট চলবে। সকাল থেকে রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে আরিচা-দৌলতদিয়া রুটে কোন যাত্রী পরিবহন ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। তবে যমুনা সেতু পারাপার রুটের যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। পরিবহন শ্রমিকদের আটক করার প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্বাস উদ্দিন বলেন, অকারণে আমাদের শ্রমিকদের আটক করা হয়েছে। এমনকি তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডও চাওয়া হয়েছে। তাই এখনই বলা যাচ্ছে না সমস্যার সমাধান কখন হবে। আটককৃত পরিবহন শ্রমিকদের ছেড়ে দিয়ে একটা মীমাংসা হলেই কেবল গাড়ি চলবে। তবে সমস্যা আমাদের নয় সমস্যা ফরিদপুর অঞ্চলে তাই তারাই ভাল বলতে পারবে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা। গোপালগঞ্জগামী যাত্রী কাদির মিয়া জানান মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছেন গাবতলী বাস টার্মিনালে। বাস ছাড়ছে না। একই অবস্থা বরিশালগামী যাত্রী বকুল মিয়ার। তিনিও গাবতলীতে প্রায় ১৪ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, আজকে গাড়ি ছাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলী রেজা এক বিবৃতিতে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই পুলিশ শ্রমিকদের গ্রেফতার করেছে। ডাকাতদের গ্রেফতারে পুলিশের কোন তৎপরতা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
×