ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চীনকে হুঁশিয়ারি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

সাগরে দ্বীপ নির্মাণ বন্ধ করুন

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৯ মে ২০১৫

সাগরে দ্বীপ নির্মাণ বন্ধ করুন

চীন দক্ষিণ চীন সাগরে নির্মিত কৃত্রিম দ্বীপগুলোতে অস্ত্রশস্ত্র স্থানান্তর করেছে বলে খবর প্রকাশিত হওয়ায় দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াসহ আঞ্চলিক নিরাপত্তা শরিকদের একটি সম্ভাব্য সংঘাতের জল্পনাকল্পনা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ্যাশেটন কার্টার বুধবার চীনকে ঐসব দ্বীপের নির্মাণকাজ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সরাসরি সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি এই অঞ্চলের আন্তর্জাতিক জল ও আকাশসীমায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন। চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াং ইয়ুজুন মঙ্গলবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ চীন সাগর প্রশ্নে গোপন অভিসন্ধি রয়েছে। খবর স্কাইনিউজ, ওয়াশিংটন পোস্ট ও সিএনএন-এর। অস্ট্রেলীয় কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, চীন দ্বীপগুলোতে দূরপাল্লার রাডার ও গোয়েন্দা বিমান মোতায়েন করতে পারে যেগুলোর মাধ্যমে তারা (চীন) অস্ট্রেলিয়ার কিছু ব্যস্ততম বাণিজ্যপথে সামরিক শক্তির অধিকারী হয়ে উঠতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, চীনের এই উদ্যোগের প্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনীর উর্ধতন মহল ত্বরিত আলোচনায় মিলিত হয়েছেন। এতে দেশটির নৌ ও বিমানবাহিনী দক্ষিণ চীন সাগর প্রশ্নে জড়িত হয়ে পড়তে পারে। অস্ট্রেলীয় কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, চীন সেখানে দূরপাল্লার রাডার ও বিমান বিধ্বংসী কামান মোতায়েন করতে পারে। বিরোধী দলীয় পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র তানিয়া গ্লাইবারসেক এবিসিকে বলেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, বিরোধপূর্ণ এলাকা জাহাজ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকার নিশ্চয়তা দিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে বিষয়টির নিষ্পত্তিতে শান্তভাবে কাজ করতে এবং সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে যে কোন মতপার্থক্য আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করতে হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাশটন কার্টার বুধবার হাওয়াই পাল হারবার সামরিক ঘাঁটিতে প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর নতুন কম্যান্ডার এ্যাভমিরাম হ্যারি বি. হারিসের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে কোন ভ্রান্তি থাকা উচিত নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র যেসব স্থানে আন্তর্জাতিক আইন অনুমতি দেবে সেখানে বিমান ও জাহাজ চালনা করতে ও তৎপর হতে পারবে, যেমনটি আমরা বিশ্বের সর্বত্র করে থাকি। কার্টারের মন্তব্য দক্ষিণ চীন সাগর ও অন্যান্য এশীয় জলসীমায় প্রবেশাধিকারের প্রশ্নে ওয়াশিংটন ও বেজিংয়ের মধ্যে চাপা উত্তেজনার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। চীন সম্পদসমৃদ্ধ ঐ সাগরের ৮০ ভাগেরও বেশি এলাকার ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করছে। বিশ্বের ব্যস্ততম জাহাজ চলাচলের পথ ওই সাগরের মধ্যে দিয়ে গেছে। চীন সেখানে বড় কৃত্রিম দ্বীপ সৃষ্টি করে আক্রমণাত্মকভাবে তার দাবির প্রশ্নে অনড় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার এশীয় মিত্ররা সর্বতোভাবে চীনের ভূখ-গত প্রদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। কোন পক্ষের পিছু না হটার মনোভাবে সৃষ্ট অচলাবস্থা স্থানীয়ভাবে সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে। গত সপ্তাহে চীন বিরোধপূর্ণ স্ত্র্যাটলি দ্বীপগুলোর কাছাকাছি একটি এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর একটি পসিভন পি-৮এ গোয়েন্দা বিমানকে স্থানটি ত্যাগ করার জন্য সতর্ক করে দেয়। চীন সেখানকার একটি শৈলশ্রেণীর ওপর কৃত্রিম দ্বীপ সৃষ্টি করছে। তবে, নৌবাহিনীর গোয়েন্দা বিমানটি গতি পরিবর্তনের জন্য চীনের বেশ কয়েকটি হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরে ‘অত্যন্ত দায়িত্বহীন ও বিপজ্জনক’ কাজের জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রতি বিষোদার করে। গেন্টাগণ আন্তর্জাতিক আকাশ সীমায় বিমানটির উড্ডয়নের বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরে। কার্টার তাঁর বুধবারের মন্তব্যে সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ও বিমানগুলো ওই অঞ্চলে টহলদান অব্যাহত রাখবে এবং সামুদ্রিক ভূখ-গত সীমা সম্প্রসারণে চীনা প্রয়াসকে অগ্রাহ্য করে যাবে। তিনি এমন একটি এলাকায় উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য চীনকে দোষারোপ করেন যেখানে মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্রধানত নির্বিঘেœ তৎপর ছিল। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াং ইয়ুজুন এক বিবৃতিতে বলেছেন, কিছু লোক ইচ্ছাকৃতভাবে এবং বারংবার দক্ষিণ চীন সাগর প্রশ্ন নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরে নির্মাণকাজ ‘সার্বভৌমত্বের প্রেক্ষিতে’ দেশের বাকি অংশে ভবন, সড়ক ও সেতু নির্মাণের মতোই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নবনির্মিত স্থাপনাগুলোকে বেসমরিক উদ্দেশে ব্যবহার করা হবে।
×