ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নারী কর্মীর নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৩১ মে ২০১৫

নারী কর্মীর নিরাপত্তা

সামাজিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে নারী কর্মী তথা নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি জোরেশোরে উচ্চারিত হয়ে থাকে। সম্প্রতি নারীর ওপর নানাবিধ হয়রানির ঘটনা ঘটছে। বিপুল জনসমাগমের মধ্যেও নারী হেনস্থা হয়েছেন। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে ব্যাংকের নারীকর্মীদের কর্মঘণ্টা বিষয়ে নতুন নির্দেশনা এসেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- ‘সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ব্যাংকিং সময়সূচীর পরে কার্যদিবস শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশেষ করে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাংকে অবস্থানের জন্য বাধ্য করা হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা এসেছে যে বিশেষ প্রয়োজনে যদি কোন নারী কর্মীকে ব্যাংকিং সময়সূচীর পরেও ব্যাংকে অবস্থান করতে হয় তবে তাদের উপযুক্ত নিরাপত্তা ও পারিশ্রমিক প্রদান করতে হবে। প্রতিটি কার্যালয়েরই নিজ নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মীদের কর্মসূচী, কর্মপদ্ধতি ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা থাকে। সেটিই স্বাভাবিক। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটাই এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা শেষেও কর্মীকে কাজে নিয়োজিত রাখা হয়ে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চাকরি রক্ষার স্বার্থে এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্যের কথা শোনা যায় না। অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য বাড়তি পারিশ্রমিক প্রদান করাই রীতিসিদ্ধ। কিন্তু কটি প্রতিষ্ঠানই বা এই বিধি পালন করে থাকে? কর্তৃপক্ষ ও কর্মী- উভয়পক্ষকে আস্থাশীলতা ও সমঝোতার মধ্য দিয়েই কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে হয়। ব্যাংকিং সেক্টরে নারী কর্মীদের কর্মঘণ্টা সম্পর্কে যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে তার হয়ত কিছু যৌক্তিকতা রয়েছে। দেশে সরকারী-বেসরকারী সব ব্যাংকেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী কর্মী নিয়োজিত। সন্ধ্যা ৬টার পর অর্থাৎ দিনের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা শেষে কর্মস্থল ত্যাগের নিয়মটি বাধ্যতামূলক হওয়ায় সেটি নারীর জন্য উপকারী হতে পারে। এটি মনে রাখা দরকার যে, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ঘর-গেরস্থালি ও সন্তান প্রতিপালন এবং তাদের শিক্ষার দেখভালের দায়িত্বের বড় অংশই নারীর ওপর ন্যস্ত। এসব ক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণ বা সহযোগিতা কম। একজন কর্মজীবী নারীকে অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরে অফিসকে সময় দিতে না হলে সেটা তার সংসারের জন্য কল্যাণকর হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। তবে এর অন্য পিঠেও কথা আছে যা পুরোপুরি উপেক্ষিত হতে পারে না। সেটি হলো আত্মমর্যাদাবোধ যাদের প্রখর, যারা যথেষ্ট সংবেদনশীল সেইসব নারী কর্মী সন্ধ্যা ৬টায় বাধ্যতামূলকভাবে ছুটি প্রাপ্তির বিষয়টিকে হয়তো বৈষম্যমূলক জ্ঞান করতে পারেন। একজন পুরুষ কর্মীর অধিকারের তুলনায় নিজ অধিকারের জায়গাটিকে সীমিত ভাবতে পারেন। অবশ্য নারীর জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জও হয়ে উঠতে পারে। অফিসের নির্ধারিত সময়ের ভেতর সম্পাদিত নারীর সেবা প্রদান ও দায়িত্ব পালন যথোপযুক্ত হলে তা পুরুষকর্মীর অতিরিক্ত সময় অফিস করার সমানুপাতিক বলে গণ্য হতে পারে। পক্ষান্তরে পুরুষ কর্মীরও এ কথা বলার সুযোগ থেকে যাচ্ছে যে, একই অফিসে এক জাতীয় কাজ করে অতিরিক্ত সময়ের জন্য একজনের বাড়তি পারিশ্রমিক প্রাপ্য হলে কেন তার জন্য ভিন্ন নিয়ম হবে। তবে নারী কর্মীর নিরাপত্তার দিকটিই প্রধান বিবেচ্য। এমন সমাজ নির্মাণই আমাদের লক্ষ্য যেখানে নারী নিজেকে বিপন্ন ভাববে না। রাতের বেলা তার চলাচল নির্বিঘœ হবে। তাহলে কোন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষেরও এমন কড়াকড়ি অফিস নির্দেশ জারির প্রয়োজন পড়বে না। অবশ্য নারী কর্মীর অফিস সময় সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাটি দীর্ঘস্থায়ী হোক- এমনটা কারও কাম্য হতে পারে না।
×