ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দৌলতপুর ও আমতলীতে কালবৈশাখী ॥ দেড় শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৬ মে ২০১৫

দৌলতপুর ও আমতলীতে কালবৈশাখী ॥ দেড় শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া, ২৫ মে ॥ দৌলতপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ে ও ডাল-পালা ভেঙ্গে ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রবিবার রাত ১১টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে বড়গাংদিয়া, আড়িয়া, কামালপুর, কালিদাসপুর ও লালনগরসহ বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ক্ষতি হয় আম-কাঁঠালসহ ফসলের। এদিকে বড়গাংদিয়া বাজারে ঝড়ের কবলে পড়ে একটি পুরাতন বটগাছ উপড়ে কয়েকটি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী (বরগুনা) থেকে জানান, রবিবার রাতে বরগুনার আমতলীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে অর্ধ শতাধিক কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে ফেলেছে দু’শতাধিক গাছপালা। ১০ ঘণ্টা বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ঘূর্ণিঝড় শুরু“ হয়। ৩০ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে পৌরসভা, কুকুয়া, আঠারোগাছিয়া, আমতলী সদর, চাওড়া ও তালতলীর ছোটবগী, কড়াইবাড়িয়া, শারিখখালী, নিশানবাড়ীয়া ও বড়বগী ইউনিয়নের আনুমানিক ৫০টি কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। রবিবার রাতে ঝড় শুরু হলে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার সকাল ৮টায় পুনরায় বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। নীলফামারীতে আহাজারি স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, টর্নেডোর আঘাতে ল-ভ- নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে আহাজারী চলছে। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি মেরামতে ওইসব পরিবার পড়েছে বিপাকে। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ওইভাবেই পড়ে রয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, শনিবার রাত ৯টার দিকে মাগুড়া ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যায় টর্নেডো। এতে সাড়ে তিন সহস্রাধিক পরিবারের ছয় সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙ্গে ও উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা ও ভুট্টা ক্ষেত। ঘরচাপা ও গাছ পড়ে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ ব্যক্তি। সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইউনিয়নের মাইলের পর মাইল এলাকাজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে ল-ভ- বাড়িঘর ও গাছপালা। আর ভাঙ্গা ঘরবাড়ির সামনে চলছে ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারী। তেলিপাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, ওই রাতে মাত্র সাত মিনিট স্থায়ী ঝড়ে সব শেষ হয়া গেইল বাহে। উত্তর দিক থাকি ঝড়টা আসি মোর চারটা ঘর ও একটা দোকানঘর তছনছ করে দিলে। ঘরের চালা খুঁটি কুণ্ঠে গেইল খুঁজে আর পাওয়া না। ঝড়ের পর বৃষ্টি শুরু হইলে ছোয়ালাক নিয়া চৌকির নিচত আশ্রয় নিছুনু। একই গ্রামের বাবুল হোসেন (৩৫) বলেন, যেভাবে ঝড়টা এসে নিমেশে সব কিছু ল-ভ- করে দিয়েছে তাতে আমরা যে বেঁচে গেছি এটাই আমাদের ভাগ্য। এখন বড় সমস্যা ঘরবাড়ি সংস্কার করার নগদ অর্থ নেই। ইউনিয়নের যাদের ঘরবাড়ি দুমড়ে মুচড়ে গেছে তারা সকলে কৃষক ও দিনমজুর। গ্রামের কৃষক আনছার আলী বলেন, রাতে আমরা ভাত খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় দিমদিমি শব্দ এসে ঘরবাড়ি মচরাইয়া দিল। ভাঙ্গা ঘরবাড়ি সংস্কারের টাকা নেই হাতে। এখন কি হবে আমাদের। রাতে স্কুলঘরে থাকতে হচ্ছে বলে জানান এই কৃষক। মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাহার হোসেন শাহ জানান, ঝড়ে ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামের কুটিপাড়া, কলেজপাড়া, বানিয়াপাড়া, মিয়াপাড়া, বালাপাড়া, তেলিপাড়া ও কাজীপাড়াসহ ১৫টি পাড়ার প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবারের ছয় সহস্রাধিক কাঁচা-আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়ে। গাছপালা উপড়ে পড়ায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। ঘটনার পর থেকে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান জানান, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথমিকভাবে নগদ এক হাজার টাকা, ১০ কেজি চাল, এক কেজি চিরা ও আড়াইশ’ গ্রাম গুড় দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য নগদ অর্থ ও ঢেউ টিনের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোলাম মোঃ ইদ্রিস বলেন, টর্নেডোর আঘাতে কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ১০ হেক্টর ভুট্টা ক্ষেত, দুই হেক্টর সবজি ক্ষেত, ৫৭০টি আম গাছ, ৭০টি কাঁঠাল গাছ ও এক হাজার ৭০টি অন্যান্য জাতের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
×