ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নজরুলজয়ন্তী উদ্বোধনে আজ কুমিল্লা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৫ মে ২০১৫

নজরুলজয়ন্তী উদ্বোধনে আজ কুমিল্লা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা, ২৪ মে ॥ জাতীয় কবির ১১৬তম জন্মজয়ন্তী আজ। জাতীয় পর্যায়ে নজরুলজয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করতে আজ কুমিল্লায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুমিল্লা টাউনহল মাঠে বিকেল চারটায় তিনি এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত কবি নজরুলের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লায় নজরুলের স্মৃতি অবহেলিত চিহ্নগুলোকে দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজিয়ে দুটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২৫৫ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে কুমিল্লার ১৯ প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ‘কুমিল্লা বিভাগ’ ঘোষণা আসতে পারে এ নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে আনন্দ-উদ্দীপনা। এর আগে ১৯৯২ সালে কুমিল্লায় জাতীয় পর্যায়ে কবির জয়ন্তী পালিত হয়েছিল। কুমিল্লায় গোমতীর এপারে প্রমীলা ওপারে নার্গিস। কবি নজরুল ইসলামের হƒদয়ের দুই সারথি। এ দু’জনকে ঘিরেই কবি নজরুলের প্রেম আর বিরহের অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত কেটেছে কুমিল্লা শহর ও মুরাদনগরের দৌলতপুরে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লা শহর ও দৌলতপুর থেকে কবির অনেক স্মৃতিচিহ্ন এখন বিলুপ্তির পথে। জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ১৯২১ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা আসেন পাঁচ বার। কবি কুমিল্লায় অবস্থান করেন প্রায় এক বছর। কবির বিয়ে থেকে শুরু করে দু’দফায় গ্রেফতার হন এ জেলায়। প্রমীলা দেবীর বাড়ি, ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ে কবিতা গানের আসর, ঝাউতলায় গ্রেফতার হওয়া, বসন্ত স্মৃতি পাঠাগার, নানুয়া দীঘির পাড়, দারোগা বাড়ি, ইউছুফ স্কুল রোড, মহেশাঙ্গন, কুমিল্লা বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন ও মাঠ, দক্ষিণ চর্থায় শচীন দেববর্মণের বাড়ি, নবাব বাড়ি, ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের বাড়ি, নজরুল এভিনিউ, কান্দিরপাড়, ঝাউতলা, রানীর দীঘির পাড়, রেল স্টেশন, কোতোয়ালি থানা, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং মুরাদনগরের দৌলতপুরসহ কুমিল্লা শহরের অসংখ্য স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কবির স্মৃতি চিহ্ন। ১৯২১ সালের এপ্রিলে কবির প্রথম আগমন ঘটে জেলার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে। এ গ্রামেরই কবির পূর্ব পরিচিত বন্ধু আলী আকবর খানের আমন্ত্রণে। এ সময় আলী আকবর খানের বোনের মেয়ে সৈয়দা নার্গিস আরা খানমের মাঝে তার মানসীর ছবি খুঁজে পান। দু’জন দু’জনার কাছাকাছি আসেন। এ প্রেম পল্লবিত হয়ে প্রণয়ে পরিণত হয়। কবি নার্গিসকে একই বছরের ১৭ জুন বিয়ে করেন। যা ছিল তার জীবনের প্রথম বিয়ে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বাসর রাতেই দৌলতপুর ছেড়ে কবি কুমিল্লা শহরে চলে আসেন। অবস্থান নেন শহরে কবি ইন্দ্রকুমার সেনের বাসায়। দৌলতপুরে মামার বাড়িতে কবির সঙ্গে নার্গিসের বিয়ে স্থায়ী না হলেও শহরে কবি ইন্দকুমার সেনের বাসায় অবস্থানকালে তার ভ্রাতৃজয়া গিরিজা দেবীর একমাত্র কন্যা আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে প্রমীলার (কবির দেয়া নাম) সঙ্গে পরিচয় প্রেম এবং তারপর ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল শুক্রবার কলকাতার ৬নং হাজী লেনে তাদের বিয়ে হয়। কবি দ্বিতীয়বার কুমিল্লায় আসেন ১৯২১ সালের নবেম্বরে। এ সময়েই তিনি ব্রিটিশবিরোধী গান লিখে গ্রেফতার হন। ১৯২২ সালের ২৩ নবেম্বর শহরের ঝাউতলা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেফতার হন কবি। সর্বশেষ কবি পঞ্চমবারের মতো কুমিল্লায় আসেন ১৯২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরপরই। এটাই ছিল কুমিল্লায় কবির শেষবার আসা। কবি নজরুল আর নার্গিসের বিচ্ছেদ হলেও ১৫ বছর অপেক্ষার পর কলকাতা থেকে তার তালাকনামা এনে নার্গিস পরে কবি আজিজুল হাকিমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৮৩ সালে কবির স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তৎকালীন জেলা প্রশাসক হেদায়েতুল ইসলাম চৌধুরী জেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তায় শ্বেতপাথরের ফলক লাগানো হয়। এসব ফলকে কবির গান, কবিতা, ছড়া ও বাণী তুলে ধরা হয়। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কুমিল্লায় নজরুল স্মৃতিগুলো বেদখল হয়ে গেছে। ১৯৬২ কুমিল্লার তৎকালীন ডিসি কবি আবু জাফর ওবায়দুলাহ কুমিল্লার কান্দিরপাড়-ধর্মপুর রেলস্টেশন সড়কের নজরুল এভিনিউ নামকরণ করেন। শহরের ফরিদা বিদ্যায়তনের পাশে যেখানে প্রমীলা দেবীর বাড়ি ছিল সেখানেও চোখে পড়ার মতো কোন স্মৃতিচিহ্ন নেই। তবে প্রমীলার বাড়ি ও পুকুর পাড় থেকে স্মৃতিফলক তুলে এনে রাস্তার বিপরীত পাশে ফরিদা বিদ্যায়তনের পাশে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এর অদূরে বসন্ত স্মৃতি পাঠাগার ছিল, যেখানে কবি কবিতা লিখতেন, আড্ডা দিতেন। সেখানে কুমিল্লায় নজরুলের একটি স্মৃতিফলক থাকলেও এর ২ ফুট পাশেই এত দিন ডাস্টবিন থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে সেখানে নতুন করে কবির ছবি সংবলিত ফলক স্থাপন করা হয়েছে। শহর থেকে গ্রেফতারের পর কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন কবি কিন্তু সেখানেও নেই কবির কোন স্মৃতিফলক। স্মৃতিফলক নেই কুমিল্লা রেলস্টেশন ও কোতোয়ালি থানায়ও। ভিক্টোরিয়া কলেজের পাশে রানীর দীঘির পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে যেখানে বসে কবি গান গাইতেন ও কবিতা লিখতেন সেখানেও এত দিন একটি ডাস্টবিন থাকলেও গত ২৩ মে সেখানে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে স্মৃতি ফলক লাগানো হয়েছে। এছাড়া নগরীর দক্ষিণ চর্থায় বর্তমান সরকারি হাঁস-মুরগি খামারের পাশে এসডি বর্মণের যে বাড়িতে বসে কবি সঙ্গীত চর্চা করতেন সেই বাড়িটিও সংস্কার-সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে জেলার মুরাদনগরের দৌলতপুরের কবি নজরুল-নার্গিস বিদ্যা নিকেতনের এমপিওভুক্তির জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে দীর্ঘ ২৩ বছর পর এবার বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে কুমিল্লায় দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী পালিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে নগরীর টাউনহল মাঠে আজ থেকে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিকাল চারটায় নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক, সদর আসনের এমপি আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার, নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সভাপতি প্রফেসর এমিরিটাস রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আকতারী মমতাজ এবং স্মারক বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার।
×