ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এএফএম নুরুস সাফা চৌধুরী

ঐতিহাসিক স্থলসীমা চুক্তি ॥ অনন্য সাফল্য

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৩ মে ২০১৫

ঐতিহাসিক স্থলসীমা চুক্তি ॥  অনন্য সাফল্য

ভারতীয় রাজ্যসভায় স্থলসীমা চুক্তি বিলটি পাস হয় ৬ মে। লোকসভায় পরদিন ৭ মে। এই সীমান্ত চুক্তি বিল পাসের মাধ্যমে অর্জিত হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এক অনুপম কূটনৈতিক সাফল্য। দূর হলো উভয় দেশের মধ্যে ভূমি বিরোধবিষয়ক যাবতীয় বাধা-বিপত্তি। পরিত্রাণ পেলো অগণিত ছিটমহলবাসী অবর্ণনীয় দুঃখ, কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে। এ বিল পাসের মাধ্যমে ঘটল ১৯৭৪-এর ১৬ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর এ লক্ষ্যে সম্পাদিত ঐতিহাসিক চুক্তির সফল বাস্তবায়ন। বস্তুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরলস প্রয়াস ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। ২০১১ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং পরবর্তীতে ২০১৪-এ ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি তথা বঙ্গোপসাগরে আমাদের বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠার পর ভারতে স্থলসীমা চুক্তি বিল পাস বাংলাদেশের সফল কূটনৈতিক ও দৃঢ় পররাষ্ট্রনীতিরই পরিচয় বহন করে। একথা সত্য যে, এই অনন্য সাফল্য একদিনে অর্জন সম্ভব হয়নি। ১৯৯৬-এর ( শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদের শুরুতে) অক্টোবর মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ সীমানা সম্মেলনে ছিটমহল সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরে নবেম্বরে সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে ভারতীয় ভূ-খ-ে ১১১টি (আয়তন ১৭,১৬০.০২ একর) এবং বাংলাদেশ ভূখ-ে ৫১টি (আয়তন ৭,১১০.০২ একর) বিনিময়যোগ্য ছিটমহল চিহ্নিত করা হয়। সুদীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন জটিল বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় উক্ত ১৬২টি (১১১+৫১) ছিটমহলের হাজার হাজার জনতা ভারত বা বাংলাদেশ কোন রাষ্ট্রেরই নাগরিক বা অন্যান্য সরকারী সুবিধা হতে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকে। ১৯৭৪-এ স্বাক্ষরিত মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ৩৭ বছর পর ২০১১-এ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যাপক আলোচনার পর একটি সীমান্ত প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস, অসম বিজেপি ও অসম গণপরিষদের তুমুল বিরোধিতার কারণে সংবিধান সংশোধন সম্ভব হয়নি। পরে ২০১৩-এর ডিসেম্বরে সীমান্ত প্রটোকলটি পার্লামেন্টে উঠলেও বিরোধী দল বিজেপি ও অসম গণপরিষদের বিরোধিতার কারণে কংগ্রেস সরকারের সময় ভারতীয় সংবিধানের অতি প্রয়োজনীয় সংশোধনীটি পাস করানো সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমান স্থলসীমা চুক্তি পাসের জন্য ভারতের বিজেপি সরকারকেও সাধুবাদ দিতে হয়। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ও নিম্নকক্ষ লোকসভায় উপস্থিত সকল সদস্যের এই বিলে সর্বসম্মত ও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ভারত সরকার তথা জনগণের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতারই পরিচয় বহন করে। রাজ্যসভায় উপস্থিত ১৮০ জন সদস্য ও লোকসভায় উপস্থিত ৩৩১ জন সদস্যের সকলে এই বিলে অভূতপূর্ব সমর্থন জানান। ভারতের সংবিধানের ১১৯তম সংশোধনী বিলটিতে (পরবর্তীতে সংশোধনের পর ১০০তম সংশোধনী) ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর তাৎক্ষণিক অনুমোদনের পর স্থলসীমা চুক্তি বাস্তবায়নে আর কোন সংশয় রইল না। ভারতের সংসদের উভয় কক্ষে সরকারী ও বিরোধীদলীয় সদস্য নির্বিশেষে যেভাবে সকলে বিলটিতে অকুণ্ঠ সমর্থন জানান, তা ইতিহাসে বিরল। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তো বলেই ফেললেন, ‘খবঃ বাবৎু ড়হব হড়ঃরপব ঃযধঃ ওহফরধ রং হড়ঃ ধ নরম নৎড়ঃযবৎ ভড়ৎ যবৎ হবরমযনড়ঁৎং ৎধঃযবৎ ওহফরধ রং ধহ বষফবৎ নৎড়ঃযবৎ’। ভারতের লোকসভায় বিলটি পাস হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এটিকে একটি কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ব্যাপারে অভিনন্দন জানান। ছিটমহল হলো এক দেশের ভূ-খ- পরিবেষ্টিত অপর দেশের ক্ষুদ্র একটি ভূমি বা এলাকা। অন্য দেশের ভূ-খ- পরিবেষ্টিত হওয়ায় ওই সকল ছিটমহলবাসী একদিকে যেমন স্বীয় দেশের নাগরিক সুবিধা হতে বঞ্চিত ছিল, তেমনি তারা যে দেশের ভূ-খ- পরিবেষ্টিত সে দেশের কোন বৈধ নাগরিক সুবিধাদিও ভোগ করতে পারত না। ভারতে নিযুক্ত ব্রিটেনের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত বিভাগের ঠিক আগ মুহূর্তে বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বণ্টন করার লক্ষ্যে সীমানা কমিশনের প্রধান হিসেবে স্যার র‌্যাডক্লীফকে নিযুক্ত করার মাধ্যমে শুরু হয় যত বিপত্তি। তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে স্যার র‌্যাডক্লীফকে তড়িঘড়ি করে সীমানা চিহ্নিত করার মতো একটি দুরূহ ও জটিল কার্য সম্পন্ন করতে হয়। বস্তুত, মাত্র ৬ সপ্তাহের মধ্যে উক্ত সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ নিষ্পন্ন হয়। জমিজমা চিহ্নিত করার মতো অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ বিষয় তথা জরিপ মানচিত্রে অসঙ্গতির কারণে স্যার র‌্যাডক্লীফ যেভাবে সীমানা দাগান, বাস্তবে তা অনুসরণ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর কোচবিহার, বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় সীমানা নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় এ সকল ছিটমহলের উদ্ভব হয়। এ সংশোধনীটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ লাভ করবে স্বীয় ভূ-খ-ে অবস্থিত ভারতের ১১১টি ছিটমহলের ওপর সার্বভৌম অধিকার এবং ভারত লাভ করবে ভারতীয় ভূ-খ- পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের ওপর স্বীয় সার্বভৌমত্ব। জানা গেছে, উভয় দেশের মাঝে অপদখলীয় ভূমি বদলের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পাবে ২,২৬৭.৬৮২ একর এবং ভারত পাবে ২,৭৭৭.০৩৮ একর। ছিটমহল ও অপদখলীয় ভূমি বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ যে বাড়তি ১০ হাজার একর ভূমি বেশি পাবে তার জন্য কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না বা মূল্য পরিশোধ করতে হবে না। কেননা, যেহেতু ভারতীয় পার্লামেন্টে সদ্য পাস হওয়া সংবিধানের ১০০তম সংশোধনী প্রকারান্তরে ১৯৭৪ সালের ১৬ মে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ধারাবাহিক বাস্তবায়নের পদক্ষেপ, সেহেতু সে চুক্তির আলোকে কোন ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে না। কারণ ১৯৭৪-এ স্বাক্ষরিত সেই ঐতিহাসিক চুক্তির অনুচ্ছেদ ১-এর প্যারা ১২-তে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছেÑ ‘ঞযব ওহফরধহ বহপষধাবং রহ ইধহমষধফবংয ধহফ ঃযব ইধহমষধফবংয বহপষধাবং রহ ওহফরধ ংযড়ঁষফ নব বীপযধহমবফ বীঢ়বফরঃরড়ঁংষু, বীপবঢ়ঃরহম ঃযব বহপষধাবং সবহঃরড়হবফ রহ চধৎধ ১৪ রিঃযড়ঁঃ পষধরস ঃড় পড়সঢ়বহংধঃরড়হ ভড়ৎ ঃযব ধফফরঃরড়হধষ ধৎবধং মড়রহম ঃড় ইধহমষধফবংয’ (অৎঃ-১, চধৎধ-১২ ড়ভ গঁলরন-ওহফরৎধ অমৎববসবহঃ ংরমহবফ রহ ১৯৭৪). তাছাড়া স্থলসীমান্ত চুক্তি মোতাবেক ছিটমহলবাসীরা যে যে দেশের ভূ-খ- দ্বারা পরিবেষ্টিত তারা সে সে দেশের বৈধ নাগরিক বলে গণ্য হবেন এবং সকল প্রকার নাগরিক সুবিধাদী ভোগ করবেন। এ সকল ছিটমহলবাসী এর ফলে ৫৮ বছর ধরে অবরুদ্ধ জীবনের অভিশাপ হতে মুক্তি পাবে। কেননা, ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ৩নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত শর্ত ‘ঞযধঃ মড়াবৎহসবহঃ ড়ভ ইধহমষধফবংয ধহফ ওহফরধ ধমৎবব ঃযধঃ যিবহ ধৎবধং ধৎব ঃৎধহংভবৎৎবফ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব রহ ঃযবংব ধৎবধং ংযধষষ নব মরাবহ ঃযব ৎরমযঃ ড়ভ ংঃধুরহম ড়হ যিবৎব ঃযবু ধৎব ধং ঃযব হধঃরড়হধষং ড়ভ ঃযব ংঃধঃব ঃড় যিরপয ঃযব ধৎবধং ধৎব ঃৎধহংভবৎৎবফ’ (অৎঃ-৩ ড়ভ গঁলরন-ওহফরৎধ অমৎববসবহঃ ড়ভ ১৯৭৪) তাদের এ সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবে। ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষে পাস হওয়া স্থলসীমা বিলের মাধ্যমে মানবতার জয় হয়েছে, উভয় দেশের মধ্যে একটি রিহ রিহ ংরঃঁধঃরড়হ পৎবধঃব হয়েছে। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির দীর্ঘ ৪১ বছর পর চুক্তির আলোকে বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা পেয়েছে। বাংলাদেশে যেহেতু ১৯৭৪ সালের ২৮ নবেম্বর সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনীর [অনুচ্ছেদ ২ (ক)-এর সংশোধন] মাধ্যমে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির সাংবিধানিক রূপ প্রদান করেছে, সেহেতু ভারতীয় পার্লামেন্টে সদ্য পাস হওয়া স্থলসীমা বিলটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ হতে কোন আইনী বাধা নেই। কেননা, সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনের বলে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানাবিষয়ক অনুচ্ছেদ ২ (ক)-এ উল্লেখিত ‘১৯৭১ এর মার্চ মাসের ২৬ এ স্বাধীনতার ঘোষণার অব্যবহিত পূর্বে যে সকল এলাকা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান গঠিত ছিল’ শব্দাবলীর পরে ‘[এবং সংবিধানের (তৃতীয়) সংশোধন আইন ১৯৭৪ এর অন্তর্ভুক্ত এলাকা বলিয়া উল্লেখিত এলাকা অন্তর্ভুক্ত কিন্তু উক্ত আইনে বহির্ভূত এলাকা বলিয়া উল্লেখিত এলাকা তদবহির্ভূত ]’ সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এর ফলে সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনের আলোকে প্রণীত অনুচ্ছেদ ২ (ক)-এর সংশোধনীর বলে বাংলাদেশ ভূ-খ- পরিবেষ্টিত ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানায় অন্তর্ভুক্ত এলাকা বলে এবং ভারতীয় ভূখ- পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানাবহির্ভূত এলাকা বলে গণ্য হবে। অপদখলীয় ভূমি বিনিময়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল এবং তিনবিঘা করিডর বিষয়ক উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে ও সবিশেষ কৃতিত্বের দাবিদারও আওয়ামী লীগ সরকারই। কেননা, ১৯৭৪-এর চুক্তি অনুসারে দক্ষিণ বেরুবাড়ির দক্ষিণাংশ (১২নং ইউনিয়ন) যা ভারতীয় ভূ-খ-েই অন্তর্ভুক্ত ছিল তার বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিটমহল দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা। তাছাড়া ১৯৭৪-এর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ১ নম্বর অনুচ্ছেদের ১৪ নম্বর প্যারায় উল্লেখ করা হয়, “ওহফরধ রিষষ ষবধংব রহ ঢ়বৎঢ়বঃঁরঃু ঃড় ইধহমষধফবংয ধহ ধৎবধ ড়ভ ১৭৮ সবঃবৎ ী ৮৫ সবঃবৎ হবধৎ ঞরহ-নরমযধ’ ঃড় পড়হহবপঃ উধযধমৎধস রিঃয চধহনধৎর গড়ুঁধ (চঝ চধঃমৎধস) ড়ভ ইধহমষধফংয.” বহু বাধা-বিপত্তি ও অপরাজনীতির কারণে ১৯৯২-এর ২৬ জুন যদিও তৎকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে তিনবিঘার ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, বাস্তবে তা কিন্তু মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আলোকে ‘ষবধংব রহ ঢ়বৎঢ়বঃঁরঃু’ ছিল না। বরং তা ছিল একটি অবমাননাকর সমঝোতা। যার ফলে দহগ্রাম ছিটমহলবাসীসহ অন্যান্য বাংলাদেশী নাগরিক শুধু দিবালোকের ১২ ঘণ্টার (সকাল ৬টা হতে সন্ধ্যা ৬টা) প্রতি বিকল্প ঘণ্টায় (১ ঘণ্টা পর পর) চলাচলের লক্ষ্যে মাত্র ৬ ঘণ্টার জন্য তিনবিঘা করিডর ব্যবহার করতে পারত। যার ফলে রাত্রিকালীন যে কোন জরুরী প্রয়োজন যেমন চিকিৎসাক্ষেত্রে দহগ্রামবাসী বাংলাদেশের মূল ভূ-খ-ে আসার জন্য তিনবিঘা করিডর ব্যবহার করতে পারত না। এছাড়াও ১৯৯২-এ স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক তিনবিঘার সার্বভৌমত্ব ভারতের কাছেই ন্যস্ত ছিল। এমনকি সেখানকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালানরোধ ইত্যাদির জন্য ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ-ই মোতায়েন ছিল। পরে ২০১১ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তি (ঞৎবধঃু) অনুসারে বাংলাদেশী নাগরিকদের চলাচলের জন্য তিনবিঘা করিডর প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার বিষয়ে সমঝোতা হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ১৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশীদের জন্য তিনবিঘা করিডর প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেন। ওই সময় এর পূর্বে দহগ্রামে কোন হাসপাতাল বা কলেজ ছিল না। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ওই দিনই দহগ্রামে একটি হাসপাতাল ও ইউনিয়ন কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন। বস্তুত তিনবিঘা করিডর বাংলাদেশীদের জন্য ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে ১৯৭৪-এর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিতে উল্লেখিত ‘খবধংব রহ ঢ়বৎঢ়বঃঁরঃু’-ই বাস্তবায়িত হয়েছে।
×