ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সমাপ্তির লক্ষ্য ৩২৪ প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৩১ মে ২০১৫

সমাপ্তির লক্ষ্য ৩২৪ প্রকল্প

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে ২০১৫-১৬ নতুন অর্থবছর। এ অর্থবছরে ৩২৪টি প্রকল্প সমাপ্ত করতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ২৮১টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৪১টি এবং জাপানী ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলের (জেডিসিএফ) ২টি প্রকল্প রয়েছে। এ জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বিশেষ বরাদ্দও দেয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এর আগে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিতে ৩২৪টি প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ২৮৫টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৩০টি এবং জেডিসিএফ প্রকল্প ছিল ৯টি। লক্ষ্য মাত্রা অনুযায়ী বাস্তবায়ন হচ্ছে ১১৫টি প্রকল্প। বাকি ২০৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অন্যদিকে গত অর্থবছরের (২০১৩-১৪) এডিপিতে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩০৫টি প্রকল্প। প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে, উন্নয়ন কর্মসূচী ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, ভূমি সংকট, অযোগ্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ ও ঘন ঘন বদলি, উন্নয়ন সহযোগীদের আমলাতান্ত্রিকতা, সঠিক সময়ে অর্থ ছাড় না হওয়া, বরাদ্দের অতিরিক্ত খরচ হওয়া, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়া, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দুর্বলতা, কারিগরি দক্ষতার অভাব, আইএমইডি ক্ষমতা না থাকা, রাজনৈতিক কারণে প্রকল্প হাতে নেয়ার কারণে দেশে সরকারী বিনিয়োগের সুফল আসছে না বলে মনে করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য নতুন এডিপি তৈরিতে বিশেষ কৌশল অবলম্ব করেছে পরিকল্পনা কমিশন। শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতেই এ শতর্কতা বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধীরগতির প্রকল্পে বরাদ্দ করা অর্থ কেটে নেয়া। অন্যদিকে যেসব প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি দ্রুত সেগুলোতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা। আগামী অর্থবছর থেকেই এ নয়া কৌশল বাস্তবায়ন করবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। নতুন এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট ও সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (নিসনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য নিরসন ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। বাংলাদেশের উন্নয়ন ‘রূপকল্প ২০২১’-এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) এবং মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এসব পরিকল্পনার উন্নয়ন কৌশলের আলোকে গৃহীত অর্থনৈতিক খাতভিত্তিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)। সরকারের গৃহীত এসব পরিকল্পনা ও বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে আগামী অর্থবছরের জন্য নতুন এডিপি তৈরি করা হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্তিযোগ্য প্রকল্প এবং বরাদ্দের ক্ষেত্রে জারিকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের নতুন এডিপিতে প্রকল্পভিত্তিক অর্থবরাদ্দের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, চলতি প্রকল্পসমূহের অনুমোদিত প্রকল্প দলিলে উল্লেখিত প্রাক্কলিত ব্যয় এবং এ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতির ভিত্তিতে সম্ভাব্য যৌক্তিক ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে নতুন এডিপিতে ব্যয়ের প্রস্তাব করতে হবে। প্রকল্প সাহায্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী দেশ বা সংস্থার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির মেয়াদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে প্রাপ্য বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের জন্য পরিপূরক স্থানীয় মুদ্রা (ম্যাচিং ফান্ড) বরাদ্দের দাবি অগ্রাধিকার পাবে। এলাকা বা অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে এডিপিতে গৃহীত প্রকল্পসমূহের বরাদ্দ প্রদানও নিশ্চিত করতে হবে। আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিতে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরের এডিপি বা এডিপিভুক্ত স্থগিত বা শূন্য বরাদ্দ দেয়া অথবা বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত প্রকল্পসমূহ আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে না। তবে বিশেষ যৌক্তিকতা (যদি থাকে) সাপেক্ষে নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য তা প্রস্তাব করা যাবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে একান্ত অপরিহার্য এবং উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত না হলে সরকারী অর্থায়নে সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পরিহার করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের আগামী অর্থবছরে সমাপ্য প্রকল্প সংখ্যা, এডিপি বাস্তবায়নের দক্ষতা ও সংশ্লিষ্ট সেক্টরের প্রবেশাধিকারের সঙ্গে নতুন প্রকল্প সংখ্যা সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। ক্ষুদ্র প্রকল্প পৃথকভাবে প্রণয়ন না করে একটি গুচ্ছ প্রকল্পের আওতায় এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
×