ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হৈ চৈ উত্তেজনার মধ্যেই প্রেসক্লাবের দায়িত্ব নিল নতুন কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৩১ মে ২০১৫

হৈ চৈ উত্তেজনার মধ্যেই প্রেসক্লাবের দায়িত্ব নিল নতুন কমিটি

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে সমঝোতার মাধ্যমে গঠিত নতুন কমিটি। এ কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাকক্ষে ১৭ সদস্যের নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে। বৈঠক শেষে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, আমরা ক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছি, এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই। আজ রবিবার সকাল এগারোটা পর্যন্ত বৈঠকটি মুলতবি করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াত সমর্থক সদস্যদের কার্যত ‘হোয়াইটওয়াশ’ করে গঠিত সমঝোতার নতুন কমিটি গঠনের পর শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কিছুটা উত্তেজনা ছিল। ১৭ সদস্যের সমঝোতার কমিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ফোরাম থেকে ১০ জন এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ফোরাম থেকে সাতজন সদস্য স্থান পায়। কিন্তু কমিটিতে স্থান পাওয়া বিএনপি-জামায়াত ফোরামের এই সাতজনই বিএনপি সমর্থক বলে প্রেসক্লাবে অধিক পরিচিত। শনিবার জামায়াত ও বিএনপি সমর্থক কিছু সদস্য সঙ্গে নিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল হোসেন তাঁর পূর্বের কক্ষের সামনে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে বাক-বিত-ার ঘটনাও ঘটে। তবে সমঝোতার নতুন কমিটির সমর্থক সদস্যদের প্রতিবাদের মুখে তারা বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। অন্যদিকে, সমঝোতার নতুন কমিটি গঠনের পর কার্যত জামায়াত ও বিএনপি সমর্থক সদস্যদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ তুঙ্গে উঠে। জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে ফোরামের একাংশের বৈঠক থেকে সমঝোতার কমিটিতে যোগ দেয়া তাদেরই সমর্থক ৮ জ্যেষ্ঠ সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন- বিএনপি-জামায়াত ফোরামের জ্যেষ্ঠ সদস্য আমানুল্লাহ কবীর, খন্দকার মনিরুল আলম, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, গোলাম মহিউদ্দিন খান, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম কাগজী, সরদার ফরিদ ও ইলিয়াস খান। বহিষ্কৃতদের মধ্যে আমানুল্লাহ কবীর অবিভক্ত বিএফইউজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। আর খন্দকার মনিরুল আলম জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। উল্লেখ্য, বহিষ্কৃতদের মধ্যে ৭ জনই সমঝোতার নতুন কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন আর বাকি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ডিইউজের সাবেক সভাপতি ছিলেন। ফোরামের বৈঠক শেষে শওকত মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, এরা (বহিষ্কৃতরা) অতীতেও একাধিকবার ফোরামের ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল। এবারও তারা একই কাজ করলেন। সংগঠনের ঐক্য বিনষ্ট ও হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য তারা এই অপকর্মে জড়িত হয়েছেন। তবে ফোরামের বৈঠকে বহিষ্কারের এমন সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এলাহী নেওয়াজ খান সাজু বলেন, ফোরামের কোন গঠনতন্ত্র নেই, যার ভিত্তিতে কাউকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার কেউ রাখে। সাংবাদিক সমাজের নেতৃত্বদাতা আমানুল্লাহ কবীর ও খন্দকার মনিরুল আলমের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, এরাই (আমানুল্লাহ ও মনিরুল আলম) এই ফোরামের ভিত্তির নায়ক। এদের মতো জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে বহিষ্কারের হঠকারী সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছেন, তারা এই ফোরামে কখন, কিভাবে এসেছেন, আমাদের অধিকাংশেরই তা জানা আছে। তাই যারা এই হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা অতীতে বহুবার ডিগবাজি দিয়েছেন। এদিকে, শনিবার সকালে নতুন সভাপতি শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সমঝোতার নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। কিছু সময় পর প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ফোরাম পৃথক বৈঠকে বসে। দু’পক্ষের এ বৈঠকের সময় কিছু ক্লাবের কিছু অফিসকর্মী সাধারণ সম্পাদকের বদ্ধ কক্ষের তালা ভাঙ্গার চেষ্টা করলে দু’পক্ষের মধ্যে বাক-বিত-া হয়। হৈ-চৈ শুনে নতুন কমিটির সভাপতি শফিকুর রহমান বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে চাবিওয়ালাদের চলে যেতে বললে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ঠিক ওই সময় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ তাদের ফোরামের বৈঠক থেকে বেরিয়ে সেখানে এলে নতুন করে উত্তেজনা দেখা যায়। সৈয়দ আবদাল উচ্চকণ্ঠে বলতে থাকেন-আমি সাধারণ সম্পাদক। আমার রুম কে খুলতে বলেছে? এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থক ফোরামের সদস্যরা সমস্বরে প্রতিবাদ জানিয়ে সেøাগান দিতে থাকে। ‘রাজাকার-জামায়াতের আস্তানা ভেঙ্গে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, জামায়াত-শিবির-রাজাকার, এই মুহূর্তে ক্লাব ছাড়’-ইত্যাদি সেøাগান দিতে থাকে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। এক পর্যায়ে শফিকুর রহমান নিজ ফোরামের সদস্যদের নিচে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানালে পরিস্থিতি শান্ত হয়। নতুন কমিটির সদস্য বিএনপি সমর্থক সাংবাদিক নেতা আমানুল্লাহ কবীরও পরিস্থিতি শান্ত করতে ভূমিকা রাখেন। আওয়ামী লীগ ফোরামের সমর্থকরা বহিরাগত শিবির-জামায়াত ক্যাডারদের বের করার জোরালো দাবি জানালে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বহিরাগত বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা আস্তে আস্তে ক্লাব চত্বর ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। আজ রবিবার ফের নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি বৈঠকে বসে ক্লাবের পরবর্তী করণীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। উল্লেখ্য, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পরপর প্রেসক্লাবে নির্বাচন হওয়ার কথা। গত ৩১ ডিসেম্বর কামাল উদ্দিন সবুজ ও সৈয়দ আবদাল নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। তফসিল হলেও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ‘পরিবেশ নেই’ বলে দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানালে ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে বিশেষ সাধারণ সভায় উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে একটি সমঝোতার কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই বৈঠকে সভাপতি করা হয় আওয়ামী লীগ সমর্থক ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শফিকুর রহমানকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় বিএনপি সমর্থক কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে। নতুন এ কমিটি শনিবার প্রেসক্লাব ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
×