ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন গোলাম আযমের বেয়ান

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৫ মে ২০১৫

নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন গোলাম আযমের বেয়ান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত দ-প্রাপ্ত রাজাকার শিরোমণি মরহুম গোলাম আযমের বেয়ান অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি দেলেনা বেগম নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন। আদালত কতিপয় পর্যবেক্ষণ দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট দ্বৈত বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেন। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারে আরও সচেতন হতে হবে। ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্ট (রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পদক্রম) মেনে চলতে হবে। দেলেনা বেগমের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকট রুহুল কুদ্দুস কাজল অন্যদিকে রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। ২২ এপ্রিল সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দিন আহম্মেদ ৯ এপ্রিল দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘গোলাম আযমের স্ত্রী ও ভাতিজা ফেরত গেল বিমানবন্দর থেকে’ শিরোনামে প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে রুল জারি করেন। এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দিন আহম্মেদ আদালতে জনকণ্ঠের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, জামায়াতের সাবেক আমির, যুদ্ধাপরাধের মামলায় ৯০ বছরের কারাদ-প্রাপ্ত মরহুম গোলাম আযমের স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আযম ও তার ভাতিজা লুৎফুল কবির সৌদি আরব যাবার সময় আটকে দেয়া হয়। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি দিয়ে ইমিগ্রেশন করানোর সময় তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের মুচলেকা রেখে বিমানবন্দর থেকে বের করে দেয়া হয়। বিষয়টি গোয়েন্দারা যখন নিশ্চিত হন, শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান তাদের পরিচয় গোপন রেখে ভিআইপি মর্যাদার ব্যবস্থা করেন, তখন এ নিয়ে তোলপাড় চলে। একটি সূত্র জানায়, আফিফা আযমসহ সব যুদ্ধাপরাধীদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও নিকটাত্মীয়দের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই ঘটনায় ১২ মে হাইকোর্টে আইনজীবীর মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করেন দেলেনা বেগম। জানতে চাইলে তার ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘দেলেনা বেগম তার ভুল স্বীকার করায় আদালত তার ভুল থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন’। তিনি বলেন, ‘গত ১২ মে দেলেনা বেগম তার ভুল স্বীকার করে আদালতের কাছে এফিডেভিট আকারে আবেদন জমা দেন। আদালত রবিবার শুনানি করে তার ভুল থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন।’ এর আগে গত ২২ এপ্রিল সৈয়দা আফিফা আযম, তার ভাতিজা ও ছেলের বউকে শাহজালাল বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যক্তির মর্যাদা (ভিআইপি) কেন দেয়া হলো তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না সে ব্যাপারে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। এই ঘটনায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিচালন ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দেন আদালতে। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানের দফতরে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার দেলেনা বেগম গত ৭ এপ্রিল এক চিঠির মাধ্যমে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতি চান। তাতে তিনি দুই আত্মীয়কে বিদায় জানাবেন বলে উল্লেখ করেন। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী যুগ্ম সচিব বিমানবন্দরে ভিআইপি মর্যাদা পান এবং সঙ্গে দুজন দর্শনার্থী থাকতে পারে। বিধান অনুযায়ী, তিনি অনুমতি পান। এর পরদিন দেলেনা বেগম দুজন দর্শনার্থীসহ ভিআইপি লাউঞ্জে আসেন। কিন্তু তার সঙ্গে যে গোলাম আযমের স্ত্রী ছিলেন তা তিনি গোপন রাখেন। পরে অভিবাসন কর্মকর্তার কাছ থেকে সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মীরা বিষয়টি জানতে পারেন। পরে দেলেনা বেগম এ ঘটনায় দোষ স্বীকার করে বক্তব্য দেন।
×