ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ‘একাত্তরের গেরিলা’র লেখক

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৫ মে ২০১৫

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে  ‘একাত্তরের গেরিলা’র লেখক

কানাডা প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, কৃষিবিজ্ঞানী, একাত্তরের গেরিলা গ্রন্থের লেখক ড. জহিরুল ইসলাম জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। দুরারোগ্য ক্যান্সারে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। ঘাতক ক্যান্সার যকৃৎ থেকে ফুসফুস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি শারীরিকভাবে এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন যে কেমোথেরাপি গ্রহণ করতে পারছেন না। ড. জহিরুল ইসলাম ১৯৭৩ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট (বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে কৃষি বিষয়ে ¯œাতক (সম্মান) ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় হতে কীটতত্ত্ব বিষয়ে এমএস ও পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটেও তিনি বেশ কিছুকাল গবেষণা কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ড. ইসলাম ধানের সমন্বিত রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ। কীটতত্ত্ব ও ধানের বালাই দমন বিষয়ে দেশী ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর অনেক বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা রয়েছে। ২০১২ সালে ইউপিএল থেকে প্রকাশিত গবেষণাগ্রন্থ; জরপব চবংঃং ড়ভ ইধহমষধফবংয; ঞযবরৎ ঊপড়ষড়মু ধহফ গধহধমবসবহঃ-এর যুগ্ম লেখক তিনি। ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিসচেতন ড. জহিরুল ইসলাম ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই যুদ্ধে যোগ দেন। ওই সময়ে ক্যাপ্টেন হায়দারের তত্ত্বাবধানে ত্রিপুরার মেলাঘরে গেরিলাযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ঢাকা শহর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেশকিছু সফল গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করেন। গেরিলাযুদ্ধে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা ১৯৯৪ সালে জনকণ্ঠ পত্রিকায় ‘একাত্তরের গেরিলা’ নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হয়। ১৯৯৫ সালে অনুপম প্রকাশনী হতে এটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালের বইমেলায় বইটির পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের প্রাণপুরুষ মেজর হায়দারকে নিয়ে জহিরুল ইসলামের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে মেজর হায়দার ও তাঁর বিয়োগান্ত বিদায়’ বইটি ২০১৪ সালে আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার লাভ করে। ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ও কে, ফোর্সের প্রধান খালেদ মোশাররফকে নিয়ে একটি বই লেখার কাজও শুরু করেছিলেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলাযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী অসীম সাহসী এক বীর এখন লড়ছেন নিজের শরীরে বেড়ে ওঠা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে। তাঁর সহযোদ্ধা, পরিচিতজন, পাঠক ও দেশবাসীর কাছে পরিবারের সদস্যরা দোয়াপ্রার্থী।
×