ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমদানি নীতিমালা না থাকায় বেড়ে চলেছে স্বর্ণের চোরাচালান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৭ মে ২০১৫

আমদানি নীতিমালা না থাকায় বেড়ে চলেছে স্বর্ণের চোরাচালান

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সুষ্ঠু আমদানি নীতিমালা না থাকার কারণে দেশে স্বর্ণের চোরাচালান একদিকে যেমন বেড়ে চলেছে, তেমনি অন্য পথে চোরাচালানের সেই স্বর্ণ পুনরায় পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে ব্যাপকভাবে স্বর্ণের বারের চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। শুধু স্বর্ণের বার নয়, স্বর্ণালঙ্কারও চোরাচালান হয়ে আসছে। এ ঘটনার নেপথ্যে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন বক্তব্য মিলছে। বলা হচ্ছে, যে পরিমাণ চোরাচালানের স্বর্ণ আটক হচ্ছে তার বহুগুণ বেশি নানাভাবে বিদেশ থেকে আসছে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পুনর্পাচার হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে গত এক বছরে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা মূল্যের অন্তত সাড়ে ৪শ’ কেজি স্বর্ণের বার আটক হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদাররা এসব স্বর্ণ চোরাপথে প্রেরণ করে থাকে ক্যারিয়ারের মাধ্যমে। কাস্টমসহ আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার নজরদারি ফাঁকি দিতে পারলেই এসব চালান পৌঁছে যায় গন্তব্যে। বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির তথ্য মতে, দেশে বছরে ন্যূনতম এক হাজার কেজি স্বর্ণালঙ্কারের বেশি চাহিদা রয়েছে। চাহিদার পুরোটাই পূরণ করা হয় চোরাচালানে আসা স্বর্ণ দিয়ে। অথচ এ ব্যাপারে সুষ্ঠু নীতিমালা করে দিলে স্বর্ণের চোরাচালানে ভাটা যেতে বাধ্য। জুয়েলারি সমিতির তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে এক লাখেরও বেশি ছোট বড় জুয়েলারি দোকান রয়েছে। এসব দোকানের সঙ্গে স্বর্ণালঙ্কার তৈরিতে নিয়োজিত স্বর্ণকারের সংখ্যা আড়াই লক্ষাধিক। বাংলাদেশের স্বর্ণকারদের তৈরি অলঙ্কার আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয়। এদেশের তৈরিকৃত অলঙ্কার আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কারও পেয়েছে। কিন্তু স্বর্ণালঙ্কারের আন্তর্জাতিক বাজার ক্রমাগতভাবে এখন দখল করে নিচ্ছে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারত। সে দেশের মুম্বাই শহরের স্বর্ণকাররা অত্যাধুনিক অলঙ্কার তৈরিতে এখন সুনাম কুড়াচ্ছে। যে কারণে সে দেশের তৈরি স্বর্ণালঙ্কার আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা পাচ্ছে। কিন্তু ভারতে চোরাপথে স্বর্ণের চালান আসার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আর এ কারণেই চোরাচালানিরা ভারতে স্বর্ণ পাচারের রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে ঢাকা শাহজালাল ও চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই সিংহভাগ স্বর্ণের চালান চলে আসছে, তেমনি এসব চালানের অধিকাংশ চলে যাচ্ছে ভারতে। বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর ও সাধারণ সম্পাদক স্বপন চৌধুরী জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার ক্ষেত্রে যথাযথ নীতিমালা নেই। আর এ কারণে বর্তমানে এ ব্যবসা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। অথচ, স্বর্ণের বার আমদানি ও তা থেকে তৈরিকৃত অলঙ্কার রফতানিতে অনুমতি দেয়া হলে এ খাতে একদিকে যেমন মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় হতো, তেমনি এদেশের তৈরিকৃত অলঙ্কার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে স্থান করে নিতে পারত। বর্তমানে স্বর্ণের বারের পাশাপাশি স্বর্ণালঙ্কারও আসছে চালানে চালানে। কিছু কিছু চালান ধরা পড়ছে। অধিকাংশ চালান সরকার পক্ষে তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাসমূহের একশ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের ম্যানেজ করার মাধ্যমে পার পেয়ে যাচ্ছে। স্বর্ণ চোরাচালান এখন একটি লোভনীয় অবৈধ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কর্মী, সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তা কর্মচারী, পাচারকারীদের নিয়োজিত ক্যারিয়ারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাসমূহের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জড়িত। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়, শুধুমাত্র ব্যাগেজ রুলে শুল্ক পরিশোধ করে যে পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার আনা যায় তাতে বাংলাদেশের চাহিদার কাছাকাছিও হয় না। অথচ, প্রতিটি লাইসেন্সের বিপরীতে ন্যূনতম পক্ষে ৬ কেজি পর্যন্ত স্বর্ণের বার আমদানির অনুমতি দেয়া হলে দেশে স্বর্ণের চোরাচালান আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির পক্ষ থেকে স্বর্ণের চোরাচালান রোধে বৈধভাবে ৬ কেজি পর্যন্ত স্বর্ণের বার আমদানির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সমিতির মতে, প্রতিটি লাইসেন্সের বিপরীতে এ পরিমাণ স্বর্ণের আমদানির অনুমতি দেয়া হলে এতে দেশে স্বর্ণালঙ্কারের চাহিদা যেমন মিটবে, তেমনি তৈরিকৃত স্বর্ণালঙ্কার বিদেশে রফতানির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের পাশাপাশি সরকারী কোষাগারে রাজস্ব প্রাপ্তি বৃদ্ধি পাবে।
×