ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোদির সফর

সম্পর্কের নতুন দুয়ার উন্মোচনের প্রতীক্ষায় ঢাকা-দিল্লী

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩০ মে ২০১৫

 সম্পর্কের নতুন দুয়ার উন্মোচনের প্রতীক্ষায় ঢাকা-দিল্লী

তৌহিদুর রহমান ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফর ঘিরে সম্পর্কের নতুন দুয়ার উন্মোচনের প্রতীক্ষায় ঢাকা-দিল্লী। মোদির এই সফরে দুই দেশের মধ্যে আরও গভীর সম্পর্ক তৈরি হবে বলে ইতোমধ্যেই আশা প্রকাশ করেছেন দুই দেশের কূটনীতিকরা। আর বাংলাদেশ সীমান্ত রাজ্যের চার মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে মোদির ঢাকা সফর হবে সবচেয়ে ব্যতিক্রম। কেননা এর আগে ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চার মুখ্যমন্ত্রী ঢাকায় আসেননি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন ব্যস্ত। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই মোদির সফরসূচী চূড়ান্ত করেছেন। নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর হবে ৩৬ ঘণ্টার। রাজধানীর বাইরে তিনি যাবেন না। এমনকি খুব একটা জাঁকজমক কোন অনুষ্ঠানও থাকছে না। আগামী ৬ জুন সকালে মোদি ঢাকায় পৌঁছবেন। প্রথমে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে ১৯৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাদের শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। এরপর মোদি ধানম-িতে জাতির জনক ও দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন পরিদর্শন করবেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছ থেকে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির পক্ষে মৈত্রী সম্মাননা পদক নেবেন নরেন্দ্র মোদি। এ পর্যন্ত ২২৬ ভারতীয়কে এ সম্মাননা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করবেন মোদি। এর মধ্যে প্রাধান্য পাবে বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবিরোধী পারস্পরিক সহায়তা ইস্যু। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন মোদি। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ভারতের সরকার প্রধান। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে মোদির সাক্ষাত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। মোদির সম্মানে সোনারগাঁও হোটেলেই ডিনারের আয়োজন করা হয়েছে। ৭ জুন সকালে নরেন্দ্র মোদি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করবেন। এখানে সাধারণত এ ধরনের ভিআইপি অতিথিরা যান না। কূটনৈতিক অঞ্চলে ভারতের হাইকমিশনের একটি দফতর (চ্যান্সারি) উদ্বোধন করবেন। ভারতে ফেরার আগে তিনি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনের উদ্দেশে একটি বক্তৃতা দেবেন। এই বক্তৃতা হবে হিন্দিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও তরুণদের সামনে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব নিয়েও কথা বলবেন মোদি। বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা অন-এ্যারাইভাল (পৌঁছানোর পর ভিসা) ও ই-ভিসার ঘোষণা দেবেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে গত এক বছরে মোদি এ পর্যন্ত ১৯টি দেশ সফর করেছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় গেছেন। বাংলাদেশে অনেক আগেই আসতে চেয়েছিলেন মোদি। সীমান্ত চুক্তি বিল পাসের জন্য তার সফরে দেরি হয়। ভারতের পার্লামেন্টে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পাস হওয়ার পরে তিনি এখন ঢাকা আসছেন। এর আগে ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকায় আসতে অস্বীকৃতি জানালে সফরটি সাফল্যের মুখ দেখেনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ সীমান্তের চার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও আসছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমাও মোদির সফর সঙ্গী হবেন। সে কারণেই মোদির ঢাকা সফর হবে সবচেয়ে ব্যতিক্রম। কেননা এর আগে বাংলাদেশের প্রতিবেশী চার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসেননি। মোদি সরকারের প্রতি আগের মতো নেতিবাচক মনোভাব এখন আর নেই মমতার। তারপরেও মোদির সঙ্গে ঢাকা সফরে আসতে প্রথমেই রাজি হননি মমতা। তাই কলকাতা সফরে এসে মোদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মমতাকে ঢাকা সফরের প্রস্তাব দিলে শেষ পর্যন্ত রাজি হন মমতা। অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক মাস আগে ঢাকা ঘুরে গেছেন। মোদির এ সফরে তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান না হলেও বিষয়টিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে শুক্রবার আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন করে কোন অঘটন না ঘটলে মোদির সফরসঙ্গী হবেন মমতা। ঢাকা সফরে মমতা রাজি হওয়ার বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আলোচনায় প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকা যাওয়ার জন্য আমি প্রথম দিন থেকেই অনুরোধ জানিয়ে আসছি। মমতা যেতে সম্মত হয়েছেন, এই সংবাদে আমি খুশি’। সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর সামনে রেখে ইতোমধ্যেই ভারতের অগ্রবর্তী নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে গেছেন। নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরে ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে অন্তত দশটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। দুই দেশের মধ্যে ঋণ সুবিধা, বাণিজ্য, পরিবহন, নৌ চলাচল, বিদ্যুত, সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে এসব চুক্তি সইয়ের লক্ষ্যে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বেশ কয়েকটি চুক্তি নবায়ন করা হবে। এছাড়া ঢাকা সফরকালে আলোচনায় গুরুত্ব পাবে তিস্তা চুক্তি ও সন্ত্রাস দমন। এদিকে জানা গেছে, মোদির সফরে অনন্ত ১০০ রকমের নিরামিষ রান্নার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। খাদ্য তালিকায় থাকছে মসুর ডাল ও নানা ধরনের সবজি দিয়ে তৈরি ‘মসলা খিচুরি’। সঙ্গে থাকবে নানা ধরনের এবং স্বাদের ডালনা, সর্ষে দিয়ে সজনে ডাটা, আমের চাটনি। মোদির নিজস্ব পছন্দ ‘ভিন্ডি কড়ি’, ভিন্ডি অর্থাৎ ঢেঁড়স আর দুধ দিয়ে তৈরি। মোদির পছন্দের গুজরাটি খাবার ‘সাদা খাট্টা ধোকলা’ও থাকবে। এসবের সঙ্গে থাকবে তাজা ফল, আর অবশ্যই বাংলাদেশের বিখ্যাত পিঠেপুলি, পায়েস, ক্ষীর, সন্দেশ। এগুলোর পাশাপাশি ঢাকা থেকে মোদির খাবারের পছন্দের তালিকা জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই হিসেবেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
×