ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানবপাচারকারীর মূল হোতা গ্রেফতার

মির্জাপুরের ৮ যুবক ॥ ভারতের জেলে

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৯ মে ২০১৫

মির্জাপুরের ৮ যুবক ॥ ভারতের জেলে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর, ২৮ মে ॥ আদম পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে টাঙ্গাইলরে মির্জাপুরের ৮ যুবক ৯ মাস ধরে ভারতের একটি জেলে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। জেলে আটক ৮ যুবকের পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তানসহ প্রায় ২৫-৩০ জন গ্রামবাসী বৃহস্পতিবার দুপুরে মির্জাপুর প্রেসক্লাবে এসে তাদের দুর্দশার কথা সাংবাদিকদের জানান। এছাড়া জেলে আটক ব্যক্তিদের সরকারের সহযোগিতায় যাতে দেশে ফিরতে পারে সেজন্য তারা মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুম আহমেদের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন। এলাকার মানবপাচারকারী নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগী মোহাম্মদ আলী মালদ্বীপ পাঠানোর কথা বলে ৮ যুবকের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। মানবপাচারকারীরা প্রতারণার মাধ্যমে ৮ যুবককে মালদ্বীপ না পাঠিয়ে ভারতে পাচার করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানায় একটি মামলা হলে পুলিশ মানবপাচারকারী মূলহোতা নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। নজরুলের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া (ঘোনাপাড়া) গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত হামেদ আলী। জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে মালদ্বীপ পাঠানোর কথা বলে আদম পাচারকারী নজরুল ইসলাম (৪৫) ও মোহাম্মদ আলী (৪০) একই ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের বাবুল (৩৫), সবুজ মিয়া (২৬), জয়নাল (৪৩), রিপন (৩০), পার্শ্ববর্তী মহেড়া ইউনিয়নের মহেড়া গ্রামের জুলহাস (৩৫), হিলড়া আদাবাড়ি গ্রামের সোহেল (২৮), জামুর্কী ইউনিয়নের ধল্যা গ্রামের আলমগীর (২৬) ও পার্শ্ববর্তী দেলদুয়ার উপজেলার কামান্না গ্রামের সুজন মিয়ার (২৬) কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে নেয়। টাকা নেয়ার পর থেকে আদম পাচারকারীরা তাদের বিদেশে না পাঠিয়ে নানাভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এ নিয়ে এলাকায় মাতাব্বরগন মানবপাচারকারীদের নিয়ে সালিশ করেন। পরে মানবপাচারকারীরা গত বছর ১৪ আগস্ট তাদের মালদ্বীপ পাঠানোর কথা বলে ঢাকার উত্তরার গ্লোবাল এজেন্সি নামে একটি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে মালদ্বীপগামীদের সঙ্গে আসা আত্মীয়-স্বজনদের জানানো হয় ওইদিন রাতে তারা বিমানযোগ মালদ্বীপ চলে যাবে। এ কথা শুনে আত্মীয়রা বাড়িতে চলে আসেন। এরপর থেকে ওই ৮ যুবকের কোন খোঁজ খবর মেলেনি। মানবপাচারকারীদের কাছে আত্মীয়রা জানতে চাইলে পাচারকারীরা জানায়, তারা সবাই মালদ্বীপ চলে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ ৯ মাস তাদের কোন খোঁজখবর না পাওয়ায় বিদেশগামী ৮ যুবকের আত্মীয়দের সন্দেহ হয়। পরে তারা টাঙ্গাইলের ভূয়াপুরের এক গরু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে জানতে পারেন মালদ্বীপগামী ৮ যুবক ভারতের দিনাজপুরের বালুঘাট জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ খবর জেনে জয়নালের বাবা ওয়াহেদ আলী ও ছোট ভাই জহিরুল তিন মাস আগে ভারতে গিয়ে ওই জেল খানায় আটক থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর ভুক্তভোগীদের অভিভাবকরা এলাকার স্থানীয় চেয়ারম্যান হুমায়ুন তালুকদার ও মাতাব্বরগণদের নিয়ে সালিশ করেন। এ সময় দুই মানবপাচারকারী নজরুল ও মোহাম্মদ আলী ৮ যুবককে দ্রুত জেলখানা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাড়া পান। কিন্তু পরে তারা এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ ও টালবাহানা করলে জেলে আটক রিপন, সবুজ মিয়া ও বাবুলের আত্মীয় মোঃ সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২১ মে মির্জাপুর থানায় একটি মামলা করলে পুলিশ গত শুক্রবার মূলহোতা নজরুলকে উপজেলার ধল্যা বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে। পরে থানা পুলিশ আদালতের মাধ্যমে নজরুলকে ২ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার জেলহাজতে প্রেরণ করে। এদিকে মানবপাচারকারী নজরুলের বিরুদ্ধে মামলা করায় মামলার বাদী সিরাজুল ইসলামকে ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন তালুকদার প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে সিরাজুল ইসলাম বুধবার সন্ধায় মির্জাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া মানবপাচারকারী নজরুল হাট ফতেপুর গ্রামের মোতালেব, লিটন, আলী, জাহাঙ্গীর, সৈকত ও রবি রাজবংশীসহ আরও প্রায় ১৫ ব্যক্তির কাছ থেকে ইরাক পাঠানোর নাম করে তিন থেকে চার লাখ টাকা করে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। জেলখানায় আটককৃতরা সবাই দরিদ্র পরিবারের সদস্য বলে জানা গেছে। ভারতে আটক জয়নালের ছোট ভাই জহিরুল জানান, গত প্রায় তিন মাস আগে ভারতের দিনাজপুরের বালুঘাট জেলখানায় তার ভাইসহ ৮ জনকে মানবেতর জীবন যাপন করার বিষয়টি সচোখে দেখে এসেছেন। ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভারতের জেলে আটককৃতদের ছাড়িয়ে আনার জন্য মানবপাচারকারী নজরুল ১৫ জুন পর্যন্ত সময় নিয়েছিলেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাছির জানান, এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। চীনের কারাগারে মুন্সীগঞ্জের চার যুবক স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, অবৈধভাবে হংকং যাওয়ার পথে মুন্সীগঞ্জের চার যুবক এখন চীন কারাগারে। তারা চীনের এনজিন পুলিশ স্টেশনে প্রথমে আটক হয়। পরে বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন টঙ্গীবাড়ি উপজেলার নিতিরা গ্রামের তিন যুবক বিল্লাল হোসেন, মোঃ লিটন ও মোঃ নাসির এবং সিরাজদিখানের মানখানগরের গ্রামের মোঃ মিজানুর রহমান। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে গত ২৮ এপ্রিল লিখিতভাবে স্থানীয় জনশক্তি ব্যুরোকে বিষয়টি অবগত করা হয়। পরে সংশ্লিষ্ট দফতর ও মন্ত্রণালয়য়ে আবেদনটি পাঠানো হয়েছে। স্বজনরা জানিয়েছেন, আদম ব্যাপারীর খপ্পরে পড়ে এই সর্বনাশ হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল বৃহস্পতিবার জানান, কিভাবে তাদের মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। এদিকে মুন্সীগঞ্জে ৬৪ জন মালয়েশিয়া অবস্থান করছে। এরা সকলেই সরকারীভাবে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় গেছেন। অবৈধভাবে এ জেলায় কেউ মালয়েশিয়ায় নেই। নিখোঁজের কোন সংবাদও পাওয়া যায়নি।
×