ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সর্বোচ্চ অর্থছাড় বিশ্বব্যাংকের

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৮ মে ২০১৫

সর্বোচ্চ অর্থছাড় বিশ্বব্যাংকের

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থছাড় বাড়িয়েছে উন্নয়নসহযোগীরা। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দশ মাসে দাতারা অর্থ ছাড় করেছে মোট ২৩৮ কোটি ৭ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৩৬ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। তুলনামূলক পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রায় ২ কোটি মার্কিন ডলার বেশি অর্থছাড় হয়েছে গত অর্থবছরের চেয়ে। এসময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে বিশ্বিব্যাংক। সংস্থাটির অর্থছাড়ের পরিমান ৭৮ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ ৬৬ কোটি ২ লাখ ৮০ হাজার এবং অনুদান ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। অন্যদিকে কমেছে প্রতিশ্রুতির পরিমাণ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বুধবার এসব তথ্য জানাগেছে। চলতি অর্থবছরের দশ মাসে উন্নয়নসহযোগীরা মোট যে পরিমান অর্থছাড় দিয়েছে তার মধ্যে ঋণ ১৯১ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৪৬ কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।গত অর্থ বছরের একই সময়ে দাতারা অর্থছাড় করেছিল তার মধ্যে ঋণ ১৭৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৬২ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। বিশ্বব্যাংকের অর্থছাড় বৃদ্ধির বিষয়ে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থছাড় বাড়ার ক্ষেত্রে গত তিন বছর ধরে প্রতি বছর বিশ্বব্যাংকের ডিসবাসমেন্ট তার আগের বছরের চেয়ে বেশী হয়েছে। এক্ষেত্রে যেটি হয়েছে সেটি হচ্ছে চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর মনিটরিং জোড়দার করা হয়েছে। ডোনার এবং সরকার উভয় পর্যায়েই এটি করা হয়েছে। এজন্য যেসব প্রকল্পের অর্থছাড়ে সমস্যা ছিল সেগুলো বিষয়ে প্রতি মাসে ডোনার ও সরকারী পর্যায়ে টেকনিক্যাল লোকজন প্রথমে বৈঠক করতেন। সেখানে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের করণীয় নির্ধারণ করা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাকে চিহ্নিত করা হতো। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের একটি এ্যাকশন প্ল্যান করা হতো। পরের মসের মিটিং এ আবার এগুলোর ফলোআপ করা হতো। যদি দেখা যেত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন প্রতি তিন মাসে উচ্চ পর্যায়ের (সচিব) একটি বৈঠক করা হতো। সেখানে প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করা হতো। এভাবে সমস্যা সমাধান করা হতো। এজন্যই অর্থছাড় বাড়ছে। ইআরডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের দশ মাসে দাতাদের প্রতিশ্রুতির লক্ষ্য পূরণ হয়নি। এ সময়ে প্রতিশ্রুতি এসেছে ২৫৫ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ৩৪৫ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যে প্রতিশ্রুতি এসেছে তার মধ্যে ঋণ হচ্ছে ২১৮ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৩৬ কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যে প্রতিশ্রুতি এসেছে তার মধ্যে ঋণ ২৯৭ কোটি ৯৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। এ বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, অর্থবছরের শেষের দিকে প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে বলে আশা করছি। দাতারা বিভিন্ন নতুন নতুন ক্ষেত্রে অর্থায়ন করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। যেমন, ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করছে। সত্তরই এ বিষয়ে সংস্থাটির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তাই বলা যায় দাতাদের কোন নেতিবাচক মনোভাব নেই। ইআরডির হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দাতাদের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ কমেছে। চলতি অর্থবছরের দশ মাসে সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ৯৬ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আসল ৮০ কোটি ৩৭ লাখ এবং সুদ ১৬ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ১০৮ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আসল ৯১ কোটি ৩১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদ ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। ইআরডি জানায়, অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গত দশ শাসে ছাড় করেছে ৫৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তৃতীয় জাপান আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ছাড় করেছে ২৫ কোটি ৬৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। অবস্থানে থাকা ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ছাড় করেছে ১১ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার, এর মধ্যে ঋণ ১১ কোটি ৮৫ লাখ এবং অনুদান হচ্ছে ২ লাখ মার্কিন ডলার।
×