ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাল থেকে সারাদেশে ধর্মঘট ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি সড়ক শ্রমিক ফেডারেশনসহ আঞ্চলিক নেতাদের;###;পুলিশের অভিমত জামিন বিষয়ে তাদের সহযোগিতার সুযোগ নেই, বিষয়টি আদালতের

অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে ॥ ২৪ জেলায় যাত্রী জিম্মি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৪ মে ২০১৫

অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে ॥ ২৪ জেলায় যাত্রী জিম্মি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যাত্রীদের জিম্মি করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এ কারণে দেশের ২৪ জেলায় যান চলাচল একেবারেই বন্ধ। শনিবার চতুর্থ দিনের মতো এ কর্মসূচী পালন করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। ডাকাতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আটক সোহাগ পরিবহনের চালক ও সহকারীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি না দিলে মালিক-শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এদিকে চার দিনেও প্রশাসন-মালিক সমিতি কিংবা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সঙ্কট নিরসনের কার্যকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। যাত্রীদের সমস্যার বিষয়টি আমলে না নিয়েই জনস্বার্থবিরোধী এই আন্দোলন অব্যাহত রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীসহ প্রত্যেকেই। ধর্মঘটের কারণে বিভিন্ন জেলায় আটকে গেছেন হাজার-হাজার যাত্রী। বিভিন্ন গন্তব্য থেকে সড়কে বিকল্প পথে আসার চেষ্টা করলেও শনিবার বাধার মুখে পড়ে যাত্রীসহ ওসব পরিবহন চালকরা। ধর্মঘটের কারণে নৌ-রেলপথে বেড়েছে যাত্রীর চাপ। খুলনা বিভাগের ছয় জেলা ও ফরিদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলে চলমান অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের চতুর্থ দিন শনিবার দুপুরে যশোর বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ হুমকি দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে আটক শ্রমিকদের মুক্তি ও দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সারা বাংলাদেশে পরিবহন ধর্মঘট শুরু করা হবে। সম্মেলনে খুলনা বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আলী আকবার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সাদেক হোসেন ও খুলনা বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক আজিজুল আলম মিন্টু, আলী আকবর উপস্থিত ছিলেন। পরিবহন ধর্মঘটকে শ্রমিকদের যৌক্তিক আন্দোলন দাবি করে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতা আলী আকবার বলেন, এ আন্দোলন থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকাসহ সব বিভাগের মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি। ফরিদপুরের মধুখালীতে বেনাপোলগামী সোহাগ পরিবহনের একটি নৈশকোচে সোমবার রাতে ডাকাতির পর যাত্রীদের অভিযোগে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসের চালক ও তার এক সহকারীকে আটক করে। পরে ডাকাতির মামলায় দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে ডাকাতির পর চালক বাস নিয়ে মধুখালী থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে কারাগারে পাঠায় বলে দাবি করেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এরপর আটক দুই পরিবহন শ্রমিকের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ও মধুখালীর ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও ফরিদপুর থেকে ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ সকল রুটে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক আসে। তবে ফরিদপুরের এসপি জামিল হাসান শুক্রবার সন্ধ্যায় তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বাসযাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বাস চালক ও তার সহকারীকে আটক করা হলেও তাদের ছাড়িয়ে নিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করছেন। তার এ অভিযোগের পর ধর্মঘটের চতুর্থ দিন শনিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকেও ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। ‘শ্রমিকদের জামিন বিষয়ে সহযোগিতার সুযোগ নেই’ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা ফরিদপুর থেকে জানান, ফরিদপুরের এসপি জামিল হাসান বলেছেন, ২২ যাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সোহাগ পরিবহনের বাসচালক আয়নাল ও হেলপার শাকিলকে বাস ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। তাদের জামিনের ব্যাপারে সহযোগিতা করার কোন সুযোগ পুলিশ সুপারের নেই। ‘তারা (বাস মালিক ও শ্রমিকরা) জনগণকে জিম্মি করে ধর্মঘট করে বাস ডাকাতির মামলার আসামিদের জামিন নিতে চায়’ মন্তব্য করে পুলিশ সুপার দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে’। পুলিশ সুপার বলেন, ১৯ মে ভোরে ডাকাতি সংঘটিত হওয়া বাসের ২২ যাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করছে। তিনি বলেন, যাত্রীবেশী সাত ডাকাত আশুলিয়া থেকে বাসে ওঠে। ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এলাকা পার হওয়ার পর পরই ওই ডাকাতরা বিনা বাধায় চালকের কাছ থেকে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতি করে। তিনি বলেন, ডাকাতির পর যাত্রীদের দাবির মুখে বাধ্য হয়ে চালক বাসটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মধুখালী রেলগেট এলাকায় থামালে যাত্রীরাই মধুখালী থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানায়। এসপি বলেন, মালিক ও শ্রমিক নেতারা মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করছেন যে অভিযোগ করতে থানায় গেলে পুলিশ চালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করেছে, তাদের এই দাবি আদৌ সত্য নয়। জামিল হাসান বলেন, মালিক সমিতির নেতারা আমার কাছে বাস চালক ও হেলপারের জামিনের বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন। কিন্তু আমার পক্ষে কোনভাবেই সহযোগিতা করা সম্ভব নয়। জামিন দেয়ার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। তিনি বলেন, মালিক ও শ্রমিকরা জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে ও তাদের জিম্মি করে ধর্মঘট করে বাস ডাকাতির মামলার আসামিদের জামিনের সুযোগ নিতে চায়। কিন্তু আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। ঝিনাইদহ থেকে দূরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জল বিশ্বাস বলেন, খুলনা বিভাগীয় নেতারা বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন, তারা তার সমর্থন দিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট মেনে চলার কথা জানান তিনি। সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি ॥ বেশ কয়েকটি দাবিতে সোমবার (২৫ মে) থেকে উত্তরাঞ্চলে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন (রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটি)। শনিবার বিকেলে বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন নেতারা সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন। চারটি ঘটনার প্রেক্ষিতে চার দফা দাবিতে তারা এ কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে। সোমবার ভোর ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের এ পরিবহন ধর্মঘট শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। ধর্মঘটের আওতায় রাজশাহী বিভাগে কোন যান চলাচল করবে না এবং রংপুর বিভাগে ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে না বলে জানান তারা। এদিকে, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রতিদিনই ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে দেশে ফিরছেন অনেক যাত্রী। তবে টানা চার দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গন্তব্যে যেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। বেনাপোল বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, মাদারীপুর, বগুড়া, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ঝালকাঠি ও গোপালগঞ্জগামীসহ বিভিন্ন রুটের কোন বাস ছেড়ে যায়নি। দূরপাল্লাসহ আন্তঃজেলার রুটগুলোর যান চলাচল না করায় ভারত ফেরত যাত্রীদের গন্তব্যে ফিরতে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। বিকল্প ব্যবস্থায় অনেকেই প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে অথবা রেলপথে কমিউটার ট্রেন ধরে গন্তব্যে যাত্রা করছেন। কেউ কেউ হোটেল ভাড়া করে আছেন সেখানেই।
×