ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাবনায় স্কুলপ্রতি ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়ে শিক্ষকদের ক্ষোভ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মসূচী রয়েছে কাগজে-কলমে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩০ মে ২০১৫

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মসূচী রয়েছে কাগজে-কলমে

কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা ॥ মহাজোট সরকার সকল শিশুর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা কর্মসূচী ‘সিøপ’ বাস্তবায়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তবে তা কোন কাজে আসছে না। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও সরকারী কর্মকর্তারাই এ প্রকল্পের অধিকাংশ টাকা লুটে পুটে খাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষুব্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে সরকার প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে শিখন ও শিখানোয় হাসি-খুশি পরিবেশ সৃষ্টিতে শিশুদের উপযোগী ক্লাস সজ্জিতকরণ, ড্রপআউট রোধ, পাঠসংশ্লিষ্ট শিক্ষা উপকরণের সঠিক ব্যবহার ও শিশুদের নতুন নতুন বিষয় শেখার আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্মসূচী সিøপ চালু করে। এ প্রকল্পে স্থানীয় চাহিদা মতো স্কুলে মাদুর, ওয়েল বা মোমপেন্সিল, পেন্সিল, ইরেজার, পেন্সিল কাটার, সাদা কাগজ, টেনিস বল, ছোট ফুটবল, প্লাস্টিক বর্ণ, মডেল ব্যাঞ্জন বর্ণ, প্লাস্টিক জীবজন্তু, পশু-পাখির মডেল, স্কিপিং দড়ি, লুডু, রেজিষ্টার খাতা, মনিষীদের ক্লাস্টার ছবিসহ উপকরণ ক্রয়ে সরকারীভাবে স্কুলপ্রতি ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পাবনার ৬টি উপজেলায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ প্রকল্পে এক কোটি ১৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে পাবনা সদর উপজেলার ১৮৪টি সরকারী স্কুলে ২৭ লাখ ৬০ হাজার, সুজানগর উপজেলার ১শ’ ৩৮টি স্কুলে ২০ লাখ ৭০ হাজার, বেড়া উপজেলার একশ‘ ১০টি স্কুলে ১৬ লাখ ৫০ হাজার, সাঁথিয়া উপজেলার একশ’ ৭১টি স্কুলে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার, ভাঙ্গুড়া উপজেলার ৯৭টি স্কুলে ১৪ লাখ ৫৫ হাজার, ঈশ্বরদী উপজেলার ৯৫টি স্কুলে ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পের নিয়মে প্রধান শিক্ষক সিøপ কর্মসূচীর উপকরণ ক্রয় কমিটির মাধ্যমে কিনে থানা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে বিল ভাউচার দাখিল করবেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবরক্ষণ অফিসে বিল ভাউচার জমা দিয়ে উপজেলার সকল স্কুলের টাকা তার ব্যাংক হিসাবে জমা করে প্রতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যুগ্ম হিসাবে ১৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করবেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চেকের টাকা তোলার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে চেকপ্রতি ৩/৪ হাজার টাকা, হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঁচশ টাকা কমিশন দিতে হয়। বাকী টাকা কোন কোন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নামমাত্র উপকরণ কিনে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা প্রধান শিক্ষক সমুদয় টাকাই পকেটস্থ করেছেন। এ টাকা আতœসাত নিয়ে সাধারণ শিক্ষকদের সাথে প্রধান শিক্ষকের তিক্ততা সৃষ্টি হওয়ায় স্কুলে শিক্ষাদান ব্যাহত হচ্ছে। সিøপ কর্মসূচী উপকরণ ক্রয়ে সরকারী বিধান শুধু কাগজ-কলমেই রয়েছে। এ প্রকল্পে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে ক্রয় কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক সদস্য সচিব, শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির সভাপতি, দুই জন সাধারণ শিক্ষক সমন্বয়ে ক্রয় কমিটি থাকার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ স্কুলে এ ক্রয় কমিটি কার্যকর নেই। সাধারণ শিক্ষকরা কেউ জানে না তারা এ কমিটির সদস্য কিনা। রেজিষ্টার খাতায় ক্রয়সংক্রান্ত খরচ লেখার নিয়ম থাকলেও সাধারণ শিক্ষকরা জানেন না কি খরচ লেখা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। স্কুলভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের সরকারী সিদ্ধান্তও বাস্তবে কার্যকর নেই। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের এ মহৎ প্রচেষ্টা সংশ্লিষ্টদের অসততার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে সাধারণ শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা আরও জানান, সাধারণ শিক্ষক উপকরণ ক্রয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কোপানলে পড়তে হচ্ছে। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের স্কুলে তদারকির নিয়ম থাকলেও তা কেউ করছেন না। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানিয়েছেন সিøপ কর্মসূচীর টাকা আতœসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×