ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তচিন্তার বিপক্ষ শক্তি

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৪ মে ২০১৫

মুক্তচিন্তার বিপক্ষ শক্তি

মাতৃগর্ভ থেকে মানবসন্তান মুক্ত মানুষ হয়েই জন্মগ্রহণ করে, যদিও তার পদে পদে থাকে বাধা। তবে ধর্মের নামে রাজনীতিচর্চা যেসব দেশে প্রকট, সেসব দেশে বাধার প্রাচীর তত বেশি উঁচু। সীমাবদ্ধতা, প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার ভেতর মানুষের মুক্তসত্তা চিরউন্নত রাখা একটা চ্যালেঞ্জ বটে। তবু যুগে যুগে মুক্ত চিন্তাকে লালনের ব্রত গ্রহণ করেছেন শিল্পী, কবি, দার্শনিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরা। যদি তা না হতো তাহলে সমাজের বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যেত, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা স্থবির হয়ে পড়ত, সভ্যতা নির্বাসিত হতো আঁস্তাকুড়ে। আর আশরাফুল মখলুকাত তথা সেরা সৃষ্টি হিসেবে আমাদের গৌরবের জায়গাটিও অবশিষ্ট থাকত না। চিন্তাকে মুক্তি দিতে অসমর্থ হলে আমরাও পাকিস্তান নামক একটি অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অংশ হয়েই থাকতাম। স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা অর্জন তাই বৃহত্তর অর্থে মুক্তচিন্তারই সুন্দরতম ফসল। দুঃখের বিষয় হলো নানা বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণার ভেতর দিয়ে বহুবিধ চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সমাজ ক্রমশ এগিয়েছে প্রায় মুক্তচিন্তাহীন এক স্বার্থান্ধ প্রগাঢ় অন্ধকারের দিকে। সেখানে মুক্তচিন্তার বিপক্ষ শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা। তাই সেখানে মুক্তচিন্তার মানুষগুলো একের পর এক আক্রমণের শিকার হয়ে চলেছেন। তাদের নানাভাবে অপদস্থ ও বিপদগ্রস্ত করে রেখেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা মেতেছে হত্যাযজ্ঞেও। আমরা স্মরণ করতে পারি একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরে মুক্তচিন্তার মানুষগুলোকে হত্যার মূল অভিপ্রায়কে। আজকে যারা মুক্তচিন্তক ও মুক্তচিন্তার পক্ষের মানুষগুলোকে অপমান করছে, হত্যার হুমকি দিচ্ছে তারা কোনভাবেই মানবতাবাদ, সমাজের সুস্থতা ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অনুসারী হতে পারে না। তারা দেশের মানুষের শত্রু, তারা দেশদ্রোহী। মুক্তচিন্তার বড় ধারক হতে পারে তরুণ প্রজন্ম। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের ভেতর সত্যের যুক্তি ও জ্ঞানের আলোর সমান্তরালে কারও কারও ভেতর অন্ধ বিশ্বাস ও অজ্ঞানতার অন্ধকারও বিস্তার লাভ করছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আর এরাই অন্ধকারের প্রাণী, আলোতে তাদের ভয়। যুক্তিবুদ্ধির ধার তারা ধারে না। তাদের কাছে মানবতন্ত্র নয়, বড় চাপাতিতন্ত্র। লেখার জবাব যারা লেখায় নয়, চাপাতির মাধ্যমে দিয়ে থাকে তারা রাষ্ট্রের আইন মানে না। তাই রাষ্ট্রকেই উদ্যোগী হয়ে তাদের অপতৎপরতা রোধ করতে হবে। শেকড়সুদ্ধ তাদের উপড়ে ফেলা চাই সভ্যতার স্বার্থে। মুক্তচিন্তার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণকারী ব্যক্তিরা সুসংগঠিত এতে কোন সংশয় নেই। আজ তারা যে সংগঠনের পতাকাতলে সমবেত হয়েছে আগামীতে সরকার কর্তৃক সেই সংগঠন নিষিদ্ধ হলে তারা নতুন নাম ও বেশ ধারণ করবে। তাই মুক্তচিন্তার সশস্ত্র বিরোধিতাকারীদের রুখতে হলে সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধানের পথ বের করতে হবে। অন্ধকার এসে ক্রমাগত আলোকে গ্রাস করতে থাকলে আলোর সুরক্ষার সমান্তরালে অন্ধকার নাশের উদ্যোগ নিতে হয়। আরেকটি কথা, অল্পবয়সী শিক্ষার্থীদের ‘মগজ ধোলাই’-য়ের মাধ্যমে মুক্তচিন্তা অনুসারীদের হুমকি ও হত্যায় নিয়োজিত করার পথটিও বন্ধ হওয়া চাই। সমাজের সকল শুভশক্তিকে সম্মিলিতভাবে এ উদ্যোগের কথা ভাবতে হবে।
×