ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লক্ষ্য এবার আন্তর্জাতিক সাফল্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৪ মে ২০১৫

লক্ষ্য এবার আন্তর্জাতিক সাফল্য

রুমেল খান ॥ মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে এ ভুবনে। ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ হতে পারে সুউচ্চ অট্টালিকা, ঘটতে পারে গাড়ি দুর্ঘটনা, আবার এক নিঃশ্বাসের দৌড়ে হাসিল করা যায় স্বর্ণপদক। তেমনটাই হাসিল করলেন তামান্না আক্তার ও সাইফুল ইসমাইল খান সানি। দু’জনেই বিকেএসপির এ্যাথলেট। ‘এ কে এম শামসুজ্জোহা স্মৃতি জাতীয় জুনিয়র এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা’র দ্বিতীয় ও সমাপনী দিনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ১০০ মিটার স্প্রিন্ট কিশোরী ও কিশোর বিভাগে স্বর্ণপদক করায়ত্ত করলেন তারা। গতবারের আসরেও এই ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছিল তামান্না। তবে এবারই প্রথম সর্বোচ্চ সাফল্য কুড়িয়ে নিলেন সাইফুল। জেতার পর কার অনুভূতি কেমন ছিল? ‘খুব ভাল লাগছে প্রথম হয়ে। আরও ভাল লাগছে এ নিয়ে পাঁচটি ইভেন্টেই প্রথম স্থান অধিকার করায়। বাকি চারটি হলো ২০০ ও ৪০০ মিটার দৌড়, লং জাম্প ও হাই জাম্প। সারাবছর অনুশীলন করারই সুফল এটা। তাই প্রবল আত্মবিশ্বাস ছিল পারব’- সুনামগঞ্জের মেয়ে তামান্নার অনুভূতি। দেশের সাবেক প্রখ্যাত এ্যাথলেট ও কোচ কিতাব আলীর নাতনি তামান্না। নানার অনুপ্রেরণাতেই তার এ্যাথলেটিক্সে আসা। এবার ১০০ মিটারে উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষে পড়া তামান্নার টাইমিং ১৩.৩৬ সেকেন্ড (আগে তামান্নার সেরা টাইমিং ছিল ১২.৮০ সেকেন্ড)। এটা জাতীয় রেকর্ড নয়। তবে ১০.৫৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে ঠিকই জাতীয় রেকর্ড গড়েছে সাইফুল- ‘অসম্ভব খুশি লাগছে। এ নিয়ে তিনটিতে স্বর্ণ জিতলাম। বাকিগুলো হচ্ছে ২০০ ও ৪০০ মিটারে। কোচ মেহেদী হাসানের নিবিড় প্রশিক্ষণেই আমার এ সাফল্য।’ ২০০৯ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া তামান্না ভাল হ্যান্ডবলও খেলে থাকে। তার ভবিষ্যত লক্ষ্য সাফে ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটারে স্বর্ণ জেতা। শিরিন আক্তার ও শেলি এ্যান-ফ্রেজারকে আদর্শ এ্যাথলেট মানা তামান্না এজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে পিছপা হবে না বলে জানায়। এর আগে ২০১২ সালে এ আসরে বালিকা বিভাগে ২০০ মিটারেও সোনা জিতেছিল তামান্না। ছোটবেলা থেকেই দৌড়ে ভাল ছিল তামান্না। স্কুলের প্রতিযোগিতাগুলোতে প্রথম হতো। যে কারণে সব সময়ই সে স্প্রিন্টার হতে চেয়েছে। এছাড়া নানা কিতাব আলী স্প্রিন্টার ছিলেন। ‘যে কারণে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি এ বিভাগেই ভাল করতে পারব’- তামান্নার ভাষ্য। তামান্নার বাবা-মা প্রথমে চাননি তাদের মেয়ে এ্যাথলেট হোক। পরে নানার সহযোগিতায় ২০০৯ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হয় সে। পরে আর বাবা-মা বাধা দেননি। এ সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান নানা এবং কোচ শিরিন সুলতানা কানিজের। তামান্নার অভিমত- ‘বিশেষ করে আমার কোচের কাছে আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ। উনি আমাকে মায়ের মতো স্নেহ করেন এবং উৎসাহ দেন। যতটুকু এসেছি এ দু’জনের উৎসাহেই।’ স্প্রিন্ট নিয়ে তামান্নার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে, সিনিয়র মিটে রেকর্ড গড়া। এছাড়া ভবিষ্যতে এশিয়ান গেমস এবং এসএ গেমসের মতো বড় আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নিয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে চায় সে। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে স্কলারশিপ নিয়ে দেশে ফিরে কোচ হয়ে এ্যাথলেটিক্সের সেবা করতে চায় তামান্না। গত বছর জুনিয়র এ্যাথলেটিক্সে ১০০ মিটারে সাফল্য পায়নি সাইফুল। ‘আমি সেবার পুরোপুরি সুস্থ ছিলাম না। তারপরও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে প্রথম হয়েছিলাম’- সাইফুলের স্মৃতিচারণ। ‘এবার ১০০ মিটারে রেকর্ড গড়ে প্রথম হওয়ায় সৃষ্টিকর্তাকে জানাই অশেষ শুকরিয়া।’ বড় ভাই রনি বাংলাদেশ বয়েজের ফুটবলার। তবে এ্যাথলেটিক্সই বেশি টানত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের কালীগচ্চ নিবাসী সাইফুলকে। তার আদর্শ এ্যাথলেট দেশে প্রয়াত মাহবুব আলম ও মেজবাহ উদ্দিন, বিদেশে উসাইন বোল্ট, ইয়োহান ব্ল্যাক ও টাইসন গে। সাইফুলের ভবিষ্যত লক্ষ্য- ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেভাবেই হোক আমাকে সাফল্য পেতেই হবে।’
×